গর্ভ থেকে অর্ধেক বেরিয়ে শিশু, মায়ের ডাকে সাড়া দিলেন না কেউ
র্ভস্থ সন্তান প্রায় অর্ধেক বেরিয়ে এসেছে, এমন অবস্থায় শুক্রবার রাতে প্রায় দু’ঘণ্টা হুগলির শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালের ‘লেবার-রুম’-এর সামনে কাটাতে হল এক প্রসূতিকে। তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসার জন্য বারবার আবেদন করেও কারও সাড়া পাননি। দীর্ঘ ক্ষণ পরে শুধু নার্সদের থেকে ধৈর্য ধরার ‘পরামর্শ’ পান। শেষমেশ শনিবার ভোরে তিনি নার্সদের ‘সহযোগিতা’ মেলে। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যায়নি। হাসপাতালের এক চিকিৎসক ও তিন জন নার্সের বিরুদ্ধে থানায় চিকিৎসায় গাফিলতির নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেছেন প্রসূতির স্বামী।
চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন হাসপাতালের এক কর্তা। তবে, এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে বিশেষ মুখ খুলতে চাননি সুপার জয়ন্ত সান্যাল। তিনি বলেন, “লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। একটি কমিটি গড়ে ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে।”
শুক্রবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ওই হাসপাতালে ভর্তি হন রিষড়ার বাসিন্দা সুনীতা সাউ। রাত সওয়া ১টা নাগাদ স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ স্বপনকুমার দাস তাঁকে পরীক্ষা করেন। ঘণ্টাখানেক পরে সুনীতার ব্যথা বাড়ে। তাঁর অভিযোগ, “সেই সময় ধারে-কাছে কোনও নার্স ছিলেন না। আমি নিজেই নার্সদের ডাকতে যাই। কেউ আসেননি। কিছু ক্ষণের মধ্যেই শিশুটির মাথা গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে।”
সুনীতা সাউ।
সুনীতার ওই অবস্থা দেখে অন্য রোগিণীরাও চেঁচিয়ে নার্সদের ডাকতে থাকেন। অভিযোগ, ‘নার্সরা এসে চিকিৎসার বদলে সুনীতাকে ধৈর্য ধরার ‘পরামর্শ’ দেন। ওই অবস্থাতেই সুনীতার সারা রাত কেটে যায়। শনিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ‘লেবার-রুম’-এর বাইরেই নার্সরা তাঁর প্রসব করান। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, প্রসবের পরেও শিশুটি ঘণ্টা খানেক বেঁচে ছিল। কিন্তু সুনীতার দাবি, “পরিচর্যা না পেয়ে প্রসবের আগেই মৃত্যু হয় আমার সন্তানের। এটি আমার দ্বিতীয় সন্তান। কত বার বললাম, সারা রাত ধরে আমার একটা কথাও ওঁরা শুনলেন না।”
এই ঘটনার জেরে শনিবার সকালে হাসপাতালে উত্তেজনা ছড়ায়। দোষী চিকিৎসক এবং নার্সদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে সুপারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকেরা। এই মর্মে হাসপাতালে পোস্টারও টাঙান তাঁরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রীরামপুর থানা থেকে পুলিশ বাহিনী আaসে। শিশুটির দেহ ময়না-তদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক স্বপন দাস, নার্স নীতা কুণ্ডু, প্রতিমা পাল, অঞ্জলি দে এবং অঞ্জনা দাসের বিরুদ্ধে থানায় নির্দিষ্ট অভিযোগ করেন সুনীতার স্বামী বিশ্বনাথ সাউ। সেই প্রসঙ্গে হাসপাতালের ডেপুটি নার্সিং সুপার কল্পনা মণ্ডল বলেন, “ওই রাতে কর্তব্যরত নার্সরা জানান, রোগিণী চিকিৎসায় সাহায্য করছিলেন না। গাফিলতির অভিযোগ সত্য নয়।”
শ্রীরামপুর হাসপাতালে সুপারের ঘরে বিক্ষোভ।
এসডিপিও (শ্রীরামপুর) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “পুলিশ এফআইআর পেয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আমরা তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। তাদের রিপোর্ট পেলেই পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।” শ্রীরামপুরের চিকিৎসক-বিধায়ক তথা ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি সুদীপ্ত রায় বলেন, “আমি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক এবং সুপারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমার মনে হয়েছে, চিকিৎসক এবং নার্সরা আর একটু সতর্ক হলেই এই ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনা এড়ানো যেত। দোষীদের শাস্তি পাওয়া উচিত।”

শনিবার প্রকাশ পালের তোলা ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.