মহাকরণই যাবে প্রতি জেলায়, ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
বার থেকে ‘মহাকরণ’ তিন মাস অন্তর জেলায় জেলায় গিয়ে সেখানকার রিপোর্ট নেবে বলে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উন্নয়নের কাজে গতি আনতে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রশাসনের উপর থেকে নিচুতলা পর্যন্ত সার্বিক সমন্বয় গড়ে কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। তার সূত্র ধরেই এসেছে ‘মহাকরণের’ জেলায় জেলায় এসে রিপোর্ট নেওয়ার প্রসঙ্গ।
শুধু জেলায় এসে রিপোর্ট নেওয়াই নয়, উন্নয়নের পথে অন্যতম প্রধান দুই বাধা দুর্নীতি এবং কাজে গাফিলতি রুখতেও মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বার্তা দেন। বিশেষ করে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কোনও গাফিলতি দেখলে যে ‘কাউকে ছাড়া হবে না’, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে সকলকে ‘সাবধান’ করে সে কথা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন মমতা।
এ দিন এ বারের জেলা সফর শেষ করার মুখে বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী সমন্বয়ের প্রসঙ্গ তোলেন। বলেন, “এত দিন সব দফতর যে যার মতো আলাদা কাজ করছিল বলেই সমন্বয়ে সমস্যা হচ্ছিল। আমরা জেলাশাসক থেকে বিডিও পর্যন্ত যুক্ত করে দিলাম।”
এই ‘আমরা’র মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন রাজ্যের আট জন এবং কেন্দ্রের তিন জন মন্ত্রী, মুখ্যসচিব সমর ঘোষ এবং ১৮টি দফতরের সচিব। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “পুরো মহাকরণ এখানে চলে এসেছে।” কেন এসেছে? মমতার মতে, “জেলার রিপোর্ট জেলায় এসে নেওয়াটাই ঠিক।” কাজ কতটা এগোল, প্রতি তিন মাস অন্তর তাঁরা জেলায় গিয়ে খবর নেবেন বলেও তিনি এর পরে জানিয়ে দেন।
রাজ্যের এত দিনের কর্মসংস্কৃতিই যে তিনি পাল্টে দিতে চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে এ দিন সেটাই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। এ ব্যাপারে রাজ্যের যে বিশেষ সুনাম নেই, তা সর্বজনবিদিত। তাই বারবার পুলিশ-প্রশাসনের উপর থেকে নীচের স্তর পর্যন্ত ‘সমন্বয়’ গড়ে তোলার মাধ্যমে ‘কাজের গতি ত্বরান্বিত’ করার উপরে জোর দিয়েছেন তিনি। শেষে বলেছেন, “আমাদের চ্যালেঞ্জ, কর্মসংস্কৃতিতে বাংলা অন্য অনেকের সঙ্গে পাল্লা দেবে।” জেলা আধিকারিকদের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, কাজ না হওয়ার ব্যাপারে কোনও অজুহাত তিনি শুনতে রাজি নন। যদি কোথাও সত্যিই কর্মীর অভাব থাকে, তা হলে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করতে হবে।
শুক্রবারও পুরুলিয়ায় প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পারস্পরিক সমন্বয় গড়ে তোলার উপরে বাড়তি জোর দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন একই ধাঁচে বীরভূমে বৈঠকের শুরুতেই জেলার ১৯ জন বিডিও-সহ জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আপনাদের জন্য পুরো মহাকরণটাকেই জেলায় তুলে নিয়ে এসেছি। আপনারা যা যা সমস্যা রয়েছে বলুন। সংশ্লিষ্ট সচিবরা সব লিখে নেবেন।” সব সমস্যা শোনার পরে সচিবকে ফের তা পড়ে শোনাতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী, যাতে কোনও সমস্যার কথাই বাদ না চলে যায়। একটি বিষয় বাদ গিয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এক বিডিও। সঙ্গে সঙ্গে সেটি লিখে নেন এক সচিব।
জেলার আধিকারিকদের মুখ্যমন্ত্রী এ দিন নির্দেশ দেন, ব্লক স্তরের যাবতীয় উন্নয়নের কাজেই বিডিওদের যুক্ত করতে হবে। প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় তৈরি করতে নিয়মিত জেলাশাসকের সঙ্গে পুলিশ সুপারের এবং ব্লকস্তরে বিডিও-র সঙ্গে এসডিও-দের যোগাযোগ বাড়ানোর উপরেও বাড়তি গুরুত্ব দেন মুখ্যমন্ত্রী।
উন্নয়নের কাজকে বাস্তবায়িত করার পথে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়ায় দুর্নীতি। জেলা আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে সেই বাধা সরানোর চেষ্টাও শুরু করে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সড়ক তৈরি করা নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে মমতা বিডিও-দের বলেন, “উন্নয়ন করতে গিয়ে কাউকে ‘কাট মানি’ দিতে হবে না। উন্নতমানের রাস্তা তৈরি করুন। যাতে অল্প দিনের মধ্যেই তা ভেঙে না যায়, তার উপরে জোর দিন।”
কাজে গাফিলতিও যে তিনি বরদাস্ত করবেন না, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিছু দিন আগে বর্ধমানে শিশু-মৃত্যুর ঘটনার বিষয়ে এ দিন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি বলেন, “মহারাষ্ট্রে বছরে ৪০ হাজার শিশু মারা যায়। এ রাজ্যে তা হতে দেব না। স্বাস্থ্যকর্মী-ডাক্তার, সকলে সাবধান। আমি কিন্তু কাউকে ছাড়ব না। যে কোনও সময়ে যে কোনও হাসপাতালে যেতে পারি। যদি খারাপ কিছু দেখি, আপনারা কিন্তু বিপদে পড়বেন।”
বর্ধমান এবং বীরভূম, এই দুই জেলার বৈঠকেই এ দিন মমতার সব চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন, ব্লক স্তরের উন্নয়নের উপরে। বলেছেন, “ব্লক ভাল হলে জেলা সফল হয়। জেলা সফল হলে তবেই রাজ্য সফল হয়।” আর এই কাজে তিনি বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছেন বিডিও-দেরও। তাই বীরভূমে কৃষকদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে এক সময় মুখ্যমন্ত্রী বিডিও-দের উদ্দেশে বলেন, “ভাই দেখবেন, কৃষকেরা যাতে ঠিকঠাক ধানের দাম পায়।” বর্ধমানকে ‘শস্যগোলা’ বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সার নিয়ে প্রচুর অভিযোগ আছে। সারের কালোবাজারি রুখতে ও সার বিলির ক্ষেত্রে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা জানতে চান আধিকারিকদের কাছে।
বোলপুরে সাংবাদিক সম্মেলনে এক গুচ্ছ প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তার মধ্যে সিউড়িতে ২৬ একর জায়গা নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ তৈরি ভাবনা অন্যতম। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য, কিসান কার্ড, সংখ্যালঘুদের সমস্যা-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মহকরণকে জেলায় জেলায় নামিয়ে আনব। শান্তিনিকেতনকে সাজিয়ে তোলা হবে। ব্লকে ব্লকে মার্কেটিং কমপ্লেক্স গড়ে তোলা হবে।” ফসলের ক্ষতি হলে যাতে টাকা পাওয়া যায় সে জন্য তিনি শস্যবিমা করতে চাষিদের আবেদন জানান। তিনি জানান, স্বরোজগার যোজনায় ১৭টি গ্রামে কাজ করা হবে। একটি পলিটেকনিক কলেজ তৈরি করা হবে। নতুন করে ২৫টি প্রাথমিক ও ১৫টি উচ্চ প্রাথমিক স্কুল তৈরি করা হবে। ২২টি মাধ্যমিক স্কুলকে উচ্চমাধ্যমিকে উন্নীত করা হবে। ১০০০টি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র চালু করা হবে। ২ লক্ষ ছেলেমেয়েকে একশো দিনের কাজ দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “৩০০ ভূমিহীন ক্ষেতমজুরের পাট্টা তৈরি হয়ে আছে। আরও পাট্টা তৈরি করতে বলেছি। সব ঠিক হয়ে গেলে আমি এসে বিলি করব।” বীরভূমে সড়ক তৈরির পাশাপাশি গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজকে ত্বরান্বিত করার উপরেও জোর দেন তিনি। বিডিওরা জানান, অনেক ক্ষেত্রেই গ্রামে খুঁটি এসে গেলেও বিদ্যুৎ আসেনি। মমতা বিদ্যুৎসচিবকে ওই সব গ্রামের বিদ্যুদয়নের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.