তেলের ট্যাঙ্কার পিষে দিল ছয় মহিলাকে
বেড়াতে গিয়ে ফেরা হল না ছ’জনের। ট্যুরিস্ট বাস থেকে নেমে রাস্তার পাশে ধান জমিতে দাঁড়িয়েছিলেন কয়েকজন মহিলা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তেলের একটি ট্যাঙ্কার রাস্তা থেকে নেমে ধানজমিতে ছয় মহিলাকে পিষে দেয়। ছ’জনেরই মৃত্যু হয়। জখম হন দুই মহিলা। শনিবার খুব ভোরে দুঘর্টনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া সদর থানার ভেদুয়ায়, বাঁকুড়া-দুর্গাপুর ৯ নম্বর রাজ্য সড়কে। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির বিভিন্ন এলাকার ৭২ জন বাসিন্দাকে নিয়ে বাসটি শান্তিনিকেতন, তারাপীঠ, মুর্শিদাবাদ ও মায়াপুরে বেড়াতে যাচ্ছিল।
স্ত্রী-মেয়েকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বৃন্দাবন মাইতি। ছবি: সুব্রত গুহ।
শনিবার রাতে কাঁথি থেকে রওনা দেয়। এ দিন ভোরে দুর্গাপুরের পথে ভেদুয়ায় বাসটি থামানো হয়। ট্যুরিস্ট এজেন্ট বাবলু কামিল্যা বলেন, “কয়েক জন মহিলা রাস্তা থেকে খানিক দূরে ধান জমিতে প্রাতঃকৃত্য করতে নামেন। হঠাৎ দুর্গাপুরমুখী একটি তেলের ট্যাঙ্কার রাস্তা ছেড়ে মাঠে নেমে তাঁদের পিষে দেয়।” তাঁরা জানান, ঘটনাস্থলেই মধুমিতাদেবী ও তাঁর মা নীলিমাদেবীর মৃত্যু হয়। আহত ছ’জনকে সেই বাসেই তুলে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখানে আরও চার জনের মৃত্যু হয়। ওই বাসের যাত্রী মানিক বারি ও দিলীপ গরাই বলেন, “আমরা রাস্তার অন্য পাশে ছিলাম। খানিক দূরে রাস্তায় বাঁক ছিল। দ্রুত বেগে ট্যাঙ্কারটি এসে রাস্তার ওই পাশে নেমে গেল। মহিলাদের আর্তনাদ শুনেই বুঝে গিয়েছিলাম সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে।”
পুলিশ জানিয়েছে, মৃতেরা হলেন মধুমিতা রায়চৌধুরী (৩৫) ও তাঁর মা নীলিমা মাইতি (৫৫), গীতারানি মিশ্র (৬৫), অনুভা বেরা (৫২), জাহ্নবী সাউ (৬৫) ও মুক্তি মান্না (৫৮)। মধুমিতা ও মুক্তিদেবী ভূপতিনগর থানার দেবিচকের বাসিন্দা। নীলিমাদেবী দক্ষিণ কানাইদিঘি, অনুভাদেবী উত্তর কানাইদিঘি, জাহ্নবীদেবী তেলিপুকুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনটি গ্রামই মারিশদা থানা এলাকার। গীতারানিদেবীর বাড়ি কাঁথি থানার ভণ্ডুবসান গ্রামে।
ঘাতক ট্যাঙ্কার। ছবিটি তুলেছেন অভিজিৎ সিংহ।
আহত জয়ন্তী পাহাড়ি মারিশদা ও বীনা পাণ্ডা রামনগরের বাসিন্দা। বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করা হয়েছিল। বিকেলে পরিজনেরা এসে তাঁদের নিয়ে যান। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “ট্যাঙ্কারটি আটক করা হয়েছে। চালক পালিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশকে খবর দেওয়া হয়েছে।”
দুঘর্টনার খবর আসার পর কান্নার রোল পড়েছে মারিশদার দক্ষিণ কানাইদিঘি গ্রামে। নীলিমাদেবীর মেয়ে সুজাতা জানান, তাঁর দিদি মধুমিতা পড়শি মুক্তিদেবীকে নিয়ে বৃহস্পতিবার কানাইদিঘিতে বাপের বাড়ি এসেছিলেন। নীলিমাদেবীর সঙ্গে শনিবার তাঁরা তিনজনে রওনা দেন। বুধবার ফেরার কথা ছিল। মধুমিতার শ্বশুরবাড়িতে এক মেয়ে ও মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। সুজাতা বলেন, “বেড়াতে গিয়ে এমন ভয়াবহ কাণ্ড ঘটবে ভাবতে পারিনি।” স্বামী ব্যোমকেশ বেরার সঙ্গে ছিলেন অনুভা বেরা। তাঁদের ছেলে প্রদীপ বলেন, “এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে বিশ্বাস হচ্ছে না!”
বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের মর্গে দেহগুলির ময়নাতদন্ত করার পরে সন্ধ্যায় তাঁদের আত্মীয়েরা দেহগুলি নিয়ে কাঁথির উদ্দেশে রওনা দেন। বেড়ানো বাতিল করে বাকি পর্যটকেরাও কাঁথি ফিরে যান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.