রথের ‘সাফল্য’ ধরে রাখার পথ খুঁজছে বিজেপি
লালকৃষ্ণ আডবাণীর রথযাত্রা এখন শেষের পথে। বাকি আছে আর আট দিন। গত ৩২ দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে এই রথযাত্রা যে রাজ্যে রাজ্যে দলের দিশাহীন সংগঠনকে পুনরুজ্জীবিত করেছে, সেটা এখন অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, রবিশঙ্করের মতো শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করছেন। জাতীয় নেতৃত্বের ক্ষমতার লড়াই রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের মধ্যে যে হতাশা এনেছে, এই রথযাত্রা তা থেকেও তাদের অনেকটা মুক্ত করতে পেরেছে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনের আরও প্রায় আড়াই বছর বাকি, আর সেটাই সমস্যা। তাঁদের বক্তব্য, কংগ্রেস বিরোধিতার এই হাওয়াকে যদি ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে হয়, তার জন্য দরকার দলের নিরন্তর কর্মসূচি। আর সেটা বাস্তবায়িত করাই এখন দলের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। লোকসভার আসন্ন অধিবেশন থেকেই সেই কাজটা শুরু করে দিতে চান তাঁরা।
সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলিদের বক্তব্য, দুর্নীতি এবং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মনমোহন সিংহের সরকারের বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজে একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। কিন্তু এ রকম একটা জনপ্রিয় বিষয়কে ধরে যদি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হয়, তবে তার জন্য দরকার হয় একটি রাজনৈতিক দল এবং কর্মসূচি। জেটলির কথায়, “এই রথযাত্রা আমাদের সেই কর্মসূচিটা দিয়েছে।” বিজেপি-র এক শীর্ষ নেতা বলেন, “দুর্নীতি প্রশ্নে ইউপিএ-র বিরুদ্ধে অণ্ণা হজারে যে রাজনৈতিক পরিসরটা দখল করে রেখেছিলেন, বিরোধী দল হিসেবে আমাদেরই সেই জায়গাটা নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমাদের ছত্রভঙ্গ দশার কারণেই তা হয়নি। আর প্রকৃতির নিয়মেই অণ্ণারা সেই শূন্যস্থান দখল করেছিলেন।” ওই নেতার বক্তব্য, এখন রথযাত্রার মাধ্যমে বিজেপি সেই পরিসর অনেকটা দখল করে নিলেও ২০ নভেম্বর রথযাত্রা শেষ হওয়ার পরে কী হবে?
এ সব মাথায় রেখেই সুষমা স্বরাজ, নিতিন গডকড়ী, অরুণ জেটলি প্রমুখ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন আডবাণী। আডবাণী বলেন, “২২ নভেম্বর সংসদের অধিবেশন শুরু হলেই লক্ষ্য হল বিদেশ থেকে কালো টাকা ফেরানোর বিষয়টি নিয়ে হইচই জুড়ে দেওয়া। টু-জি, কমনওয়েলথ দুর্নীতির বিষয়গুলিও তোলা।” মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ছাঁটাই প্রস্তাব আনার কথাও ভাবা হচ্ছে। যে হেতু আডবাণী নিজে লোকসভায় উপস্থিত থাকবেন, তাই তাঁর নেতৃত্বেই সুষমা ও জেটলি আপাতত এই সব কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
কিন্তু সংসদের বাইরে? সংসদের অধিবেশনের পরে কী হবে? অনেকগুলি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসছে। ২০১২ সালের গোড়াতেই পঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ড, মে মাসে উত্তরপ্রদেশ ও গোয়া, নভেম্বরে গুজরাত, ডিসেম্বরে হিমাচল প্রদেশ। পাশাপাশি ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন। এর সঙ্গেই আগামী বছরে দিল্লি ও মুম্বইয়ের পুরসভার নির্বাচন আছে, যা জাতীয় রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ সব বিষয়ও মাথায় রাখতে হচ্ছে বিজেপি-র শীর্ষ নেতৃত্বকে। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ভোট তুলনায় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেখানকার নির্বাচনী ফল আগামী দিনে জাতীয় রাজনীতির অভিমুখ ঠিক করতে অনেকটাই বড় ভূমিকা নেবে। গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে গেলেও সেখানে আডবাণীর রথযাত্রা অনেকটাই ‘প্রতীকী’ হয়েছে। বিহার থেকে যাত্রা শুরুর পরে উত্তরপ্রদেশের পূর্ব ভাগে তিনি কিছুটা গিয়েছিলেন। শেষ করবেন রাজ্যের পশ্চিম ভাগে। রাজ্যের বাকি অংশে যে হেতু রাজনাথ সিংহ ও কলরাজ মিশ্র আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পৃথক রথযাত্রা করছিলেন, তাই তিনি সে দিকে যাননি।
এ সবের পাশাপাশি নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যাও ভাবাচ্ছে দলের শীর্ষ নেতাদের। রথযাত্রা দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করলেও নেতাদের ক্ষমতার লড়াই অটুট! দলেরই অনেকে বলছেন, বিজেপি যদি লোকসভা নির্বাচনের আগে এক জনকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে দিতে পারত, তা হলে ইউপিএ-বিরোধিতার লড়াইটা তাঁদের পক্ষে অনেক সহজ হয়ে যেত। বিজেপি নেতাদের একাংশের বক্তব্য, পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে সঙ্ঘ পরিবার আডবাণীকে যে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করতে চাইছে না, তা খুবই স্পষ্ট। চাইলে তাঁরা রথযাত্রার সময়ই এই ঘোষণা করে দিতে পারতেন। আবার বিজেপি নেতারা আডবাণীকে বাদ দিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে এক জনকে প্রার্থী হিসেবে বাছাই করতেও পারছেন না। বিজেপি নেতারা পারছেন না বলে আরএসএস যে বিষয়টিতে নাক গলিয়ে ভোটের আগে এক জনের নাম ঘোষণা করে দেবে, সেটাও আবার তাদের পক্ষে কঠিন হচ্ছে। কারণ আনুষ্ঠানিক ভাবে আরএসএসের কখনওই বিজেপি-র বিষয়ে সরাসরি নাক গলানোর কথা নয়। ফলে দলেরই অনেকের মনে হচ্ছে, এ বার বোধহয় লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী বাছাই করা সম্ভব হবে না বিজেপি-র পক্ষে। একই সমস্যা কিন্তু রাজ্য স্তরেও হচ্ছে। রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজে বা দিল্লিতে বিজয় গোয়েলকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা নিয়ে প্রবল জনমত থাকলেও সে ব্যাপারে আরএসএস দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাপ দিচ্ছে না। কারণ প্রার্থীরা সঙ্ঘের পছন্দ নয়। আবার বিজেপি নেতারা নিজেরা এই সিদ্ধান্তটা রাজ্য স্তরেও নিতে পারছেন না।
অন্য দিকে, বিজেপি-র পালে যে হাওয়া এখন লেগেছে, লোকসভা ভোটের আগেই তা কেড়ে নিতে আসরে নামবে কংগ্রেসও। ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে আগামী আড়াই বছরে তারা দুর্নীতি বিরোধী একাধিক ব্যবস্থা নিতে পারে। তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের কাছে টানার কৌশল হিসেবে রাহুল গাঁধীকে দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে আনা হতে পারে। সব মিলিয়ে আগামী আড়াই বছরে পরিস্থিতি অনুকূলে আনার মরিয়া চেষ্টা যে কংগ্রেস করবে, তাতে সন্দেহ নেই।
৩ দিন রাজস্থান সফরের পরে আজ হরিয়ানায় পা রাখল আডবাণীর রথ। ৮ দিন পরে দিল্লিতে যাত্রা সমাপ্তির পরে তার রেশ ধরে রাখাই এখন বিজেপি নেতাদের মাথাব্যথা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.