এক সময়ে ভয় থেকে হাতির পুজো শুরু করেছিলেন। এখন হাতির সংরক্ষণ ও গাছ বাঁচানোর উদ্দেশ্যে এলাকার বাসিন্দাদের চিলাপাতা জঙ্গলে পুজো করছেন আলিপুরদুয়ারের সোনাপুরের বাসিন্দা সুনীল ভদ্র। বৃহস্পতিবার রাস পুর্ণিমা তিথিতে চিলাপাতার জঙ্গলে বন দেবতার পাশাপাশি তিনটি কুনকি হাতিকে পুজো করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পেশায় ঠিকাদার সুনীলবাবু বলেন, “বছর আটেক আগে চিলাপাতা এলাকায় রাতের বেলায় আমার ক্যাম্পে একদল বুনো হাতি ঢুকে তাণ্ডব চালিয়ে প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি করে। হাতির উপদ্রবে সেই সময় আমার ক্যাম্পে কোনও লোক থাকতে চাইতেন না। হাতির উপদ্রব ঠেকাতে আমি সেই সময় চিলাপাতা রেঞ্জের বানিয়া নদীর ধারে মহাকাল বাবার পুজো শুরু করি। |
আজও সেই পুজো চলে আসছে রাস পুর্ণিমার তিথিতে। এ দিন শিবের মূর্তির পাশাপাশি বনদেবতা ও চিলাপাতা রেঞ্জের তিনটি হাতির পুজো করা হয়। চাল, কলা নৈবেদ্যের পাশাপাশি ধান, কলা, কলাগাছ, ভাঁপাপিঠে, গুঁড়, হাতিকে খাওয়ানো হয়। এদিন দুপুরে বন্যপ্রাণ তিন নম্বর বিভাগের চিলাপাতা রেঞ্জের মাহুতরা তিনটি কুনকি হাতি সাহারুল, অনুসূয়া ও বছর দুয়েকের শঙ্করীকে নিয়ে আসেন। হাতিগুলিকে বানিয়া নদীতে স্নান করানো হয়। দুপুর একটা নাগাদ তিনটে হাতিকে পুজো স্থলে নিয়ে আসার পর উলুধ্বনি দিয়ে মহিলারা কুলোয় প্রদীপ জ্বেলে বরণ করেন। মাথায় সিদুঁর লেপে কলা খাওয়ানো হয়। সুনীলবাবু বলেন, “একসময় ভয়ে নিজের সম্পত্তি বাঁচানোর জন্য পুজো শুরু করেছিলাম। এখন হাতিকে ভালোবেসে ফেলেছি। কোথাও ট্রেনে কাটা পড়ে বা জঙ্গলে হাতির মৃত্যুর খবর পেলে খুব কষ্ট হয়। আমার এই পুজো বর্তমানে আমজনতার পুজোয় পরিণত হয়েছে। হাতি পুজোর করার আগে কিংবা পরে একটি গাছকে বনদেবতা রূপে পুজো করা হয়।” মথুরা চা বাগানের ভারপ্রাপ্ত ম্যানেজার দীপিন মেহেতা বলেন, “এখানে আমি আগেও এসেছি। এখানে হাতি পুজোর পাশাপাশি গাছ বাঁচাতে বন দেবতার পুজো হয়। প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে এই ধরনের ধর্মীয় অনুষ্টানে শিশুরা এসে অনেক কিছু শিখতে পারছে। তাছাড়া দিন দিন জঙ্গল ধ্বংস হওয়ায় হাতি সহ বন জন্তুদের খাদ্য ভাঁড়ারে টান পড়ছে। পরোক্ষ ভাবে চা বাগানগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রাতের বেলায় ও মাঝে মাঝে দিনের বেলায় হাতি, বাইসন ও হরিণ চা বাগান এলাকায় ঢুকে পড়ছে। এতে বন্যপ্রাণ ও মানুষ উভয়ের ক্ষতি হচ্ছে।” |