সম্পাদকীয় ২...
ধর্ষণের অগ্রগতি
ভারতে প্রধান অপরাধগুলির মধ্যে সর্বাধিক বাড়িয়াছে ধর্ষণের ঘটনা। গত চার দশকে খুন, ডাকাতি, অপহরণ, ধর্ষণের ন্যায় প্রধান অপরাধগুলির হার বিচার করিয়া দেখা যাইতেছে, ধর্ষণ বাড়িয়াছে ৭৯২ শতাংশ, তুলনায় অন্যান্য অপরাধগুলি অনেক কম হারে বাড়িয়াছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসাব বিচার করিয়া এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ধরা পড়িয়াছে। ইহা সত্য যে পূর্বের তুলনায় এখন বেশি সংখ্যক মেয়ে ধর্ষণের পর থানায় সে বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করিতেছেন। অর্থাৎ ধর্ষণের বৃদ্ধির সবটুকুই ধর্ষণের ঘটনার বৃদ্ধির জন্য নহে, সত্তরের দশকে যে অপরাধগুলি গোপন থাকিত এখন তাহা পুলিশের নিকট নথিভুক্ত হইতেছে বলিয়াও ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা বাড়িতেছে। কিন্তু বৃদ্ধির যে বিপুলতা ধরা পড়িয়াছে, তাহাতে স্পষ্ট যে কেবল অধিক নথিভুক্তিই একমাত্র কারণ নহে, ধর্ষণের ঘটনাও বাড়িয়াছে। পুলিশের তথ্য হইতে ইহাও প্রকাশিত হইয়াছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মহিলার পরিচিত কোনও ব্যক্তিই তাহার উপর এই নিগ্রহ করিয়াছে। তাহার একটি বড় অংশ তাহার প্রতিবেশী, কিংবা পরিবারের কোনও সদস্য। এই সকল বিষয়গুলি কী ইঙ্গিত করিতেছে? রাষ্ট্র মহিলাদের প্রশাসনে এবং রাজনীতিতে যোগদানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করিয়াছে, অর্থনীতিও উন্মুক্ত বাজারে মহিলাদের শ্রম এবং উৎপাদনকৌশলের মর্যাদা দিতে অনাগ্রহী নহে। কিন্তু সমাজ ও পরিবার মহিলাদের চিরাচরিত ‘দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক’ করিয়া রাখিতে চাহে। মহিলাদের উপর পীড়ন করিয়া তাহাদের নিয়ন্ত্রণে রাখিবার চেষ্টা চলিতেছে।
ধর্ষণ খুব কম ক্ষেত্রেই কেবলমাত্র যৌন ইচ্ছা পরিপূরণের উদ্দেশ্যে করা হইয়া থাকে। তাহার প্রধান উদ্দেশ্য মহিলাদের তাহাদের ‘যথার্থ স্থানটি’ চিনাইয়া দেওয়া। এই কারণেই পঞ্চায়েতের প্রধান পদপ্রার্থী মহিলা, সমাজ আন্দোলন কিংবা রাজনৈতিক প্রতিবাদের সহিত যুক্ত মহিলা, কিংবা নিম্নবর্ণ, আদিবাসী মহিলাদের উপর ধর্ষণ এ দেশে অগণিত ঘটিয়া থাকে। পুরুষতন্ত্র, বর্ণব্যবস্থা, রাজনৈতিক স্বৈরতন্ত্র, আধিপত্যের এই সকল নকশা বজায় রাখিবার একটি উপায় হইল মহিলাদের উপর ধর্ষণ। একবিংশ শতকের ভারতেও কোনও দলিত পুরুষ একটি উচ্চবর্ণ মেয়েকে বিবাহ করিলে মেয়েটির পরিবার দলিত পরিবারটির মহিলাদের ধর্ষণ ও পুরুষদের খুন না করিয়া ‘মর্যাদা’ ফিরিয়া পায় না। অপর দিকে, পরিবারের মধ্যে নারীদের অবস্থান যে পূর্বের মতোই ঝুঁকিপূর্ণ রহিয়া গিয়াছে, গৃহ যে বস্তুত গৃহবধূদের জন্য কিংবা কিশোরী কন্যাদের জন্য নিরাপদ নহে, তাহাও স্পষ্ট।
অতএব ধর্ষণ কেবল নারী নির্যাতন নহে, তাহা বৃহত্তর সামাজিক অন্যায়ের একটি প্রকাশ। তাই ধর্ষণের ঘটনাগুলিকে গুরুত্ব দেওয়া এবং তাহার প্রতিকার করা রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জরুরি। আক্ষেপের বিষয় এই যে, রাষ্ট্র এ বিষয়ে তাহার কর্তব্য হইতে ক্রমশ পিছাইয়া পড়িয়াছে। পুলিশ অভিযোগের তদন্ত করিয়া অভিযোগ গঠন করিতেছে পূর্বের তুলনায় কম ক্ষেত্রে। আদালতেও নিষ্পত্তি হইতেছে মাত্র ১৬ শতাংশ ক্ষেত্রে, যাহা পূর্বের তুলনায় অনেক কম। এই দুটিই অত্যন্ত উদ্বেগজনক তথ্য। এমনিতেই প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য উপস্থিত করা কঠিন বলিয়া প্রমাণের অভাবে বহু ক্ষেত্রে অভিযুক্ত মুক্তি পাইয়া থাকে। তাহার উপর যদি তদন্ত এবং বিচারের স্তরেই অভিযোগ পৌঁছাইতে না পারে, তাহা হইলে ধর্ষণের ন্যায় গুরুতর অপরাধকে নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হইয়া উঠিবে। শাস্তির কঠোরতার চাইতেও শাস্তির নিশ্চয়তা অপরাধীদের নিরস্ত করে বেশি। অতএব আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে এ বিষয়ে সজাগ হইতে হইবে। প্রয়োজনে ধর্ষণের অপরাধের জন্য ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ আদালত তৈরি করিয়া দ্রুত মীমাংসা করিতে হইবে। নানাবিধ যুক্তি এবং অজুহাতের সাহায্যে সাতশো শতাংশ বৃদ্ধিকে তাচ্ছিল্য করা চলিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.