মমতার ভূমিকাকে সমর্থন কেন
বিসর্জন-কাণ্ডে রাজ্যপালকে তোপ বিমানের
বানীপুরের বিসর্জন-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে সমর্থন করায় রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সমালোচনা করল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। বুধবার রাজ্যপাল বলেছিলেন, ওই রাতে মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে না-গেলে গোলমাল আরও বাড়তে পারত।
আর রাজ্যপালের সেই বক্তব্য সম্পর্কে বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর প্রতিক্রিয়া, “রাজ্যপাল যা বলেছেন বলে শোনা যাচ্ছে, অতীতে তা কখনও হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী থানায় গিয়েছিলেন তাঁর দলীয় কর্মীদের ছাড়াতে। তিনি (রাজ্যপাল) সেটাকে সমর্থন করেছেন! এ কথা তিনি বলতে পারেন না।” বিমানবাবুর অভিযোগ, “রাজ্যপালও তৃণমূলের অন্যায়ের শরিক হয়ে যাচ্ছেন। বিপজ্জনক! আমাদের কাছে অবাঞ্ছিত! অভাবনীয়ও বটে! রাজ্যপাল সংবিধানের রক্ষক। কিন্তু ধীরে ধীরে তিনি তৃণমূলেরই অন্যতম মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠছেন!”
উল্লেখ্য, নন্দীগ্রাম-পর্বে তদানীন্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর সঙ্গে সিপিএমের তীব্র সংঘাত বেধেছিল। তার পরে শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলছিল তারা। এ বার ভবানীপুর-কাণ্ড ঘিরে সিপিএম সেই সমালোচনার সুর আরও চড়াল। যদিও সিপিএমের বক্তব্যকে আমল দিতে চায়নি রাজ্যের প্রধান শাসকদল তৃণমূল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ের কথায়, “রাজ্যপাল সরকারের প্রধান, এবং মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন মুখ্য প্রশাসক। যাঁরা ভবানীপুর নিয়ে এ সব কথা বলছেন, তাঁরা রাজনীতি করার জন্যই বলছেন। রাজ্যপাল সঠিক কথাই বলেছেন।”
রবিবার রাতে জগদ্ধাত্রী প্রতিমা বিসর্জনের শোভাযাত্রায় চড়া শব্দের বাজি ও মাইক আটকাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল ভবানীপুর থানার পুলিশ। দুষ্কৃতীরা থানায় হামলা চালিয়ে কর্তব্যরত কয়েক জন পুলিশকর্মীকে মারধর করে বলে অভিযোগ। কিছুক্ষণ বাদে মুখ্যমন্ত্রী ঘটনাস্থলে আসেন। মমতার ঘনিষ্ঠদের দাবি, তাঁর হস্তক্ষেপেই উত্তেজিত জনতা শান্ত হয়। অন্য দিকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ, হাঙ্গামায় অভিযুক্ত কয়েক জনকে মুখ্যমন্ত্রীই ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
তবে পরে পুলিশের কর্তারা তদন্ত করে জানিয়ে দিয়েছেন, ভবানীপুর থানার পুলিশের ‘অতি-সক্রিয়তা’-র জন্যই ওই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যার জেরে রাজনৈতিক বিতর্কের পাশাপাশি ওই রাতের ঘটনায় লালবাজারের কর্তাদের ভূমিকা সম্পর্কেও প্রশ্ন তুলেছেন পুলিশেরই একাংশ। কেন?
তাঁদের অভিযোগ, রবিবার রাতের ঘটনার দায় নিচুতলার উপরে চাপিয়ে দিচ্ছেন কর্তারা। ইতিমধ্যে ভবানীপুর থানার তিন পুলিশকর্মীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ঘটনার রাতে একটি মামলা দায়ের করলেও তাতে কোনও হামলাকারীর নাম দেওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পরে স্থানীয় দুষ্কৃতী জগন্নাথ সাউকে ধরার চেষ্টা করেছে পুলিশ।
এবং এরই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, তাকে ধরার জন্য খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের প্রয়োজন পড়ল কেন? এক জন দুষ্কৃতীকে ধরার সিদ্ধান্তও লালবাজারের কর্তারা কেন নিতে পারলেন না? পুলিশের ওই অংশের আরও প্রশ্ন, থানায় হামলা থেকে শুরু করে কর্তব্যরত পুলিশকে মারধর কি জগন্নাথ সাউ একাই করেছিল? যদি না-করে থাকে, তবে অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা হচ্ছে না কেন?
যাকে ধরতে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ দিলেন, সেই জগন্নাথ সাউয়ের পরিচয় কী? পুলিশ-সূত্রের খবর: খুনের চেষ্টা থেকে তোলাবাজির একাধিক অভিযোগে অভিযুক্ত জগন্নাথ ২০০৬-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের বাড়ির কাছে বোমাবাজির ঘটনাতেও অভিযুক্ত ছিল। সে বার সে বোমা-পিস্তলধারী সঙ্গীদের নিয়ে গিয়েছিল যুব কংগ্রেসের এক নেতার উপরে চড়াও হতে। বুদ্ধবাবুর বাড়ির দক্ষিণে ৩৪/১ বন্ডেল রোডে বোমা ফাটার ঘটনাটির পরে লালবাজারের গোয়েন্দারা জগন্নাথকে গ্রেফতারও করেন, কিন্তু সে জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়।
পুলিশের দাবি: গত পুরভোট ও বিধানসভা ভোটের আগে ‘সতর্কতা’ হিসেবে তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা সফল হয়নি। জগন্নাথ আদতে বিহারের লোক। সেখানে তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। জগন্নাথের খোঁজে এ বার বিহারে দল পাঠানো হতে পারে বলে লালবাজার-সূত্রের খবর।
ভবানীপুরের পরিস্থিতি নিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রঞ্জিতকুমার পচনন্দা এ দিন সাউথ ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার তাপস বসু এবং ভবানীপুরের ওসি ইন্দ্রজিৎ ঘোষদস্তিদারের সঙ্গে কথা বলেছেন।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.