বাদশাহ তাঁকে ডাকলেন ‘চিফ মিনিস্টার সাহিবা’ বলে। বাদশাহকে তিনি বললেন ‘ভাই’।
উপলক্ষ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ১৭তম কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যেখানকার মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্মৃতি উস্কে দিয়ে শর্মিলা জানালেন, এই কলকাতাতেই তাঁর লেখাপড়া, বড় হওয়া, স্বামীর সঙ্গে প্রথম দেখা এবং বিয়ে।
শহর দেখল মুখ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতাও। দুই সঞ্চালক যিশু সেনগুপ্ত ও জুন মালিয়া শাহরুখ খানকে মঞ্চে আমন্ত্রণ করলে রাস্তা দেখাতে উঠলেন অতিথিপরায়ণ মমতা নিজেই। বাদশাহও পালন করলেন উপযুক্ত অতিথির ভূমিকা। ‘দিদি’কে ছাড়া মঞ্চে যেতে নারাজ তিনিও। শেষে দর্শকদের মাতিয়ে একে অপরের হাত ধরেই মঞ্চে গেলেন তাঁরা।
পরে আবার এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে সুপ্রিয়াদেবী, সন্ধ্যা রায়, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়কে মঞ্চে উঠতে সাহায্য করলেন বাদশাহ। দর্শকদের জানালেন, কলকাতাকেই ভারতবর্ষের সংস্কৃতির রাজধানী বলে মনে করেন তিনি। সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের পাশাপাশি কিশোর কুমার, এস ডি বর্মণ, আর ডি বর্মণের মতো বিশিষ্ট বাঙালির নামও উল্লেখ করলেন। মঞ্চে উপস্থিত সকলে প্রদীপ জ্বালাতে সাহায্য করলেন। নিজেই দু’টো মোমবাতি দিয়ে কলকাতার দর্শকদের আরও আপ্লুত করলেন শাহরুখ। |
শর্মিলা অবশ্য মঞ্চে এসেও ধরে রাখলেন নিজের সেই অভিজাত, নরম অথচ দৃঢ় ব্যক্তিত্ব। কলকাতাকে জানালেন, কী ভাবে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে সব সময়েই যোগাযোগ রেখেছেন তিনি। সুযোগ পেলেই কাজ করেছেন বাঙালি পরিচালকদের সঙ্গে, বাংলা ছবিতে।
শর্মিলা বলেন, “বিপুল টাকা ঢাললেই সব সময়ে অসাধারণ ছবি হয় না। “ভাল ছবি বানাতে লাগে অসাধারণ মনন, ভাবনা।” বলে মন্তব্য করলেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কারও কারও অবশ্য মনে হয়েছে, মন্তব্যটি শাহরুখের ১৫০ কোটির ‘রা ওয়ান’-এর প্রতিই কোনও প্রছন্ন ইঙ্গিত নয় তো! তবে তা নিয়ে বিশদে কিছু বলেননি তিনি। এ প্রসঙ্গে তেমন কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি শাহরুখ খানের পক্ষ থেকেও।
বরং এ দিনের অনুষ্ঠান থেকে ফিরে গিয়ে বাদশাহ ট্যুইট করেছেন, “ভালবাসার অসাধারণ অনুভূতি হল কলকাত্তায়...খুব ভাল সঙ্গ পেলাম...মমতাদিদি খুবই মিষ্টি...এবং বিমানবন্দরের ভিড়টাও...।”
তবে ভিন্ রাজ্যের অতিথিদের নিয়েই শুধু নিজেকে ব্যস্ত থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। খেয়াল রেখেছেন সব দিকেই। শর্মিলা ও শাহরুখের বক্তৃতা চলাকালীনই তাঁর চোখে পড়ে, মঞ্চে উপস্থিত সব বিশিষ্টজনেদের শাল দেওয়া হলেও বাদ পড়ে গিয়েছেন গৌতম ঘোষ ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের জন্য শাল আনান মুখ্যমন্ত্রী।
অবশ্য টালিগঞ্জের শিল্পীদের একাংশ ও দর্শকদের মধ্যে কিছু ক্ষোভ তৈরি হয় যখন সঞ্চালকেরা বয়োজ্যেষ্ঠ শর্মিলার আগেই শাহরুখকে মঞ্চে ওঠার জন্য আমন্ত্রণ জানান। পাশাপাশি, কিছু প্রশ্ন উঠেছে এ দিনের অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ তাপস পাল ও শতাব্দী রায়ের অনুপস্থিতি ঘিরেও। শতাব্দী অবশ্য ফোনে জানান, “শু্যটিংয়ে ব্যস্ত ছিলাম বলে যেতে পারিনি।” |