মজুরি নিয়ে শ্রমিক আন্দোলন, উৎপাদন বন্ধ পাইপ কারখানায়
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, কারখানা বন্ধ করে আন্দোলন চলবে না। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুরুলিয়া সফরের আগে ওই জেলারই রঘুনাথপুরে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের আন্দোলনের জেরে কারখানা বন্ধ থাকার অভিযোগ উঠেছে।
রঘুনাথপুর ২ ব্লকের মঙ্গলদা গ্রামের অদূরে ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নত মানের ‘এইচডিপিই’ পাইপ তৈরির কারখানা গড়েছেন কলকাতার শিল্পোদ্যোগী অঞ্জন মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, আইএনটিটিইউসি-র নেতৃত্বে শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে টানা ১০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে কারখানা। প্রশাসনের কাছে লিখিত ভাবে সব জানিয়েছেন তিনি। অঞ্জনবাবুর দাবি, “আমার কারখানায় তৃণমূল ছাড়া অন্য কোনও শ্রমিক সংগঠন নেই। ওই সংগঠনের নেতা কার্তিক বাউরির নেতৃত্বে আন্দোলনের জন্যই কারখানা বন্ধ। প্রচুর আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে।” অন্য দিকে, মজুরি বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন চলছে জানিয়ে কার্তিকবাবু শ্রমিকদের প্রতি তাঁদের ‘পূর্ণ সমর্থনের’ কথা ঘোষণা করেছেন। মালিকপক্ষের ‘বঞ্চনা’ নিয়ে প্রশাসনের কাছে তিনি সংগঠনের প্যাডে অভিযোগও করেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে সাড়ে পাঁচ একর জমি কিনে গত বছর কারখানাটির নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল।
নিজস্ব চিত্র।
চলতি বছর অগস্ট থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদন শুরু হয়েছে। আর এই ‘গুরুত্বপূর্ণ’ পর্যায়ে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে ‘অঞ্জন ট্রেডকম’ নামের ওই শিল্পসংস্থাটি। অঞ্জনবাবু জানান, পরীক্ষামূলক ভাবে উৎপাদনের পরে উৎপাদিত পণ্যের নমুনা জমা করতে হয় কেন্দ্রীয় সরকারে বিআইএস (ব্যুরো অফ ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস) দফতরে। পণ্যের গুণমান পরীক্ষা করার পরেই আইএসআই শংসাপত্র মেলে। এর পরে কারখানায় বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করা সম্ভব। অঞ্জনবাবুর ক্ষোভ, “এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে টানা ১০ দিন উৎপাদন বন্ধ থাকায় আমরা বিপাকে পড়েছি। প্রতিদিন ক্ষতি হচ্ছে ৭০ হাজার টাকার।”
মঙ্গলদা গ্রামেরই বাসিন্দা তথা আইএনটিটিইউসি-র রঘুনাথপুর ২ ব্লক সভাপতি কার্তিকবাবুর অবশ্য অভিযোগ, “মাত্র ৩০ জন শ্রমিক কাজ করেন ওই কারখানায়। তাঁদের দৈনিক মজুরি ৮০-১০০ টাকা। তাঁরা গোটা মাস কাজও পান না। সরকার নির্ধারিত হারে ন্যূনতম মজুরি, প্রভিডেন্ড ফান্ডের ব্যবস্থা করা-সহ অন্য সুযোগসুবিধার দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে। যা হচ্ছে, তা শ্রমিক স্বার্থেই হচ্ছে।” অন্য দিকে, অঞ্জনবাবুর দাবি, এলাকায় অন্য কারখানাগুলি যে হারে মজুরি দেয়, তাঁরাও সেই হারে অদক্ষ শ্রমিকদের মজুরি দিচ্ছেন। আলাপ-আলোচনার পরে মজুরি বাড়াতে তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আলোচনায় না বসে ধর্মঘটে নেমেছে।
অচলাবস্থা কাটাতে অঞ্জনবাবু প্রশাসনের পাশাপাশি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বেরও দ্বারস্থ হয়েছিলেন। তিনি বলেন, “কার্তিক বাউরির পাশাপাশি সমস্যা কাটাতে জেলা স্তরের তৃণমূল নেতা বিষ্ণু মেহেতার কাছে গিয়েছিলাম। ফল হয়নি।” জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণুবাবু বলেছেন, “আমরা অঞ্জনবাবুকে বলেছি, সরকার নির্ধারিত হারেই মজুরি দিতে হবে এবং প্রত্যেক শ্রমিককে মাসে পুরো দিন কাজ দিতে হবে।” তাঁর দাবি, তাঁরা শ্রমিকদের কাজ করতে বলেছিলেন। কিন্তু কম মজুরিতে তাঁরা কাজ করতে রাজি নন। কার্তিকবাবুর আবার অভিযোগ, “মালিকপক্ষই আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাইছেন না। শ্রমিকদের প্রাপ্য না দিলে আন্দোলন করা আমাদের দলের রীতি।” যদিও আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একাংশই বলছেন, “মজুরি বাড়ানোর দাবি আমরা করেছি ঠিকই। কিন্তু টানা কারখানা বন্ধ থাকায় সমস্যায় আমরাই পড়ছি।”
জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো অবশ্য বলেন, “যে দাবিই থাকুক না কেন, কারখানা বন্ধ রেখে আন্দোলন করা চলবে না। এটা দল ও রাজ্যের ঘোষিত সিদ্ধান্ত। কেন কারখানা বন্ধ রয়েছে, তা বিশদে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক আবিদ হোসেন জানান, মুখ্যমন্ত্রীর জেলা সফরের পরেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করা হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.