দক্ষিণ ২৪ পরগনায় নাগচর নদীর এক দিকে রায়দিঘির বোলের বাজার জেটিঘাট। অন্য প্রান্তে পাথরপ্রতিমার পূর্ব দ্বারিকাপুর। এই দুই ঘাটের মধ্যে রোজ নৌকায় পারাপার করেন বেশ কয়েক’শো মানুষ। কিন্তু দু’টি জেটিঘাটই দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। ফলে জেটির উপর দিয়ে চলাচল ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটলেও স্থানীয় পঞ্চায়েত বা প্রশাসনের জেটিঘাট সংস্কারের ব্যাপারে কোনওরকম উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ। যদিও দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিপজ্জনক হয়ে পড়া ওই দু’টি জেটিঘাটের যে অবিলম্বে সংস্কার করা দরকার সে কথা অবশ্য মেনেছেন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই।
রায়দিঘি ও পাথরপ্রতিমা ব্লকের মধ্যে যোগাযোগের জন্য নাগচর নদীর দু’দিকে ওই দু’টি পাকা জেটিঘাট রয়েছে। সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খেয়া পারাপার করে। কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামো না থাকায় প্রতিনিয়ত হয়রান হতে হয় যাত্রীদের। নদীতে চরা পড়ে যাওয়ায় ভাটার সময়ে ঘাটে নৌকো লাগানো যায় না। ফলে, ঘাটের অনেকটা আগেই নৌকো দাঁড় করাতে হয়। একহাঁটু কাদা মাড়িয়ে নৌকোয় ওঠানামা করতে হয় যাত্রীদের। শিশু, মহিলা থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা বেশি সমস্যায় পড়েন। কয়েক বছর আগে এক শিক্ষিকার দানে বোলের বাজারের জেটিঘাটে ১৫-২০ ফুট লম্বা কাঠের মাচা তৈরি হয়। বর্তমানে সেটিরও বেশ কিছু পাটাতন ভেঙে গিয়েছে। |
শুধু জেটিঘাটের উপযুক্ত সংস্কারই নয়, পরিকাঠামোগত আরও নানাবিধ সমস্যা রয়েছে দু’পারেই। রাত পর্যন্ত খেয়া পারাপার করলেও কোনওদিকের জেটিঘাটেই বর্তমানে আলোর ব্যবস্থা নেই। সৌর-বিদ্যুতের সাহায্যে এক সময় আলো জ্বালানোর ব্যবস্থা হয়েছিল। কিন্তু সেই ব্যবস্থাও এখন অকেজো। ফলে রাতের অন্ধকারে যে কোনও সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনায় আশঙ্কা রয়েছে। দৈনিক কয়েকশো মানুষ পারাপার করলেও কোনও যাত্রীশেড নেই। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থাও। বৃষ্টি হোক বা রোদ্দুর বছরের বারো মাসেই খোলা আকাশই ভরসা যাত্রীদের। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, জেটিঘাট দু’টি সংস্কারের জন্য পঞ্চায়েত সমিতিকে বার বার জানানো হলেও এ ব্যাপারে তাদের কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। পাথরপ্রতিমার পূর্ব দ্বারিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা পাঁচু সর্দার, নিমাই বেরারা জানান, এলাকার বাসিন্দারা ছাড়াও কয়েকটি স্কুলের এবং রায়দিঘি কলেজের পড়ুয়ারা এই ঘাট দিয়ে পারাপার করেন। রায়দিঘি গ্রামীণ হাসপাতাল বা ডায়মন্ড হারবার মহকুমা হাসপাতালে রোগী নিয়ে যেতে হলে এই দুই জেটিঘাটই ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু ঘাটের বেহাল অবস্থায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সকলকেই।
পাথরপ্রতিমার বিডিও অচিন্ত্য হাজরা বলেন, “বোলের বাজার এলাকার জেটিঘাট সংস্কারের জন্য মথুরাপুর ২-এর বিডিও-কে বলব। পূর্ব দ্বারিকাপুর জেটিঘাটটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় লক্ষ্মী জনার্দনপুর পঞ্চায়েতকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
পাথরপ্রতিমা পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রজনীকান্ত বেরার বক্তব্য, “দু’দিকের জেটি সংস্কারের পাশাপাশি নাগচর নদীর উপরে নির্মীয়মাণ সেতুর কাজও দ্রুত শেষ করা দরকার। বিষয়টি সুন্দরবন উন্নয়ন দফতরকে বলা হয়েছে।” মথুরাপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কংসমোহন কয়াল বলেন, “বোলের বাজার জেটিঘাটটি সংস্কারের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” |