|
|
|
|
কারাটের আর্জি, তবু দিল্লি এড়ানোর পথেই বুদ্ধ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
কলকাতায় এসে ‘ব্যক্তিগত ভাবে’ প্রকাশ কারাটের অনুরোধ সত্ত্বেও চিঁড়ে ভিজছে না! শেষ মুহূর্তে কোনও ‘পরিবর্তন’ না-ঘটলে এ বারও দিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে যাচ্ছেন না সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।
পার্টি কংগ্রেসের প্রস্তুতির জন্য সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির তিন দিনের ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈঠক শুরু হচ্ছে কাল, শুক্রবার। দলের মতাদর্শগত দলিলকে ‘সময়োপযোগী’ করে তোলার যে কাজে সিপিএম ২০ বছর পরে হাত দিয়েছে, তা নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা এ বারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে। ওই দলিলের উপরে পলিটব্যুরোয় ‘নোট’ পাঠিয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। সাধারণ সম্পাদক কারাট চেয়েছিলেন, বুদ্ধবাবুর উপস্থিতিতেই দলের শীর্ষ স্তরের কমিটিতে তাঁর ‘নোট’ নিয়ে আলোচনা হোক। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জন্য দিল্লি-যাত্রার ধকল নেওয়া যাবে না, এই কারণ দেখিয়েই বুদ্ধবাবু এ বারের বৈঠকও এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে সিপিএম সূত্রের খবর।
দলের একাংশের প্রস্তাব সত্ত্বেও ট্রেনে দিল্লি যেতে বুদ্ধবাবু তৈরি নন। তা ছাড়া, ট্রেনে গেলে তাঁর নিরাপত্তার জন্য যে বন্দোবস্ত করতে হয়, তাতেও বুদ্ধবাবুর খুব ‘সায়’ নেই। এই অবস্থায় বিমান-যাত্রাই একমাত্র পথ। শুক্রবারের বৈঠকের জন্য আজ, বৃহস্পতিবারই দিল্লি রওনা হবেন এ রাজ্য থেকে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ কিছু সদস্য। কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বুধবার রাত পর্যন্ত বিমানের টিকিট কাটা হয়নি। দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা, বুদ্ধবাবুর সিওপিডি-জনিত শ্বাসকষ্টের সমস্যা উড়ানে বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা রয়েছে, সেই পরিস্থিতির কোনও উন্নতি ঘটেনি। তবে দলেরই একটি অংশের মতে, বিধানসভা ভোটের পর থেকে বুদ্ধবাবুর সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের যে টানাপোড়েন চলছে, তা এখনও মেটেনি। বরং, মতাদর্শগত অবস্থানকে ঘিরে তা আরও একটু নতুন মাত্রা পেয়েছে। সেই জন্যই পলিটব্যুরো বা কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বুদ্ধবাবু লাগাতার অনুপস্থিতি ‘ভিন্ন তাৎপর্যে’র দাবি রাখে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য অবশ্য বলছেন, “শরীর ঠিক না-হলে ওঁকে আর জোর করা হবে না।”
বিধানসভা ভোটে দলের পরাজয়ের পরে পলিটব্যুরো এবং কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে সরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন বুদ্ধবাবু। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একাংশ চাইছেন, বুদ্ধবাবু নিজেই যখন সরে যেতে চেয়েছিলেন এবং শরীরের জন্য কলকাতার বাইরে বৈঠকে যোগ দিতেও পারছেন না, সে ক্ষেত্রে তাঁকে ‘অব্যাহতি’ দেওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে দলে আলোচনা হোক। ঠিক যে ভাবে শারীরিক অসুস্থতার জন্যই দলের প্রতিষ্ঠাতা ‘নবরত্নে’র অন্যতম জ্যোতি বসুকে শেষ দিকে পলিটব্যুরোর ‘আমন্ত্রিত’ সদস্য করে রাখা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পার্টি কংগ্রেসের আগে বুদ্ধবাবুর ওই ইস্তফার ‘ইচ্ছা’ নিয়ে এই কেন্দ্রীয় কমিটিতে আলোচনা হলে তা আরও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ ঘটনা হবে।
তবে বুদ্ধবাবুর দিল্লি যাওয়া বা না-যাওয়া নিয়ে ঈষৎ ‘সংশয়’ শেষ পর্যন্ত রয়ে গিয়েছে এ দিনের একটি ঘটনার জেরে। কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী উৎসবে আমন্ত্রণ জানাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুদ্ধবাবু তাঁকে জানান, তাঁর ‘ব্যস্ততা’র জন্য আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওই অনুষ্ঠানে তিনি থাকতে পারবেন না। বুদ্ধবাবুর ওই ‘ব্যস্ততা’ আলিমুদ্দিনেই, নাকি কোনও জেলায়, নাকি দিল্লিতে সংশয় দেখা দিয়েছে তা নিয়েই।
কেন্দ্রীয় কমিটির আগে দিল্লিতে অন্য একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েও যাচ্ছেন না বুদ্ধবাবু। দিল্লির করোলবাগে আজ, বৃহস্পতিবার সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর নতুন ভবনের দ্বারোদঘাটন করার কথা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের। পশ্চিমবঙ্গে যুব সংগঠনের প্রথম রাজ্য সম্পাদক হিসাবে বুদ্ধবাবুও অন্য প্রাক্তন নেতাদের সঙ্গে ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। এ রাজ্যের প্রাক্তন যুব নেতা, অধুনা কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েক জন সদস্য ওই অনুষ্ঠানের জন্য দিল্লি রওনা হয়েও গিয়েছেন। কিন্তু বুদ্ধবাবু শরীরের কথা বলেই সেখানেও থাকছেন না। |
|
|
|
|
|