আজ, বৃহস্পতিবার রাস উৎসবে মেতে উঠবে দাঁইহাট শহর। কাল শুক্রবার উৎসব শেষ হবে শোভাযাত্রা সহকারে। উৎসব সফল করার জন্য দাঁইহাট রাস উৎসব কমিটির সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসন ও পুরসভা সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। থিম নয়, এ বছর শোভাযাত্রার উপরেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন পুজোর উদ্যোক্তারা।
শক্তির আরাধনার মধ্য দিয়ে দাঁইহাটে রাসের সূচনা হয়। সেই কারণে রাস পূর্ণিমায় এখনও শক্তির আরাধ্য দেবী কালীর পুজো হয়। বুধবার রাতে বড়কালীতলার পুজোর মধ্য দিয়েই দাঁইহাটে রাস উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও শবশিবতলার পুজোতেও ভিড় জমান দাঁইহাটবাসী। |
জনশ্রুতি, দাঁইহাটের তান্ত্রিকেরা পটের মাধ্যমে রাস পূর্ণিমার দিন কালীর আরাধনা শুরু করেন। বিসর্জনের দিন নৌকা করে গঙ্গাবক্ষে শোভাযাত্রা বের হত। সেই পুজো পট পূর্ণিমা নামে পরিচিত ছিল। এ কথা প্রাক-চৈতন্য যুগের। কথিত আছে, নবদ্বীপ থেকে সন্ন্যাস গ্রহণের জন্য কাটোয়া যাওয়ার সময় দাঁইহাটের উপর দিয়ে গিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্য। নবদ্বীপে রাস উৎসব শুরু হওয়ার পরে দাঁইহাটেও রাস শুরু হয়। প্রথম দিকে পটের উপরে বিভিন্ন দেবদেবীর ছবি নিয়ে পুজো ও শোভাযাত্রা বের হত। এখন ৫২টি পুজো কমিটি রাস উৎসবে যোগ দেন।
২০০৪ সালে দাঁইহাটে রাস উৎসবে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। প্রশাসনের কাছ থেকে উদ্যোক্তাদের জন্য অনুমতি পত্র সংগ্রহ করা থেকে বিভিন্ন কাজ করে এই কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটির সহ-সভাপতি সন্দীপ দাস বলেন, “নদিয়ার মাটিয়াড়ির সঙ্গে নৌকা চলাচল ও বাস যাতায়াতের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি করা হয়েছিল। প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নিয়েছেন।” এ ছাড়াও উৎসবের সময় দাঁইহাট স্টেশনে অতিরিক্ত কাউন্টার করার জন্য রেলের কাছে দাবি জানিয়েছে ওই কমিটি।
রাস উৎসবকে শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল করার জন্য পুরসভা ও প্রশাসন ইতিমধ্যেই বেশ কয়েক বার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। কংগ্রেসের কাউন্সিলর অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “শোভাযাত্রার সময় কোনও উদ্যোক্তা গোলমাল পাকালে সেই উদ্যোক্তাকে পুজো করার অনুমতি দেওয়া হবে না, বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।”
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, রাস উৎসবকে সামনে রেখে রাস্তা সংস্কার হয়েছে। এ ছাড়াও পুজোর দু’দিন দেওয়ানগঞ্জ মোড়, বাসস্ট্যান্ড, পাইকপাড়া, সমাজবাটি মোড়, স্টেশন বাজার মোড়ে ‘নো এন্ট্রি’ বোর্ড থাকবে। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সেখান দিয়ে কোনও যানবাহন চলাচল করতে পারবে না। কংগ্রেসের পুরপ্রধান সন্তোষ দাস বলেন, “দর্শনার্থীদের কথা ভেবে পুরসভা ও প্রশাসন এ বারই প্রথম যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।” এ বছর মাতঙ্গী ক্লাব হোগলা পাতা, বেত, বাঁশের টুকরো দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করেছে। দাঁইহাট বাজারের কাছে নটরাজ মণ্ডপ বানিয়েছে কাঠের পুতুল, বাঁশ, খড় আর মাটির হাঁড়ি দিয়ে। নটরাজের থিম রামায়ণ। ভাউসিংয়ের রাইরাজার পুজো এ বার ২৫০ বছরে পা দিল। রাই অর্থাৎ রাধাকে রাজা সাজিয়ে এখানে থিম করা হয়েছে। এ ছাড়াও চন্দননগরের আলো রেখেছে বিবেকানন্দ ক্লাব। |