|
|
|
|
দুর্নীতি-মামলায় জামিন |
সুশান্ত কোথায়, তোলপাড় আদালত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
বিচারক নিজের আসনে এসে বসেছেন। দু’তরফের আইনজীবীরা হাজির। হাজির কলকাতা গোয়েন্দা-পুলিশের তদন্তকারী অফিসারও। সবাই তৈরি।
মঙ্গলবার সকালে আলিপুরে সার্ভে বিল্ডিংয়ের বিশেষ আদালত। নির্দিষ্ট মামলা শুরুর সময় হয়ে গিয়েছে। কিন্তু অভিযুক্ত? তিনি কোথায়? অভিযুক্ত যে-সে লোক নন! তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, তথা গড়বেতার বর্তমান সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষ। আপাতত যাঁর ঠিকানা আলিপুর সেন্ট্রাল জেল। কলকাতা পুলিশের দায়ের করা দুর্নীতি-মামলায় এ দিন আলিপুরের বিশেষ আদালতে তাঁর হাজিরা ছিল।
কিন্তু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও সুশান্তবাবু হাজির না-হওয়ায় আদালতে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। দৃশ্যতই বিব্রত কলকাতা পুলিশের তদন্তকারী অফিসার ফোন করেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। সেখান থেকে জানানো হয়, সুশান্তবাবুকে যথাসময়ে আদালতে রওনা করিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুনে বিভ্রান্তি কয়েক গুণ বেড়ে যায়। তা হলে সুশান্তবাবু এখনও পৌঁছালেন না কেন? কোথায় গেলেন? খোঁজ খোঁজ। চারদিকে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন জায়গায় ফোন যায়। বেশ খানিকক্ষণ বাদে সুশান্তবাবুকে নিয়ে আসা হয় বিশেষ আদালতে। চালু হয় মামলা।
কিন্তু এতক্ষণ কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলেন সুশান্তবাবু? আদালত-সূত্রের খবর, স্রেফ একটা ‘ভুল বোঝাবুঝির’ কারণেই এই বিভ্রান্তি। সুশান্তবাবুকে জেল থেকে বার করে আলিপুরের আদালতেই নিয়ে যাওয়া হয়। তবে বিশেষ আদালতে নয়। আলিপুর জজ কোর্টে। এমনকী, সেখানকার লক-আপেও তাঁকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। প্রাক্তন মন্ত্রী লক-আপের পুলিশদের কাছে জানতে চান, তাঁকে এখানে আনা হল কেন? তাঁর মামলা তো বিশেষ আদালতে!
এর পরেই পুলিশ বুঝতে পারে, কোথাও একটা ভুল হয়ে গিয়েছে। সুশান্তবাবুকে তখন বিশেষ আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে এ দিন দুর্নীতি-মামলায় জামিনও পেয়ে গিয়েছেন সুশান্তবাবু। তাতেও অবশ্য জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন না তিনি। কেন? কারণ, তিনি মেদিনীপুরের বেনচাপড়ার কঙ্কাল-কাণ্ডেও অন্যতম অভিযুক্ত। এবং সেই মামলায় এখনও জামিন পাননি। তা না-পাওয়া পর্যন্ত প্রাক্তন মন্ত্রীকে জেলেই থাকতে হবে। কঙ্কাল-কাণ্ডে অভিযুক্ত সুশান্তবাবু জেলে থাকাকালীনই কলকাতা পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি-মামলাটি রুজু করেছিল।
সুশান্তবাবুর আইনজীবী উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় এ দিন জামিনের আর্জি জানিয়ে বলেন, পুলিশ শুধু তাঁর মক্কেলের প্যান কার্ড, এবং আয়কর দফতর থেকে আয়-ব্যয়ের হিসেব চেয়ে ক্ষান্ত হয়নি। বিধানসভা থেকে বিধায়ক থাকাকালীন তাঁর ভাতার হিসেব ও মহাকরণ থেকে মন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর আয়-ব্যয়ের হিসেবও চেয়ে পাঠিয়েছে! সময় নষ্ট করতেই এ সব করা হচ্ছে বলে সুশান্তবাবুর আইনজীবীর অভিযোগ। সরকারি আইনজীবী শ্যামাদাস গঙ্গোপাধ্যায় জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, অভিযুক্ত ১৯৮৫ সাল ইস্তক বিধায়ক। তাই বিধানসভা ও মহাকরণ থেকে তাঁর আয়-ব্যয়ের হিসাব চাওয়া হয়েছে। ৩ নভেম্বর সুশান্তবাবু পুলিশের কাছে একটি বিবৃতিটি দেন। সেটা যাচাই করার জন্যও তাঁকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার আর্জি জানান সরকারি কৌঁসুলি।
তবে সেই আর্জি খারিজ করে শর্তাধীনে সুশান্তবাবুর জামিন মঞ্জুর করেন আলিপুরের বিশেষ আদালতের বিচারক কৃষ্ণা পোদ্দার। বিচারক জানিয়ে দেন, জামিনে ছাড়া পেলে সাক্ষ্য-প্রমাণাদিতে কারচুপি করা থেকে অভিযুক্তকে বিরত থাকতে হবে। মামলার সাক্ষীদেরও তিনি প্রভাবিত করতে পারবেন না। |
|
|
|
|
|