পয়সা দিতে যেতেই বালককে পিষে মারল পোষ্য ‘আনারকলি’
নেক ক্ষণ ধরেই উত্ত্যক্ত করছিল কিছু ছেলে। হঠাৎই পয়সা দিতে আসা এক বালককে শুঁড়ে পেঁচিয়ে পায়ে পিষে দিল পাড়ায় আসা হাতি।
মঙ্গলবার বেলা ১২টা নাগাদ বর্ধমান শহরের আনজির বাগানে আচমকা ঘটনাটি ঘটে যায়। মাহুত লাফিয়ে নেমেও সামলাতে পারেননি। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হলেও রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র বিবেক সাহনির (৮)। এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে হাতিটিকে ঘেরাও করেছিলেন। পরে পুলিশ পাহারায় মাহুত হাতিটিকে সরিয়ে নিয়ে যান। পুলিশের অভিযোগ, বন দফতরের কাছে সাহায্য চেয়েও পাওয়া যায়নি। মাহুতের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হলেও তাঁকে বা হাতিটিকে আটক করা হয়নি।
গত জুনে কর্নাটকের মহীশূর শহরে তাণ্ডব চালিয়ে এক জনকে পিষে মেরেছিল দু’টি বুনো হাতি। কিন্তু পাড়ায় আসা পোষা হাতির এ হেন আচরণ কার্যত বিরল। মাহুত অনিল দুবে এবং তাঁর মাঝবয়সী সঙ্গী দারোগাদাস মিশ্র জানান, দিন দশেক আগে উত্তর প্রদেশের বারাণসী থেকে ‘আনারকলি’ নামে বছর তিরিশের এই হস্তিনীকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। কোথাও কোনও গণ্ডগোল হয়নি। এ দিনও পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছিল আনারকলি। কেউ তার কপালে সিঁদুর লেপে দিচ্ছিলেন, কেউ খাওয়াচ্ছিলেন চাল-কলা, কেউ এক টাকা-দু’টাকা গুঁজে দিচ্ছিলেন শুঁড়ে।
ঘটনার পরে পোষা হাতির পায়ে শিকল পরিয়ে বসে রয়েছেন মাহুত অনিল দুবে।
মাহুতের আক্ষেপ, “এক ঘণ্টা ধরে আমরা ঘুরছিলাম। কিছু ছেলে মজা করে ঢিল ছুড়ছিল। কেউ কেউ আবার পিছন থেকে লেজ মুচড়ে দিচ্ছিল। দারোগাদাসজি মাঝে এক বার বলেওছিলেন, হাতিটাকে আর ঘোরানো ঠিক হবে না। কিন্তু আমি বলি, ধমকে দিলেই বাচ্চাগুলো পালাবে। এটা আমাদের পুরনো এলাকা। অনেক টাকাকড়ি পাই। সহজে চলে গেলে হবে? হাতি যে এ ভাবে বিগড়ে যাবে, বুঝিনি।” ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা আসেন আনজির বাগানের মাটিবাগ পাড়ায়। বাচ্চারা পয়সা দিয়ে হাতির পিঠে চড়ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, স্থানীয় মুন্সি প্রেমচন্দ হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র বিবেকও চড়েছিল। কিন্তু নেমে এসে পয়সা দিতে যেতেই হাতিটি শুঁড় দিয়ে তার হাত পেঁচিয়ে ধরে। হ্যাঁচকা টানে বিবেক পড়ে যেতেই সামনের ডান পা তার মাথার উপরে চাপিয়ে দেয় হাতিটি।
উপর থেকে লাফিয়ে নেমেও মাহুত বিশেষ কিছু করতে পারেননি। তাঁর কথায়, “আমি আনারকলির পা ঠেলে সরানোর চেষ্টা করছিলাম। তাতে ও আমাকেও শুঁড়ের ঝাপট মারে। পড়ে গিয়ে আমারও ডান হাতে চোট লেগেছে।” প্রত্যক্ষদর্শীরা কার্যত স্তম্ভিত হয়ে যান। কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বিবেকের বাবা, পেশায় ভ্যানচালক দিলীপ সাহনি। হাতি পা সরাতেই তিনি ছেলেকে তুলে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দিকে ছোটেন। কিন্তু রাস্তাতেই বিবেকের মৃত্যু হয়। সেই খবর পেয়ে জনতা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক দল লোক ইট-পাটকেল নিয়ে বারবার হাতির দিকে তেড়ে যায়। কিন্তু পুত্রশোক সত্ত্বেও দিলীপবাবুই তাদের নিরস্ত করেন। বলেন, “হাতিটা এলাকায় প্রায়ই আসে। কোনও দিন গোলমাল করেনি। ওকে দায়ী করা ঠিক নয়।” পুলিশও হাতিটির চারপাশ ঘিরে রাখে। পুলিশের নির্দেশে হাতির সামনের দু’পায়ে শিকল পরিয়ে দেন মাহুতেরা। ইতিমধ্যে হাতির ‘দায়িত্ব’ নিয়ে পুলিশ ও বন দফতরের টানাপোড়েনও শুরু হয়ে যায়। বর্ধমান থানার আইসি স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “হাতিটাকে ওঁদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আমি বিভাগীয় বনাধিকারিককে বলেছিলাম। কিন্তু উনি বলে দেন, ওঁদের কাজ বুনো হাতি নিয়ে। পোষা হাতি হেফাজতে নেওয়া ওঁদের এক্তিয়ারে পড়ে না।”
বিবেক সাহনি।
শেষমেশ পুলিশই হাতিটাকে সরিয়ে নিয়ে যায়। পরে সেটিকে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। বহু চেষ্টা করেও বিভাগীয় বনাধিকারিক গোপালচন্দ্র কাজুরির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল অতনু রাহা অবশ্য বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা বা হাতিটিকে আটক করার দায়িত্ব পুরোপুরি পুলিশের। তবে তারা বন দফতরের সাহায্য চেয়ে থাকলে অবশ্যই বনকর্মীদের এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল।”
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, মাহুতের কাছে মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র থাকলেও এ রাজ্যে হাতি দেখিয়ে টাকা তোলা নিষিদ্ধ। এ দিনের মতো ‘অনভিপ্রেত’ কিছু ঘটলে পুলিশের হাতি আটক করে কোনও চিড়িয়াখানায় পাঠানোর কথা। তা না করে পুলিশ হাতিটিকে ছেড়ে দেওয়ায় বনকর্তারা বিস্মিত। বর্ধমানের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর অবশ্য বলেন, “হাতিটিকে মোটেই ছাড়া হয়নি। মাহুতের জিম্মায় রাখতে দেওয়া হয়েছে। মামলার দিন পড়লে হাতি নিয়ে আদালতে আসতে হবে।”
তার আগে মাহুত হাতি নিয়ে উধাও হয়ে গেলে কী হবে, সে প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি।

ছবি: উদিত সিংহ


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.