সম্পাদক সমীপেষু...
ক্ষমতা = দুর্নীতি
সুগত মারজিতের ‘দুর্নীতি সমূলে উচ্ছেদ করা অসম্ভব বরং নিয়ন্ত্রণে সুফল মিলতে পারে’ (২১-৯) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে দু’-চার কথা। প্রশাসন যন্ত্র সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য ভারতে ব্রিটিশ আমলের সিভিল সার্ভিসের অনুকরণে এক সুবিশাল আয়োজন রয়েছে। প্রশাসক মনোনয়নের জন্য রয়েছে একাধিক শর্ত ও পরীক্ষা। কাগজে-কলমে এর মূল উদ্দেশ্য: মন্ত্রী যাতে সৎ দক্ষ, কর্মনিষ্ঠ ও নিয়মানুবর্তী হন এবং যে কাঠামোয় এঁরা কর্মরত তাকে আলাদা মর্যাদাদানের চেষ্টা করেন। কার্যক্ষেত্রে স্বাধীনতার সময় থেকেই মন্ত্রীরা এই রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ক্ষমতা অপব্যবহারের প্রকরণে পরিণত করে ফেলেছেন। আমাদের দেশে রাজনীতি ও অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে দুর্নীতি। সর্ব স্তরে কেচ্ছা ও কেলেঙ্কারি, কারচুপি ও অনাচারের দুঃশাসনীয় হার ইদানীং বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছনোয় দুর্নীতির ব্যাপ্তির প্রশ্নটির প্রতি নতুন করে গুরুত্ব আরোপিত হয়েছে।
দুর্নীতির রকম ও তার মোকাবিলার বিষয়ে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ আমেরিকান অ্যাকাডেমিক রবার্ট ক্লিটগার্ড ভ্রষ্টাচারের প্রকার তথা দুর্নীতি-বিরোধী অভিযানের একটি তালিকা তৈরি করেছিলেন। ওই তালিকার প্রথম ধাপে দুর্নীতি ও তার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে, সিস্টেমস অ্যানালিসিস-ই মুখ্য বিষয়। আর তালিকার তৃতীয় অধ্যায়ে সমাজের সর্ব স্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ভ্রষ্টাচার মোকাবিলায় ‘অর্গানাইজড ক্রাইম’ দমন করার পদ্ধতির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।
ভারত ক্লিটগার্ড-বর্ণিত তৃতীয় ধাপের অন্তর্ভুক্ত হলেও রক্ষকই যেখানে ভক্ষক সেই মাৎস্যানায়ের রাজত্বে সুবিচারের আশা করা আর অরণ্যে রোদন একই ব্যাপার। সঙ্গত কারণে ট্রান্সপেরেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘করাপশনস পারসেপশন ইনডেক্স’-এর রিপোর্টে আমাদের দেশকে বিশ্বের ৯১টি দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্রের তালিকার অনেক উপরের দিকে স্থান দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত শেয়ার বাজারের অনিয়ম এবং ইউনিট ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার বেনিয়মের উপর ভিত্তি করে রচিত প্রকাশমণি ত্রিপাঠীর নেতৃত্বাধীন যৌথ সংসদীয় কমিটির ২০০২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সংসদে পেশ করা রিপোর্টে পরিষ্কার বলা হয়েছিল: কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রক ও সেবি সামান্যতম সতর্ক ও সক্রিয় হলে অনায়াসে ঠেকানো যেত শেয়ার কেলেঙ্কারি। কেতন পারেখ, ব্যাঙ্ক এবং কিছু শিল্পসংস্থার মধ্যে গড়ে ওঠা অশুভ আঁতাতের ফলেই চরম বিপর্যয় ঘটে যায়। মুম্বই শেয়ার বাজারে দেউলিয়া হয়ে যায় মাধবপুরা মার্কেন্টাইল সমবায় ব্যাঙ্ক। একই সঙ্গে মূল্য মেটানোর সংকটের উদ্ভব হয় কলকাতা শেয়ার বাজারে। ওই কেলেঙ্কারি নজরে আসার ঠিক আগের মুহূর্তে, যখন শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছিল তখনই আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল অর্থমন্ত্রক ও সেবি-র। পুঁজিবাদী অর্থনীতির ভাষায় একে বলা হয় ‘ইনসাইডার ট্রেডিং’। ভাবতে অবাক লাগে, অর্থমন্ত্রকের কাছে দায়বদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে সঠিক তথ্য সরবরাহ করেনি সেবি। ওই ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিবৃতি দিয়ে সংসদকে বিভ্রান্ত করেছিলেন প্রাক্তন বি জে পি জোট সরকারের অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিংহ।
এই ঘটনার ১২ বছর আগে ঘটা প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার শেয়ার কেলেঙ্কারির তদন্তে নিযুক্ত রামনিবাস মির্ধার নেতৃত্বাধীন যৌথ সংসদীয় কমিটি তৎকালীন কেন্দ্রের পি ভি নরসিংহ রাও সরকারের কাছে ১৯৯৪ সালে শেয়ার বাজারের বেনিয়ম ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সে সম্পর্কে একটি দীর্ঘ সুপারিশ পেশ করেছিলেন। এতে শেয়ার পদ্ধতির চূড়ান্ত অসঙ্গতি দূর করার পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের পরিচালন ব্যবস্থায় চরম গাফিলতি ও অপদার্থতা দূর করে জনগণের গচ্ছিত অর্থ নয়ছয় করা বন্ধ করার জন্য জাতীয় আর্থিক ব্যবস্থায় নীতিগত পরিবর্তনের কথা বলা হয়েছিল। আর এক ধাপ এগিয়ে মির্ধা কমিটির রিপোর্টে শেয়ার বাজার ও ইউ টি আই-এর কাজকর্ম তদারকির উপর কড়া নজরদারি এবং কঠোর অনুশাসন প্রবর্তনের সুপারিশ করলেও কেন্দ্রের কংগ্রেস, যুক্তফ্রন্ট এবং এন ডি এ সরকার কেউ-ই ওই সুপারিশ মোতাবেক যথার্থ ব্যবস্থ না-নেওয়ায় কেতন পারেখের পক্ষে অনায়াসে ব্যাঙ্কের ৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা এবং ইউ টি আই বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটানো সম্ভব হয়েছিল।
তহলকা ডট কম উন্মোচিত কেলেঙ্কারির অকাট্য চাক্ষুষ প্রমাণ আর কখনও পেশ করা হয়নি। বিশেষত বৈদ্যুতিন গণমাধ্যমের পেশ করা সাক্ষ্যপ্রমাণ।
সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারি ও বিপর্যয় নিয়ে যা ঘটেছে, তা পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতির শোচনীয় ব্যর্থতারই পরিণাম। এটা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হলেও কিছু বৈশিষ্ট্য আলাদা। দেশের আর্থিক ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে অতীতেও বহু বার দুর্নীতি রাজনৈতিক বিষয় হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতা ও দুর্নীতি সমার্থক হয়ে এমন জটিল আকার ধারণ করেনি। একের পর এক কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি ও কারচুপির ঘটনায় জোরালো ধাক্কা খেয়েছে প্রতিযোগিতামূলক পুঁজিবাদী বাজার অর্থনীতি। উদারনীতি প্রবর্তিত হয় বিশ বছর আগে, অথচ এখনও কোনও রক্ষাকবচ নেই।
ফলে, সর্বনাশ সাধারণ মানুষেই।
পরিবর্তন, আক্ষরিকই
২০১০ সালে শারদীয়া উৎসবের সপ্তমীর দিনে কামারপুকুর যাওয়ার পথে তারকেশ্বর থেকে কামারপুকুর চটি পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে দেখেছিলাম লাল পতাকার বিপুল সজ্জা। বিরোধী দলের কোনও চিহ্ন না-থাকাটায় মনে হয়েছিল রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ সত্যিই নেই। ২০১১-তে রাজ্যপাট পরিবর্তন হল। বহু মানুষ বললেন, ভয়ভীতির পরিবেশ থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ স্বাধীন ভাবে মতপ্রকাশ করছে। এমনকি শাসক দলের কর্মী-নেতারাও এতটাই স্বাধীন যে, প্রকাশ্যে বিভিন্ন স্থানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে সংঘাতের ঘটনা ঘটাচ্ছে। কিন্তু, এ বছর শারদীয়া উৎসবে সপ্তমীর দিনে সেই কামারপুকুর যাওয়ার পথে তারকেশ্বর থেকে কামারপুকুর পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে কেবল জাগো বাংলার স্টল আর তিন-রঙা পতাকার সারি। গণতান্ত্রিক পরিবেশ কি তা হলে পূর্বে যেমন ছিল এখনও তেমনই আছে?
দুর্ভোগ
গত কিছু দিন যাবৎ একটা নিয়ম চালু হয়েছে। গাড়ি সংক্রান্ত যে কোনও নথি হারিয়ে গেলে লালবাজার ট্রাফিক কম্পিউটার সেল থেকে ‘এন ও সি’ করিয়ে আনলে তবেই স্থানীয় থানায় তার ডায়েরি গ্রহণ করা হবে। ফলে, বহু মানুষ লালবাজারে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। প্রথমত লালবাজারে মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ, তার জন্য দীঘর্র্ লাইনে দাঁড়িয়ে মোবাইল জমা রাখা। তার পর অফিসারের প্রতীক্ষা। তাদের দর্শন হলে সেই কাগজ ভিতরে নিয়ে বাইরে প্রতীক্ষা। সাধারণ লোকের বসার কোনও জায়গা নেই। তার উপর, উঁচুতলার অফিসারের রক্তচক্ষু। কোনও কাগজপত্র খোয়া গেলে তার ডুপ্লিকেট কপি বার করতে গিয়ে এই হয়রানির কি অন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা ছিল না?
প্রেসিডেন্সি: শিক্ষার্থীরা কী চাইছেন
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্যকে স্বাগত। প্রেসিডেন্সি নিয়ে এখন বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা। পুরোনো ঐতিহ্য গায়ে মেখে যে বিল্ডিং দাঁড়িয়ে আছে, তার হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনতে নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ আমাদের উৎসাহিত করছে। কখনও আবার গিনিপিগ হওয়ার ভয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ছি। কারণ, আমরাই তো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচ। পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রথম উপাদান আমরাই। স্নাতক স্তরের পড়ুয়া হিসাবে ইতিমধ্যেই চার মাস অতিক্রম করেছি। এই স্বল্প সময়ে কিছু ত্রুটি চোখে পড়েছে। প্রথমত, আমাদের বিভাগে শ্রেণিকক্ষের অভাব। ফলে, সাম্মানিক ক্লাস অনেক সময় বাদ পড়ে। দ্বিতীয়ত, শ্রেণি- পাঠদান আকর্ষণীয় হলেও অপূর্ণ অংশ বুঝে নেওয়ার পরবর্তী অবকাশ থাকে না। কারণ, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক এখনও নিবিড় হয়নি। তৃতীয়ত, ছাত্র-ছাত্রীদের অভাব-অভিযোগ জানাবার জন্য উপাচার্যের দরজা খোলা রাখতে হবে। উপাচার্য যদি পর্দার আড়ালের মানুষ হন, তবে কার কাছে অভিযোগ জানাব? চতুর্থত, প্রতি সপ্তাহে বিভাগীয় উদ্যোগে বিষয়ভিত্তিক আলোচনা সভা চাই। এ জন্য বিশেষ ব্যুৎপন্ন ব্যক্তিদের আনতে হবে। পঞ্চমত, ছাত্র-ছাত্রীদের বিকাশে সহ-পাঠ্যক্রমিক বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। ষষ্ঠত, ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী সকলকেই প্রেসিডেন্সির ঐতিহ্য সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.