জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্ল্যাকবেরি পরিষেবার উপর নজরদারির দাবি তুললেও এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও নিদের্শিকা বা সুস্পষ্ট নীতি প্রকাশ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। যতক্ষণ না পর্যন্ত এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট সরকারি নীতি প্রকাশ হচ্ছে, ততক্ষণ চালু পরিষেবাগুলি অব্যাহতই রাখবে ফোনটির নির্মাতা রিসার্চ ইন মোশন ইন্ডিয়া (রিম-ইন্ডিয়া)।
সংস্থার বক্তব্য, দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটি শুধু ব্ল্যাকবেরি পরিষেবারই সমস্যা নয়। বরং সার্বিক ভাবে সংশ্লিষ্ট শিল্পেরই সমস্যা। রিম-এর দাবি, তাদের মতো অন্য কয়েকটি সংস্থারও বেশ কিছু পরিষেবার ক্ষেত্রে সাঙ্কেতিক মোড়কের জট রয়েছে। বৃহত্তর ক্ষেত্রে সমস্যার বিষয়টি কেন্দ্রও অনুধাবন করেছে বলে দাবি রিম-ইন্ডিয়ার কর্তাদের। |
মঙ্গলবার কলকাতায় রিসার্চ ইন মোশন ইন্ডিয়া-র কর্তারা সংস্থার কর্মকাণ্ড ব্যাখ্যা করতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানেই তথ্য আদান-প্রদান নিয়ে সাঙ্কেতিক মোড়কের জটিলতার প্রসঙ্গও ওঠে। সংস্থার ডিরেক্টর (এন্টারপ্রাইজ সেলস) সুনীল লালবাণী বলেন, “আমরা এ নিয়ে সরকারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছি। তবে এটা প্রযুক্তিগত সমস্যা। অন্যদের ক্ষেত্রেও কিছু পরিষেবায় একই সমস্যা রয়েছে। সরকারও সেটা বুঝতে পারছে। আমরা সরকারের টেলিকম নীতির জন্য অপেক্ষা করছি।” এর মধ্যে চালু এবং নতুন পরিষেবা বা ফোন বাজারে আনার যে সব পরিকল্পনা তাঁদের রয়েছে, সেগুলির উপরই আপাতত জোর দিচ্ছেন তাঁরা।
তবে লালবাণী এ কথাও বলেন, “দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে আমরা সব রকম সহায়তা করতে প্রস্তুত।”
উল্লেখ্য, সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলি ব্ল্যাকবেরি পরিষেবায় কথাবার্তা বা তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে সাঙ্কেতিক মোড়ক খুলতে নাজেহাল হওয়ায় দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল কেন্দ্র। সংস্থার পরিষেবায় নজরদারি করা সম্ভব না-হলে দেশে ব্ল্যাকবেরি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছিল তারা। মূল সমস্যা ছিল, ‘এন্টারপ্রাইজ ই-মেল সার্ভিস’ (ব্ল্যাকবেরি মারফত কোনও সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মীকে দেওয়া ই-মেল পরিষেবা)-র ক্ষেত্রে। এর পর অবশ্য এ বছরের গোড়ায় নিরাপত্তার স্বার্থে ব্ল্যাকবেরি ফোনের ‘মেসেঞ্জার সার্ভিস’ (এক ব্ল্যাকবেরি ফোন থেকে আর এক ব্ল্যাকবেরিতে এসএমএস বা বার্তা পাঠানোর পরিষেবা) গোয়েন্দাদের নজরদারির জন্য খুলে দেওয়ার কথা জানায় রিম। এ জন্য মুম্বইয়ে প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও তৈরি করা হয়।
লালবাণী এবং সংস্থার অন্যতম কর্তা অদ্বৈত বৈদ্য আরও জানান, শুধু এন্টারপ্রাইজ বা সংস্থাগত পরিষেবাই নয়, সাধারণ গ্রাহকের বাজার ধরতেও নানা কৌশল নিচ্ছে সংস্থা। গুণগত মানের সঙ্গে আপস না-করেও এক দিকে যেমন কম দামি ব্ল্যাকবেরি ফোন বাজারে আনবে রিম, তেমনই দ্বিতীয় শ্রেণির শহরেও বেশি করে পা রাখবে সংস্থা। তাদের মতে, উন্নয়নের হাত ধরে ছোট শহরের বাসিন্দাদের আয় বাড়ছে। ইন্টারনেট-সহ মোবাইলে বাড়তি পরিষেবা পাওয়ার আগ্রহও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। এখন ৮০টি শহরে প্রায় ৪০০০টি বিপণি রয়েছে সংস্থার। নতুন বাজার ধরতে ১২-১৫ মাসে তা ৮০০০-এ নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সংস্থার।
বর্তমানে ভারতের ব্ল্যাকবেরি পরিষেবার গ্রাহক প্রায় ১০ লক্ষ। সংস্থার দাবি, দেশের স্মার্টফোনের বাজার যে হারে বাড়ছে (৮০-১০০%), তার চেয়ে রিম-ইন্ডিয়ার ব্যবসা বৃদ্ধির হার বেশি। সেই প্রবণতা বজায় থাকলে আগামী বছরেই গ্রাহক সংখ্যা দ্বিগুণ করার ব্যাপারে আশাবাদী কর্তারা। |