অনিচ্ছুক জমিদাতাদের আন্দোলনের জেরে ফের বাধা পড়ল শিলিগুড়ির উপকণ্ঠে কাওয়াখালি উপনগরীর কাজে।
শনিবার তৃণমূল-প্রভাবিত ‘পশ্চিমবঙ্গ কৃষিজীবী জীবন-জীবিকা রক্ষা কমিটি’র সদস্যদের একাংশ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দু’টি বেসরকারি হাসপাতালের জন্য চিহ্নিত জমির সীমানা-খুঁটি ভেঙে দেন বলে অভিযোগ। তাঁরা জানিয়ে দেন, জমি ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত ওই এলাকায় কোনও কাজ করতে দেবেন না। নিরুপায় হয়ে দু’টি হাসপাতালের তরফে নিযুক্ত ঠিকাদারেরা কাজ বন্ধ করে দেন। ওই ঘটনায় ‘অস্বস্তি’তে পড়েছেন ‘শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’র (এসজেডিএ) চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “শীঘ্রই এসজেডিএ-র বোর্ড মিটিং ডেকে সমস্যাটি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বোর্ড মিটিংয়ে যা সিদ্ধান্ত হবে, তা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হবে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো পদক্ষেপ করব।”
এ ব্যাপারে ‘পশ্চিমবঙ্গ কৃষিজীবী জীবন জীবিকা রক্ষা কমিটি’র নেতা তথা ‘কাওয়াখালি থিকনিকাটা ল্যান্ড ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক মণিমোহন বিশ্বাস বলেন, “বামেদের আমলে ওই উপনগরীর জন্য জমি নেওয়া হয়। তখন থেকেই আমরা অনিচ্ছুকদের নিয়ে
কমিটি গড়ে লড়াই করছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত ওই জমিতে নির্মাণের কাজ করা হলে মেনে নেওয়া হবে না।” অনিচ্ছুক জমিদাতাদের কমিটির তরফে এলাকার তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্য মহিলা কমিশনের সদস্য জ্যোৎস্না অগ্রবাল বলেন, “এ ব্যাপারে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব এবং এসজেডিএ-র চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করব। সমাধানসূত্র মিলবে বলে আমরা আশাবাদী।” |
যে দু’টি সংস্থা হাসপাতাল গড়ছে, তার একটির চিফ ম্যানেজার তাপস ঘোষ বলেন, “জমি দেওয়া নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তির বিষয়টি মেটানো এসজেডিএ-এর কাজ। তা না হলে আমাদের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এখানে হাসপাতাল হলে অনেক বাসিন্দা উপকৃত হবেন, সেটাও ভেবে দেখা দরকার।” প্রায় একই রকম বক্তব্য অন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরও।
৩০৬ একরের উপরে প্রস্তাবিত কাওয়াখালি উপনগরী প্রকল্পের কাজ থমকে যাওয়া অবশ্য নতুন কিছু নয়। ২০০৬ সালে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য শিলিগুড়ি শহরের উপরে চাপ কমাতে ওই উপনগরীর কাজ শুরু করতে উদ্যোগী হন। সরকারি সূত্রের খবর, ওই এলাকায় কৃষিজমির পরিমাণ খুব বেশি ছিল না। কিন্তু প্রস্তাবিত প্রকল্পের মধ্যে প্রায় ১৫০ কাঠায় বসবাসকারী বাসিন্দারা জমি দিতে বেঁকে বসেন। কয়েকজন উচ্চ আদালতে ব্যক্তিগত ভাবে মামলাও করেছেন। পাশাপাশি, অশোকবাবু মন্ত্রী থাকার সময়েই অনিচ্ছুক জমিদাতারা কমিটি গড়ে লাগাতার আন্দোলনে নামেন। তাতে সামিল হন তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতারাও। ‘পুনর্বাসন প্যাকেজ’ তৈরির পরে উপনগরীর কাজ শুরু হলেও
কমিটির বাধায় তা তিন দফায় বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যে তৃণমূল নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান হন শিলিগুড়ি বিধায়ক রুদ্রনাথবাবু। কিছু দিন পরে সেখানে একটি বেসরকারি হাসপাতাল তৈরির কাজ শুরু হয়। গত জুলাই মাসে ওই হাসপাতালের কাজ বন্ধ করে দেন
কমিটির লোকজন। সে সময়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তার পরে প্রকল্প এলাকায় আরও দু’টি হাসপাতালের কাজ শুরুর জন্য নির্দেশ দেয় এসজেডিএ। সেই মতো জমিতে পাঁচিল দেওয়ার জন্য কংক্রিটের খুঁটি পোঁতা হয়।
এসজেডিএ সূত্রের খবর, এ দিন সেই খুঁটিই ভেঙে দেওয়া হয়। কমিটির সদস্যেরা বেশ কিছুক্ষণ বিক্ষোভ দেখানোর পরে ঠিকাদারেরা কাজ বন্ধ করে চলে যান।
ঘটনার কথা শুনেছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোকবাবুও। তিনি বলেন, “আমরা বহু বার চেষ্টা করে উপনগরীর কাজ অনেকটা এগিয়েছিলাম। ওই প্রকল্প হলে শিলিগুড়ির সার্বিক উন্নতি ত্বরান্বিত হবে। সেটা অনেকেই তখন বোঝেননি। তৃণমূলের তরফেই কাজ করতে দেওয়া হয়নি। এখন ক্ষমতায় রয়েছেন যাঁরা, তাঁদের এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। মানুষ তো সবই দেখছেন। সবই বুঝছেন।”
কাজে এ দিন কলকাতায় ছিলেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী। তিনি বলেন, “রবিবার শিলিগুড়ি ফিরে বিশদে ব্যাপারটা খোঁজ নেব।” |