আডবাণীর যাত্রা সফল করতে আসরে মোদী
যেখান থেকে যাত্রা শুরু করার কথা ছিল, প্রায় দেড় ডজন রাজ্য ঘুরে আগামিকাল সেই গুজরাতেই রথ নিয়ে ঢুকবেন লালকৃষ্ণ আডবাণী।
যাত্রা শুরু করাতে না পারার ‘ব্যর্থতা ঝেড়ে ফেলে রথযাত্রাকে ‘সফল’ করতে আসরে নেমে পড়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি নেতা তথা মোদীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত পুরুষোত্তম রূপালা জানিয়েছেন, আডবাণীর রথ কাল যখন মহারাষ্ট্র ছেড়ে গুজরাতের মাটিতে পা রাখবে, তখন তাকে বরণ করতে হাজির থাকবেন মোদী নিজে। মোদীর দূত হয়ে আজও রথের সঙ্গে যোগ দিতে পৌঁছে গিয়েছেন রূপালা নিজে। রথ গুজরাতের মাটি ছোঁওয়ার আগেই আডবাণীর কনভয়কে সাহায্য করতে পুলিশ-অ্যাম্বুল্যান্স ইত্যাদি পাঠিয়ে দিয়েছেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। আগামী দু’দিন রথ গুজরাতে থাকবে। ওই পুরো সময়টাই রথের সঙ্গে থাকবেন মোদী।
এ সবের ছোঁওয়া লেগেছে বিজেপির অন্দরমহলেও। রথ ঘিরে এখন সার্বিক ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে মরিয়া বিজেপির সব পক্ষ। দুর্নীতি থেকে মূল্যবৃদ্ধি বা ইউপিএ-র অভ্যন্তরে শরিকি দ্বন্দ্ব সব মিলিয়ে জেরবার মনমোহন সরকারের উপর চাপ বাড়ানোর এমন ‘সুযোগ’ হাতছাড়া করতে রাজি নন এনডিএ-র বৃহত্তম শরিক দলের কোনও নেতাই। যে কারণে আজ দীর্ঘ দিন পরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীকে সরাসরি আক্রমণও করেছেন আডবাণী। রথযাত্রায় মহারাষ্ট্র সফরে গিয়ে কালো টাকা উদ্ধার, দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মতো বিষয়ে সনিয়া গাঁধী ‘চুপ’ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
মোদী যেমন আডবাণীর রথ ঢোকার আগেই রাজ্য জুড়ে সাজ সাজ রব তুলে দিয়েছেন, তেমনই আডবাণীও মোদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। শুধু তা-ই নয়, দলে নেতৃত্ব নিয়ে টানাপোড়েনের কথাও মানতে নারাজ নেতারা। আডবাণী তো আজ স্পষ্টই বলেছেন, “আমার দলে নেত্ত্বের কোনও সঙ্কট নেই। এই যাত্রার সঙ্গে ব্যক্তি আডবাণীর কোনও সম্পর্ক নেই।” পাশাপাশি গুজরাতে পা রাখার আগেই মোদীর পক্ষে দাঁড়িয়ে আডবাণী বলছেন, লোকায়ুক্ত নিয়ে মোদীকে কী ভাবে ‘হেনস্থা’ করা হয়েছিল। রথ গুজরাতে ঢোকার আগেই বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীও বলছেন, ‘‘মোদী মোটেই সাম্প্রদায়িক নন। কোনও মুখ্যমন্ত্রী দাঙ্গার নির্দেশ দিতে পারেন? সংবাদমাধ্যম এমন ধারণা তৈরি করেছে, যে মোদী যেন সব সময় হাতে স্টেনগান নিয়ে ঘোড়েন!”
অথচ ‘ঐক্যে’র এই ছবিটাই এক রকম উধাও হয়ে গিয়েছিল বিজেপি শিবিরে। নরেন্দ্র মোদীর গুজরাত থেকে আডবাণীর রথ যাত্রা শুরু করবে, এমনটা এক রকম স্থিরই ছিল। কিন্তু রথের যাত্রা শুরুর আগেই মোদী ‘সদ্ভাবনা মিশন’-এর মাধ্যমে নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু করায় আডবাণীর সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বেড়ে যায়। পাল্টা হিসেবে রথযাত্রার ‘কাল’ না বদলালেও তার উদ্বোধনের ‘স্থান’ এবং ‘পাত্র’ বদলে ফেললেন আডবাণী।
মঞ্চে আডবাণী। ঠানেতে পৌঁছনোর পর। শনিবার পিটিআইয়ের ছবি।
এনডিএ জোটের অন্যতম শরিক নেতা তথা বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে দিয়ে বিহার থেকে রথের যাত্রা শুরু করালেন তিনি। যে নীতীশের সঙ্গে মোদীর ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা শুধু এনডিএ নয়, তার বাইরেও আলোচ্য!
বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, দলের মধ্যে মোদী যে ভাবে রথযাত্রার বিরোধিতা করেছিলেন, দিল্লিতে জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে না এসে নিজের অসন্তোষকে প্রকাশ্যে এনেছিলেন, তাতে বিজেপি নেতৃত্ব তো বটেই, ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন আরএসএস নেতারাও। দলের ঊর্ধ্বে মোদীর নিজেকে তুলে ধরার এই প্রয়াস যে তাঁরা ভাল চোখে দেখছেন না, সঙ্ঘ পরিবারের কাছ থেকে সে ব্যাপারে বার্তা পাওয়ার পরেই মোদী এখন আডবাণীর রথযাত্রা গুজরাতে সফল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন।
তবে নেতৃত্ব নিয়ে বিতর্ক যে বিজেপিকে একেবারে পিছু ছেড়েছে, তা নয়। গত কাল রাতে মুম্বই পৌঁছয় আডবাণীর রথ। রাতে এক জনসভাতে রথ পৌঁছনোর আগেই সভামঞ্চের ঠিক পাশে একটি পেল্লাই পোস্টার সাঁটা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নতমস্তক ছবি। পাশে আডবাণী ও মোদীর ছবি। আডবাণীর ছবির উপরে লেখা ‘লৌহপুরুষ’। মোদীর উপরে লেখা ‘বিকাশ পুরুষ’। মনমোহনের ছবির তলায় লেখা, ‘কেন দুর্বল প্রধানমন্ত্রীকে সহ্য করছেন?’ আর আডবাণী ও মোদীর ছবির তলায় লেখা, ‘বরং শক্তিশালী প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নিন।’ আডবাণী সভায় পৌঁছনোর আগেই সেই পোস্টার চোখে পড়ে বেঙ্কাইয়া নায়ডুর। তৎক্ষণাৎ সেটি নামিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজেপি নেতারা বলছেন, স্থানীয় স্তরের নেতাদের কারসাজি। আবার এক নেতার কথায়, “গুজরাতে রথ ঢোকার আগে দলের অনেকের মনের কথাই পোস্টারে যত্ন করে লেখা ছিল!”
আডবাণীর সফরসঙ্গী এক বিজেপি নেতার বক্তব্য, দল চাইলে আডবাণী যে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হতে রাজি, তা তো তিনি নিজেই জানিয়েছেন। এ দিকে মোদীও নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। আগামী বছর গুজরাতে বিধানসভা নির্বাচন। সেটা পার করেই কেন্দ্রীয় স্তরে নিজেকে তুলে ধরার চেষ্টা চালাবেন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী। সে কারণেই আডবাণীর রথযাত্রার আগেই নিজের জন্মদিনে শুরু করেছেন ‘সদ্ভাবনা মিশন’। যাকে এখন গুজরাতের জেলায় জেলায় ছড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রতি জেলায় একদিন করে গিয়ে উপবাসেও বসছেন মোদী। আগামিকাল আডবাণীর রথ যেখান দিয়ে ঢুকবে, সেই জেলাতেই ক’দিন আগে সাড়ে আট হাজার মানুষের সঙ্গে অনশনে বসেছিলেন মোদী। সেখানে কংগ্রেস আমলের দাঙ্গা নিয়ে কথা বললেও নিজের জমানার দাঙ্গা নিয়ে অবশ্য টুঁ শব্দটি করেননি। সব মিলিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে নিজেকে নেতা হিসেবে প্রমাণ করার আগে রাজ্যে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে নেওয়া।
আডবাণীর অবশ্য এ সমস্যা ততটা নেই। এনডিএ-র সবথেকে বড় শরিক নীতীশ কুমারের সমর্থন ঝুলিতে ভরেই কাল মোদীর রাজ্যে পা রাখবেন আডবাণী। যে নীতীশ বিহারের ত্রিসীমানায় ঢুকতে দেননি মোদীকে! শুধু তাই নয়, উদ্ধব ঠাকরে বা এনডিএতে সদ্য যোগ দেওয়া রামদাস আটাওয়ালেও আডবাণী সভায় গিয়ে তাঁর নেতৃত্ব স্বীকার করছেন। আডবাণী নিজেও বলছেন, ‘‘এনডিএ শরিকদের পেয়ে আসলে আমার যাত্রার শক্তি বাড়ছে।” বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, “এই যাত্রার মাধ্যমে আডবাণী সর্বভারতীয় স্তরে নিজের গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছেন। গোটা দেশে দুর্নীতি বিরোধী মুখ হয়ে উঠছেন। কর্নাটকে দাঁড়িয়ে ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু মোদী এখনও গুজরাতেই সীমাবদ্ধ। নিজের ভোটারদের কাছেই ভাবমূর্তি শোধরাতে ব্যস্ত তিনি। তবে শেষ কথা তো বলবে নাগপুর। ফলে তাড়াহুড়ো করে শেষ কথা বলার সময় এখনও আসেনি।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.