মাটির মানুষ...
ক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা কোনও দিন সে অর্থে আলোকবৃত্তে আসেননি। অথচ, তাঁরা গোটা জীবন ধরে জেলার মনন এবং সাংস্কৃতিক মানচিত্রকে রঙিন করে তুলেছেন। মাটি থেকে উঠে আসা সেই সব মানুষের কথা।
পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরে জামবাদ। পুঞ্চা ব্লকের এই গ্রামেরই ভূমিপুত্র সৃষ্টিধর মাহাতো। স্কুলের পাঠ গ্রামেই। পরে রাজনোওয়াগড় থেকে এনট্রান্স। এর পরে রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে কলা বিভাগে ভর্তি হওয়া। তবে ডিগ্রি আর নেওয়া হয়নি। ১৯৭৪ সালে কর্মজীবনের শুরু জমি জরিপ বিভাগে। নানা জায়গা ঘুরে কর্মজীবনের সমাপ্তি পুরুলিয়ায়। ফলে, পুরুলিয়া শহরের চাইবাসা রোডে আরও একটা আশ্রয়। কিন্তু ৪০-৫০ কিলোমিটার দূরের সেই জন্মগ্রাম, জামবাদ সৃষ্টিধরের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হয়ে থেকে গিয়েছে। সপ্তাহান্তে, মাসান্তে, ছুটির দিনে সেখানে একবার ছুটে যেতেই হয়।
কিন্তু কেন?
নিজস্ব চিত্র।
‘‘ওখান থেকেই যে আমার যাত্রা পথের নিশেন (নিশান) উঠেছিল। এ ছাড়া নগরে তো গ্রাম নাই। আমার যে প্রান্তবাসী, গ্রামজীবন নিয়েই কাজ। আমি যে ‘টেঁসফুল’। তাই আমি ফুটে বেরাই, ঝরে যাই বনে-বাদাড়ে।’’ অদ্ভুত রূপকাশ্রিত দর্শন গবেষকের। দেশজ সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসার গভীরতা এমনই যে নিজের ছদ্মনামটিও ঠিক করেছেন অপরিচিত টেঁসফুলের নামে। মানভূমের লোকজীবনের প্রায় লুপ্ত সুরকেই তিনি বাঁচিয়ে রাখতে চান নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের কণ্ঠে। আর সেই আঞ্চলিক সঙ্গীতের টান এমনই যে, জামবাদ গ্রামের আঞ্চলিক সুর-কন্যা সুলেখা পরামাণিককে ভাইপোর বউ হিসাবে পরিবারের সদস্য করে নিয়েছেন। লোকসঙ্গীতশিল্পী বেলারানি মাহাতোর সঙ্গে বিয়ে দিয়েছেন ছেলের। আশা, এতে করে সঙ্গীতের পরম্পরা সুরক্ষিত থাকবে। আর এমন সবের জন্যই বোধহয় মানুষটি সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবী লেখেন, ‘সৃষ্টিধর মানভূম সংস্কৃতির আপন দুলাল...’। জমি জরিপের কাজের সঙ্গে সঙ্গেই নিরন্তর চলেছে লোকসংস্কৃতির চর্চা। লিখে ফেলেছেন খেড়িয়া-শবরদের জন্য প্রাইমারি বই। যেখানে একই রকম দেখতে বর্ণগুলিকে সাজিয়েছেন এক লাইনে। যমন ব-র-ক-ধ-ঝ। অ্যাডাল্ট এডুকেশনে যার আন্তর্জাতিক মান্যতা রয়েছে। যদিও এ তথ্য অজ্ঞাত সৃষ্টিধরের কাছে। দ্বিতীয় বই ‘সাতুল’। বিষয় মানভূমের লোককথা। ভাষা, কুড়মালি। মানভূমের প্রান্তবাসী এক জনগোষ্ঠীর ভাষা। সাতুল মানে সাত। বইয়ে আছে সাতটি গল্প। তৃতীয় গ্রন্থ ‘টুসু গানের চৌডল’। সুদৃশ্য সিংহাসন। যাতে বসেন টুস বা তুষলাদেবী। ভাসানের আগে মহিলারা তাঁদের টুসু মা বা টুসু কন্যাকে নিয়ে চৌড়ল-সহ ভাসান দেন। আপাতত শেষ বই, ‘লোকায়ত গণমাধ্যম।’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.