আয়ের চেয়ে ব্যয় এমনিতেই অনেক বেশি। উপরন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এক পয়সাও মাসুল বাড়ানো যায়নি। উল্টে চুরির বহর ও অন্যান্য অপচয় বেড়েই চলেছে।
এই অবস্থায় লোকসানের ভার অন্তত কিছুটা লাঘব করতে বিদ্যুৎ চুরি ও অপচয় যতটা সম্ভব ঠেকাতে চাইছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। আর সেই উদ্দেশ্যেই তারা এক প্রাক্তন আইপিএস-কে মাথায় রেখে গঠন করেছে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। এ ক্ষেত্রে কমিটির ভূমিকা কী হবে?
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের খবর: কমিটি মূলত সংস্থার রাজস্ব আদায়ে নজরদারি করবে। ঠিক করবে, রাজ্যস্তরে বিদ্যুৎ চুরি ও সংস্থার অভ্যন্তরীণ অপচয় কমাতে কী কী করা দরকার। সংস্থার কোনও কর্মীর বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলা বা অপচয়ের অভিযোগ উঠলে কমিটির সদস্যেরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন, এমনকী দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তির সুপারিশও।
বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থায় নবগঠিত এই ‘রেভেনিউ প্রোটেকশন কমিটি’র চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রাক্তন আইপিএস অফিসার রজত মজুমদারকে। রজতবাবু আগে সংস্থার নিরাপত্তা ও ভিজিল্যান্স-পরামর্শদাতাও ছিলেন। কমিটির সদস্য হিসেবে থাকছেন বণ্টন কোম্পানির চেয়ারম্যান রাজেশ পাণ্ডে ও প্রাক্তন বিদ্যুৎ-সচিব সুনীল মিত্র। রাজেশবাবু জানিয়েছেন, কমিটির কাজ হবে নজরদারি চালিয়ে কিছুটা হলেও রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি। কোথাও অবৈধ সংযোগ কাটতে গেলে যাতে সময়মতো পুলিশি সাহায্য পাওয়া যায়, সে জন্য রাজ্য প্রশাসনের সহায়তাও চেয়ে রেখেছেন তাঁরা।
কত বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে?
বণ্টন সংস্থা সূত্রের খবর, বিদ্যুৎ কিনে লাইনে সরবরাহ করার পরে প্রতি মাসে যা আয় হওয়ার কথা, রাজস্ব-তহবিলে জমা পড়ছে তার ১৫০-১৮০ কোটি টাকা কম! সংস্থার অভ্যন্তরীণ তদন্তে জানা গিয়েছে, প্রতি মাসে ওই টাকার বিদ্যুৎই সরবরাহ লাইন থেকে স্রেফ চুরি হয়ে যাচ্ছে। কী ভাবে? নিজস্ব তদন্তে সংস্থার কর্তারা জানতে পেরেছেন, হুকিং-ট্যাপিং ইত্যাদি তো আছেই, তার উপরে বিভিন্ন জায়গায় মিটারে নানান কারচুপি চলছে। এমন ভাবে, যাতে প্রচুর বিদ্যুৎ টানা হলেও মিটারে ধরা পড়ে না!
এই ভাবে রাজ্য জুড়ে যথেচ্ছ বিদ্যুৎ চুরির জেরে বণ্টন কোম্পানির ক্ষতির অঙ্ক গিয়ে দাঁড়িয়েছে গড়ে ২৮ শতাংশে! বিশেষ সমস্যা হচ্ছে কিছু জেলাকে নিয়ে। ওই সব জেলায় ক্ষতি ৫২%-৫৫%! সংস্থার হিসেবে, বিদ্যুৎ চুরির নিরিখে প্রথম সারিতে রয়েছে বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ ও দুই ২৪ পরগনা। সদ্যগঠিত ‘রেভেনিউ প্রোটেকশন কমিটি’কেও তথ্যটি জানানো হয়েছে।
কিন্তু বিদ্যুৎ চুরি বা অন্যান্য কারচুপি ঠেকাতে বণ্টন কোম্পানির তো আলাদা বিভাগই রয়েছে। তা সত্ত্বেও বাড়তি একটা কমিটি কেন?
বিদ্যুৎ দফতর সূত্রের দাবি: ওই বিভাগটি এখন কার্যত নিষ্ক্রিয়। তাকে সক্রিয় করাটাও কমিটির অন্যতম কাজের মধ্যে পড়ছে। |