শিক্ষাকে রাজনীতি-মুক্ত করার জন্যই অর্ডিন্যান্স আনা হয়েছে বলে রাজ্য সরকারের দাবি। কিন্তু ওই অর্ডিন্যান্স তৈরির পদ্ধতিটাই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং স্বৈরতান্ত্রিক বলে অভিযোগ উঠল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তিদের মতামত না-নিয়েই যে-ভাবে রাজ্য সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন পরিবর্তন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্স তৈরি করেছে, তাকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বলেই মনে করছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন ‘জুটা’। পশ্চিমবঙ্গ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠন (ওয়েবকুটা) এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনও (কুটা) এই অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতা করছে। ওয়েবকুটার মতে, অর্ডিন্যান্সটি আধুনিক প্রশাসনের পরিপন্থী। আর কুটা মনে করছে, রাজ্য সরকার পিছনে হাঁটতে চাইছে।
রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আইন পরিবর্তন সংক্রান্ত অর্ডিন্যান্সের সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে শুক্রবার। নতুন আইনে সেনেট, সিন্ডিকেট, কোর্ট, এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থায় ছাত্র, শিক্ষাকর্মীদের কোনও প্রতিনিধি রাখার সংস্থান নেই। শিক্ষক সংগঠনগুলির আপত্তি মূলত এই কারণে।
এ দিনই জুটা-র বৈঠকে নতুন অর্ডিন্যান্স নিয়ে আলোচনা হয়। পরে সংগঠনের সম্পাদক পার্থপ্রতিম বিশ্বাস বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত কারও সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই যে-ভাবে অর্ডিন্যান্স তৈরি হয়েছে, তা আসলে সরাসরি সরকারি হস্তক্ষেপ। এ ভাবে আসলে সরকার ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ করছে।”
নতুন অর্ডিন্যান্সকে ‘প্রতিনিধিত্বমূলক নির্বাচিত ব্যবস্থা’ থেকে ‘বিচ্যুতি’ হিসেবে চিহ্নিত করছে জুটা। সেই সঙ্গে যাদবপুরের কোর্ট থেকে জাতীয় শিক্ষা পরিষদের প্রতিনিধি বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা করছে ওই সংগঠন। পার্থপ্রতিমবাবু বলেন, “প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই নিজস্ব চরিত্র ও বৈশিষ্ট্য আছে। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এক ধাঁচে সেনেট, সিন্ডিকেট, কোর্ট, কাউন্সিল গড়া হলে সেই বৈশিষ্ট্য আর থাকবে না।” শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার সঙ্গে জড়িত নানা স্তরের মানুষের মতামত নিয়ে অর্ডিন্যান্সে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের সুপারিশ করে তাঁরা রাজ্যপাল ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাবেন বলেও জানান সম্পাদক। অর্ডিন্যান্সের বিরোধিতায় বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ করবেন তাঁরা। তবে তা পঠনপাঠনের ক্ষতি করে নয় বলেই জানিয়েছেন পার্থপ্রতিমবাবু।
ওয়েবকুটা আবার এই অর্ডিন্যান্সকে ‘স্বৈরতান্ত্রিক’ বলে চিহ্নিত করেছে। সংগঠনের সম্পাদক তরুণ পাত্র বলেন, “আধুনিক প্রশাসনে সব স্তরের প্রতিনিধিত্বকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু এই অর্ডিন্যান্সে তাকে উপেক্ষা করা হল। এ তো গণতন্ত্র নয়, এটা স্বৈরতন্ত্র।” শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অবশ্য এই সব অভিযোগ নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি। |