‘বাম গণ্ডি’র বাইরেও ঐক্যের উদ্যোগ ফ্রন্টে
বৃহত্তর বাম ঐক্যকে ‘বাম’ গণ্ডির বাইরে প্রসারিত করতে সক্রিয় হল বামফ্রন্ট শরিকদের একাংশ। ফ্রন্টের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক চায়শুধু বামপন্থী নয়, কংগ্রেস এবং বিজেপি-বিরোধী অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বৃহত্তর ফ্রন্টে সামিল হোক। যেমন জনতা দল (সেকুলার) বা জনতা দল (ইউনাইটেড)। সিপিআইয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ সে প্রস্তাব দিয়েও দিয়েছেন। তবে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। সিপিআইয়ের বক্তব্য, এ ধরনের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হলে সর্বভারতীয় স্তরে আলোচনা করতে হবে। তার আগে কোনও সিদ্ধান্ত জানানো সম্ভব নয়।
বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্টের বিপুল পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করতে এবং ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র উপায় খুঁজতে সিপিএম-সহ ফ্রন্ট শরিকেরা তৎপর হয়েছে। শরিক নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, বিগত বামফ্রন্ট সরকার পরিচালনার অভিমুখ শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের দিক থেকে ধীরে ধীরে ধনীদের
দিকে সরে গিয়েছিল। বিশ্বায়নের নিত্য নতুন আক্রমণের বিরুদ্ধেও পর্যাপ্ত সংগ্রাম গড়ে তোলা হয়নি। এই দুয়ের যোগফলেই ভোটে বিপুল পরাজয়। এখন ফের শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের আস্থা ফিরে পেতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে। কিন্তু বামফ্রন্টের বাইরে-থাকা ছোটখাটো বাম দলগুলিকে বাদ দিয়ে প্রকৃত ‘বামপন্থী সংগ্রাম’ সম্ভব নয় বলে মনে করছেন শরিক নেতৃত্বের ওই অংশ। সিপিআই যেমন ইতিমধ্যেই ফ্রন্টের বাইরের বাম দলগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করছে।
কিন্তু ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোকবাবু মনে করেন, ফ্রন্টের প্রসার কেবলমাত্র ‘বাম’ গণ্ডিতেই আবদ্ধ রাখা উচিত নয়। জরুরি অবস্থার সময় যেমন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে জয়প্রকাশ নারায়ণের নেতৃত্বে ‘কমিউনিস্ট-সমাজতান্ত্রিক-গণতান্ত্রিক-দেশপ্রমিক’ শক্তিগুলির সার্বিক জোট আন্দোলনে নেমেছিল, বর্তমান সময়ের আশু দাবিও তা-ই। কিন্তু ওই জোটে জনসঙ্ঘ ছিল। যা ভেঙে পরবর্তী কালে বিজেপি-র জন্ম। এখনকার বিজেপি-কে নিয়ে ফ্রন্ট গড়ার কথা মোটেই ভাবছেন না অশোকবাবুরা। তিনি বলেন, “বিজেপি-র জন্মের পর তার সাম্প্রদায়িক চরিত্র গোটা দেশ দেখেছে। আবার কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্রাজ্যবাদী আক্রমণ, মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতিও মানুষ দেখেছে। কংগ্রেস, বিজেপি-কে বাদ দিয়ে নতুন ফ্রন্ট গড়তে চাই। যার লক্ষ্য হবে সাম্রাজ্যবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতাদুই বিপদের বিরুদ্ধেই লড়াই করা। ওই ফ্রন্টে কেবল কমিউনিস্ট বা বামপন্থী নয়, সমাজবাদী, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক দলগুলিকেও সামিল করতে চাই। জেডিএস, জেডিইউ ইত্যাদি দল থাকতে পারে।” কিন্তু জেডিইউ তো বিজেপি জোট এনডিএ-র শরিক? অশোকবাবুর জবাব, “তাতে কী? ওরা তো বিজেপি-র মধ্যে নেই!”
সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি ফ্রন্ট গড়ে লড়াইয়ের তত্ত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই ফ্রন্ট লোকসভায় মুখ থুবড়ে পড়েছিল। অশোকবাবুর কথায় স্পষ্ট, তাঁরা কারাটের পথেই হেঁটে নতুন করে ওই ব্যাপারে উদ্যোগী হতে চান।
সিপিআইয়ের সঙ্গে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে কথা হয়েছে অশোকবাবুর। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার বলেন, “দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে অশোকবাবুর ওই প্রস্তাব আমাদের সর্বভারতীয় স্তরে আলোচনার জন্য পৌঁছে দেব। তার আগে সিদ্ধান্ত হবে না। কিন্তু বামফ্রন্টের বাইরে-থাকা বামপন্থী দলগুলিকে যুক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। ওই কাজটা চলতে থাকুক। বাকিটা নিয়ে আলোচনা হোক।”
মঞ্জুবাবুর আরও যুক্তি, “অ-বামপন্থী ওই দলগুলির চরিত্র তো একটু তরল। বামপন্থীরা শক্তিশালী ঐক্য গড়তে পারলে ওরা আমাদের সঙ্গে আসবে। নয়তো আসবে কি না, সংশয় আছে।”
তবে ফ ব-র প্রস্তাব বা সিপিআইয়ের উদ্যোগ, দুই ক্ষেত্রেই বামফ্রন্টের বড় শরিক সিপিএমকে নিয়ে সমস্যা আছে। সিপিএমকে বাদ দিয়ে বাম ঐক্য সম্ভব বলে সিপিআই মনে করে না। কিন্তু যে বাম দলগুলির সঙ্গে সিপিআই যোগাযোগ করছে, তাদের কারও কারও বক্তব্যসিপিএমের সঙ্গে একমঞ্চে তারা থাকবে না। তারা মনে করে, সিপিএম বিশ্বায়নের নীতিতে সরকার চালিয়েছে বলেই এ রাজ্যে বামফ্রন্টের হার হয়েছে। এখন তারাই আবার এক মঞ্চ থেকে ওই নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করলে জনগণ সেটাকে ‘কৌশল’ বলে ভাবতে পারে। আর ফের সরকার দখল করা গেলে আবারও যে সিপিএম বিশ্বায়নের নীতিতেই চলবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। এমনকী, সিপিএমকে নিয়ে এই সংশয় রয়েছে বাম শরিকদের একাংশেরও।
অর্থাৎ, বৃহত্তর বাম ঐক্যের উদ্যোগ গতি পেলেও তার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা এখনও বিতর্কিতই!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.