খুশিতে বাঁচুন স্বাভাবিক ছন্দের খোঁজে

রীরের নড়াচড়ার কিছু স্বাভাবিক ছন্দ রয়েছে। কোনও ভাবে সেই ছন্দ নষ্ট হলে মুশকিল। তখন প্রাথমিকে ফিরে যেতে হয়। যা জিমের বাইরে না গেলে সম্ভব নয়। কী ভাবে?
স্কোয়াট (হাঁটু মুড়ে বসা), লান্জ (লাফানো), শরীর বাঁকানো বা নিচু হয়ে মাটি থেকে কিছু তোলা, ওজন নিয়ে হাঁটা, ঠেলা, টানা ও খুব দ্রুত কিছু করা বিশেষজ্ঞদের মতে সুস্থ শরীরকে এই সাত ধরনের নড়াচড়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়। এগুলি স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য জরুরি। অনেক মনে করেন, মানুষ আদিযুগে এই সাতটি নড়াচড়ার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছিল। যেমন, ঠিকমতো স্কোয়াট করতে না পারলে আদি মানব আগুন জ্বালাতে পারত না। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মে প্রার্থনা করার সময়ে, শুদ্ধ হওয়ার সময়ে এবং নানা রোগের চিকিৎসার সময়ে নানা ভাবে স্কোয়াট করতে হয়। আদিযুগে তো আর রাস্তা ছিল না।
ঠিকমতো লান্জ করতে না পারলে আদিম মানুষ চলাফেরা করতে পারত না।
আমরা সেই আদিম জীবনযাত্রা থেকে অনেক দূরে চলে এসেছি। কিন্তু এই সাতটি নড়াচড়া ঠিকমতো না হলে এখনও চোট-আঘাতের সমস্যা হতে পারে। যেমন, বাড়িঘর তৈরির শ্রমিক, নার্স ও শিশুদের বাবা-মা ঠিকমতো বেঁকতে না পারলে সমস্যা হয়। ক্রীড়াবিদ্রা ঠিকমতো লান্জ করতে না পারলে হাঁটুতে আঘাত লাগতে পারে, পড়েও যেতে পারেন। বয়স্ক মানুষদের কোমরে, হাড়ে চোট লাগতে পারে। আধুনিক শহুরে জীবনে স্বাভাবিক নড়াচড়া অনেক কমে গিয়েছে। ফলে এই কাজে প্রয়োজনীয় পেশিগুলির চর্চা কমে গিয়েছে। অনেকে জিমে যান। কিন্তু এতে মন্দই বেশি হচ্ছে। অধিকাংশ জিমে কিন্তু শরীরের এই স্বাভাবিক নড়াচড়া করার ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার চেষ্টা হয় না। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যাঁরা দীর্ঘ দিন জিমে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকেরই শরীরের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জিমে আলাদা ভাবে কয়েকটি পেশি নিয়ে চর্চা করা হয়। এতে দেহ-সৌষ্ঠবের উন্নতি হলেও শরীরের নড়াচড়ার স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। তাই জিমে থাকলে চলবে না। শরীরচর্চার নানা যন্ত্র থেকে বেরিয়ে প্রকৃতির মধ্যে যেতে হবে। তবেই দীর্ঘ দিন চোট-আঘাত মুক্ত থেকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন।
দীর্ঘ ক্ষণ অফিসে বসে কাজ করলে স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে যে পেশিগুলি প্রত্যক্ষ ভাবে স্বাভাবিক নাড়াচড়ার জন্য দায়ী তাদের বদলে পরোক্ষ পেশিগুলিই সক্রিয় হয়ে ওঠে। জিমে আবার এই পরোক্ষ পেশিগুলিরই চর্চা বেশি হয়। তা ছাড়া এই পেশিগুলিই শরীরচর্চায় আগে সাড়া দেয়। শিশুদের হামাগুড়ি দেওয়া থেকে হাঁটতে শেখা সবই মোটর প্রোগ্রাম নিয়ন্ত্রণ করে। মোটর প্রোগ্রাম ব্যবহার করে শরীর ক্ষমতা ও সঞ্চয়ের জায়গা বাঁচিয়ে রাখে। প্রত্যেকের বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য মস্তিষ্ক নানা প্রোগ্রাম তৈরি করে রাখে। তা ছাড়া বিশেষজ্ঞদের মতে মস্তিষ্ক আলাদা ভাবে প্রত্যেক পেশি চেনে না। মস্তিষ্ক একটি প্রোগ্রাম চলার সময়ে বিভিন্ন পেশির মধ্যে সমন্বয়ের কাজ করে। শরীরচর্চার মূল উদ্দেশ্য হল শরীরের স্বাভাবিক নড়াচড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রোগ্রামটি যাতে ঠিকমতো কাজ করতে পারে তা দেখা। তাই অবিলম্বে বেরিয়ে আসুন। পাড়ার পার্ক, গ্যারাজ বা যে কোনও ফাঁকা জায়গা পেলেই চলবে। খুব বেশি নয়। হাতে বড়জোর কুড়ি মিনিট লাগবে।
১) দৌড় ও হামাগুড়ি: ১৫ মিটার দৌড়নোর পরেই ১৫ মিটার হামাগুড়ি দিন। তিন মিনিট এ ভাবে করুন। বোঝার সুবিধার জন্য পার্কের বেঞ্চ বা আলোকস্তম্ভ চিহ্নিত করে রাখুন, যেখানে ভঙ্গী পাল্টে নেবেন। এতে পায়ের উপকার হয় ও ফুসফুসের জোর বাড়ে।
২) লাফানো: কোনও বক্স বা চেয়ারের উপরে লাফিয়ে উঠুন। বার ১৫ এমন করুন। ১৫ সেকেন্ড মতো বিশ্রাম নিন। আবার ১৫ বার লাফিয়ে উঠুন। এ ভাবে তিন বার করুন। এতে ‘এক্সপ্লোসিভ লেগ স্ট্রেংথ’ বাড়ে।
৩) পুশ-আপ এবং পুল-আপ: অনুভূমিক ভাবে ঝুলন্ত কোনও রড ধরে পুল-আপ করুন। সময় নষ্ট না করে মাটিতে নেমে ১৫ বার পুশ-আপ করুন। আবার উঠে ১৫ বার পুল-আপ করুন। এতে দু’দিকের কাঁধের ক্যাপসুলের বিকাশ হয় এবং স্ক্যাপুলার পেশির ভারসাম্য বজায় থাকে। আরও বেশি কিছু করতে চাইলে পুস-আপের সময়ে কোনও দেয়ালে ১২ ইঞ্চিউপরে পা রাখুন।
৪) ওয়াল স্কোয়াট: এটি ১৫ বার করতে হবে। পিঠ, নিতম্ব এবং পায়ের পেশির জোর বাড়াতে সাহায্য করে। ১৫ বার করে তিন সেটে ব্যায়াম করুন।
৫) সিঁড়িতে হামাগুড়ি: প্রথমে সিঁড়ি খুঁজে পেতে হবে। স্পাইডারম্যানের মতো ১৫-২০ সেকেন্ড হামাগুড়ি দিয়ে সিঁড়ি ভাঙুন। ৩০ সেকেন্ড মতো বিশ্রাম নিন। ৩ থেকে ৪ বার করুন। এতে তলপেটের পেশির ব্যায়াম হবে। ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ড জোরে চলবে।
৬) গাছে উঠুন: আদিম যুগে হিংস্র জানোয়ারদের থেকে বাঁচতে আদিম মানুষ গাছে উঠত। এখন দরকার পড়ে না। আমাদের শরীরের অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হয়নি। শরীরকে সুস্থ রাখতে গেলে আবার গাছে ওঠার দরকার। আগে শক্ত কোনও দড়ি ঝুলিয়ে অভ্যাস করুন। পরে সুবিধা বুঝে গাছে উঠতে শুরু করুন।
৭) জগিং করার বদলে দৌড়ন: জগিং বা ধীরে হেঁটে লাভ হবে না। জিমে দীর্ঘ ক্ষণ ট্রেড মিল করলেও বিশেষ কাজ হয় না। অল্প সময়ের জন্য দ্রুত দৌড়ন বা তাড়াতাড়ি হাঁটুন। কয়েক সেকেন্ডের জন্য বিশ্রাম নিন। চার-পাঁচ বার এমন করুন।

ছবি: পিন্টু মণ্ডল

 



অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.