লর্ডস খুব স্পেশ্যাল মাঠ। শুধু আমার কাছেই নয়, আন্তর্জাতিক স্তরে ভাল খেলতে চাওয়া যে কোনও ক্রিকেটারের কাছে। ‘লর্ডসগেট’ কেচ্ছা গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে দুঃখ দিয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় লর্ডসের প্রতিটা ঘাস যদি কথা বলতে পারত, তা হলে এই জঘন্য ঘটনায় ওরা দুঃখপ্রকাশ করত। আদালতের রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে লর্ডসের প্রতিটা কোণা নিশ্চয়ই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। কারণ ন্যায় বিচার হয়েছে। যে দিন সলমন বাটরা দোষী সাব্যস্ত হল, সেই মঙ্গলবারকে সবাই ক্রিকেটের সবচেয়ে কালো দিন বলছে। আমি কিন্তু বলব ওই দিনটা ক্রিকেটের জন্য খুব ভাল দিন। অনেক দিন ধরে ম্যাচ গড়াপেটা নিয়ে কথা হয়েছে। আমার ক্রিকেট জীবনে, ১৯৯৯ সালে ভারতীয় ক্রিকেটে প্রথম মাথা চাড়া দেয় গড়াপেটা। সেই মুখগুলো বদলে গিয়েছে। অনেক ঘটনাই লোকে ভুলে গিয়েছে। কিন্তু এখন যে এই কড়া রায় বেরল, তাতে নিশ্চয়ই তরুণ ক্রিকেটারদের মনে একটা ভয় তৈরি হবে।
এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আইসিসি, লন্ডনের মেট্রোপলিটান পুলিশ বিচারক এবং এর সঙ্গে জড়িত বাকিদের প্রশংসা প্রাপ্য। ‘নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’-কেও সাধুবাদ দিতে হবে। যদিও যে কোনও কারণেই হোক, এই খবরটা করার জন্য ওরা কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি দমনের একটা অংশ হয়ে ওরা ক্রিকেটের খুব বড় সাহায্য করেছে। ক্রিকেট এমন একটা খেলা যার কোটি কোটি সমর্থক রয়েছে। বাচ্চারা বড় মাপের ক্রিকেটারদের নায়ক হিসেবে দেখে। ওদের মতো হতে চায়। এদের জন্য বেশি করে এই বিশুদ্ধিকরণের দরকার ছিল। যারা ক্রিকেটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত, তাদের মনে রাখতে হবে যে এ রকম কোনও কাজ করলে পরের বার তোমাদের শাস্তি পাওয়ার পালা।
এই ঝাঁকুনিটা ক্রিকেটের খুব দরকার ছিল। আর এটা একদ ম ঠিক সময়ে এসেছে। ব্যক্তিগত ভাবে এই রায়ে আমি খুব খুশি। তবে এটাও বলব, কয়েক জন বাজে লোকের জন্য ক্রিকেটারদের গোটা সম্প্রদায় খারাপ হয়ে যায় না। অদূর অতীতে এবং হালফিলেও সচিন তেন্ডুলকর, রাহুল দ্রাবিড়, অনিল কুম্বলে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, স্টিভ ওয়, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শন পোলকদের মতো বেশ কিছু সাহসী ক্রিকেটার আছে যারা চূড়ান্ত সততার সঙ্গে খেলেছে এবং খেলে যাচ্ছে। ক্রিকেট তো মাত্র কয়েকটা দেশ খেলে। এই ক্রিকেটাররা সেই খেলাটাকে বিশ্বের মানচিত্রের একটা অংশ করে দিয়েছে। খাঁটি অর্থেই এরা সবাই ‘আইকন’, নিজেদের সময়কার ‘রোল মডেল’। যাদের এখনও সারা বিশ্ব শ্রদ্ধা করে। ভবিষ্যতেও করবে। স্টিভ ওয়ের সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত যে দুর্নীতিকে গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে হলে ক্রিকেটারদের মাঝে মাঝে লাই ডিটেক্টর পরীক্ষায় বসতে হবে। মানছি যে, এক জন অসৎ ক্রিকেটার বাকিদের নষ্ট করে দেয় না। কিন্তু এ রকম কঠিন পদক্ষেপ এবং বিচার ক্রিকেটের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব দেশের বোর্ডের নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে। টিমের উপর আরও ভাল করে নজর রাখতে হবে। বিদেশ সফরে দলের সঙ্গে দায়িত্ববান লোক রাখতে হবে যাতে ক্রিকেটারদের নিরাপত্তার দিকটা খেয়ালে থাকে। মনে রাখা ভাল, ক্রিকেটারদের অনেকটা সময় বিদেশে কাটাতে হয়। বেশি দিন পরিবারকে ছেড়ে থাকতে গেলে একা তো লাগবেই। তার উপর ভাল খেলার অন্তহীন চাপ। সব মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতি। এই পরিস্থিতির ফায়দাটাই তোলে জুয়াড়িরা। ওরা ক্রিকেটারদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ভান করে জেনে নেয়, কাকে দিয়ে কী ভাবে কাজ করাতে হবে। |