চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
যেখানে বিপন্ন হয়ে ওঠে নিজের অস্তিত্বই
ই বিশ্বে মানুষের সভ্যতা তার আপন অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে, সেই অধিকার ক্রমাগত প্রসারিত করতে গিয়ে প্রকৃতির বাকি সমস্ত প্রাণ-সম্পদ, সৌন্দর্য ও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহকে সংকুচিত ও বিপর্যস্ত করে চলেছে। এই বিপর্যয় আজ এমন এক চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মানুষের নিজের অস্তিত্বই গভীর ভাবে সংকটাপন্ন। এই সংকটের চিন্তায় কিছু বিবেকবান মানুষ আজ সচেতন হয়েছেন। পরিবেশ চিন্তাভাবনায় এই উদ্বেগের প্রতিফলন দেখা যায়। যাঁদের হাতে রয়েছে এই সভ্যতা পরিচালনার ভার, তাঁদের সীমাহীন লোভ ও ক্ষমতার দম্ভ কোনও নীতিবোধ বা শুভবোধের কাছে নতি স্বীকার করে না। সভ্যতা তাই প্রায় ধ্বংসের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে।
রবীন্দ্রনাথের সারা জীবনের বহুমুখী ও বহু বিচিত্র সৃজন প্রক্রিয়ার মধ্যে মানবিক অস্তিত্ব ও চেতনার সঙ্গে বৃহত্তর প্রকৃতিকে একাত্ম ও সুসমন্বিত করে নেওয়ার একটা প্রকল্প সন্তর্পণে কাজ করে গেছে। শুধু চিন্তায় নয়, সারা জীবন তিনি প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রযুক্তির বাস্তব প্রয়োগ নিয়ে হাতে-কলমে কাজ করে গেছেন। তাঁর জন্মের সার্ধ শতবর্ষ উদযাপনে নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যে এই দিকটির উপরেও আলোকপাতের প্রয়োজন ছিল। তারই প্রয়াস তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ আয়োজিত গগনেন্দ্র প্রদর্শশালায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একটি প্রদর্শনীতে। শিরোনাম ‘রবীন্দ্রনাথের পরিবেশভাবনা’। এটি সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পনা ও রূপায়ণ করেছেন অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
শিল্পী: অরুণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

অরুণেন্দু পরিবেশ সহায়ক স্থাপত্য প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘ দিন নিবিষ্ট কাজ করছেন। রবীন্দ্রনাথের স্থাপত্য ও পরিবেশভাবনা নিয়েও তিনি গবেষণা করছেন বহু দিন থেকে। এই প্রদর্শনীতে ৩১টি প্যানেলে তিনি তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথের সারা জীবনব্যাপী পরিবেশভাবনার নানা তথ্য। মূলত তাঁর সাহিত্য থেকেই তুলে নিয়েছেন প্রাসঙ্গিক নানা উদ্ধৃতি। কালানুক্রমিক ভাবে সাজিয়েছেন সেগুলিকে। সঙ্গে রয়েছে ছবি। বিভিন্ন বয়সে রবীন্দ্র-অবয়বের আলেখ্য যেমন, তেমনই শান্তিনিকেতনের নিসর্গ ও স্থাপত্যের ছবি। এছাড়া প্রতিটি প্যানেলকে তিনি অলংকৃত করেছেন তাঁর নিজের আঁকা ছবি দিয়ে। অরুণেন্দু একজন প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পীও। তাঁর অনেকগুলি একক প্রদর্শনী হয়েছে কলকাতায় ও বাইরে। তাঁর কাজগুলি প্রধানত রেখাভিত্তিক। প্রথম প্যানেলটিতে উদ্ধৃত হয়েছে ‘ছেলেবেলা’ গ্রন্থ থেকে জোড়াসাঁকোর বাল্যস্মৃতি। ‘গাড়ি গাড়ি রাবিশ’ ফেলে বুজিয়ে ফেলা হল একটি পুকুর। ‘পুকুরটা বুজে যেতেই পাড়াগাঁয়ের সবুজ ছায়া পড়া আয়নাটা যেন গেল সরে।...’ উপরে রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলার একটি আলোকচিত্র। নীচে জোড়াসাঁকোর বাড়ির আলোছায়াময় আলেখ্য। এর পর ধীরে ধীরে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’, ‘সোনার তরী’, ‘চিত্রা’, ‘ছিন্নপত্রাবলী’-র কবিতা ও চিঠির অংশের উদ্ধৃতি পেরিয়ে আমরা পৌঁছাই ‘ডাকঘর’ নাটকে। সেখানে অমল সুধাকে বলছে : ‘আমার মনে হয়, আমাকে যদি সবাই ছেড়ে দেয় তাহলে আমি চলে যেতে পারি - খুব ঘন বনের মধ্যে যেখানে রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। সরু ডালের সব আগায় যেখানে মনুয়া পাখি বসে বসে দোলা খায় সেইখানে আমি চাঁপা হয়ে ফুটতে পারি।’ প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের এই একাত্মতাই কবির স্বপ্নে ছিল। যে স্বপ্ন ক্রমশ ভেঙেছে। গীতবিতানের একটি গানে ধ্বনিত হয়েছে প্রকৃতির এই কান্না। ‘না বাঁচাবে আমায় যদি মারবে কেন তবে?’ এই মরণ মহোৎসবের মধ্যে দিয়ে আজও এগিয়ে চলেছে মানুষের সভ্যতা। প্রদর্শনীটি থেকে রবীন্দ্রনাথের পরিবেশ-ভাবনার নানা দিক সম্পর্কে অবহিত হতে পারেন দর্শক।
রবীন্দ্রনাথ নানা প্রকল্পে যে কাজ করেছেন সারা জীবন, যেমন শ্রীনিকেতনের সামগ্রিক পরিকল্পনা, প্যাট্রিক গেডেসের সঙ্গে তাঁর বিনিময়, যে সম্পর্কে অরুণেন্দু বিস্তৃত গবেষণা করেছেন, তার কিছু ইঙ্গিত থাকতে পারত এখানে। আর রবীন্দ্রনাথের যে প্রকৃতি-চেতনা, তারও কিছু দৃষ্টান্ত এলে প্রদর্শনীটি হয়তো সম্পূর্ণতর হতে পারত। রবীন্দ্রনাথের নিসর্গচিত্রগুলি প্রায়ই নির্জন। তিনটি ছবি আছে যেখানে প্রকৃতি ও মানুষের নিবিড় সম্পর্কের দ্যোতনা আছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.