জোকা-বিবাদী বাগ মেট্রোর কাজের জন্য তুলে ফেলা হয়েছে ডায়মন্ড হারবার রোডের ট্রামলাইন। আর সেই ট্রামলাইন ও ট্রাম চালানোর কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রি করার ক্ষেত্রে প্রায় ছ’কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন খোদ সিটিসি-র চেয়ারম্যান শান্তিলাল জৈন। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে তদন্ত কমিটি। এর পাশাপাশি, কর্তৃপক্ষ চান বিষয়টি নিয়ে ভিজিল্যান্স তদন্ত হোক। এ বিষয়ে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সীর সঙ্গে একপ্রস্ত কথাও বলেছেন সিটিসি-র চেয়ারম্যান।
জোকা থেকে বিবাদী বাগ১৬.৭২ কিলোমিটার এই পথে মেট্রো রেল চালাতে রেলমন্ত্রী হিসেবে গত বছরের গোড়াতেই উদ্যোগী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১০-এর ২২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল এই প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। কিন্তু সেই সময়ে ডায়মন্ড হারবার রোড থেকে ট্রাম তুলে দেওয়া নিয়ে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার নানা প্রশ্ন তোলে। এ নিয়ে শুরু হয় রাজনৈতিক কাজিয়া। গত ২০ মে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পরে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মমতা তাঁর বাড়িতে ডেকে সুব্রত বক্সী এবং মুকুল রায়কে জানিয়ে দেন, ওই কাজ শীঘ্রই শুরু করতে হবে। ২৪ মে তৎকালীন পরিবহণসচিব রাজপাল সিংহ কাঁহালো কাজ শুরুর সরকারি অনুমতি দিয়ে চিঠি পাঠান মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার জে কে বর্মাকে। পরদিনই বর্মা ট্রামের পরিকাঠামো সরিয়ে নিতে চিঠি পাঠান সিটিসি-র এমডি-কে। সেই অনুযায়ী কাজ শুরুও হয়।
ওই পরিকাঠামো সরানোর নামে দুর্নীতি হয়েছে বলে পরে সিটিসি কর্তৃপক্ষের কাছে খবর আসে। চেয়ারম্যান বলেন, “রাস্তার পরিকাঠামো ও যন্ত্রাংশ বিক্রি করে যেখানে অন্তত সওয়া আট কোটি টাকা পাওয়ার কথা, সেখানে ভাঁড়ারে এসেছে মাত্র সওয়া দুই কোটি টাকা। টেন্ডার ছাড়াই হয়েছে এ সব।” আর্থিক ভাবে রুগ্ণ এই সংস্থার পক্ষে এটা একটা বড় ধাক্কা বলে মনে করেন চেয়ারম্যান। এ ব্যাপারে সাত জনের যে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে, ২০ নভেম্বরের মধ্যে তাদের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। সিটিসি-র চেয়ারম্যানই এই কমিটির চেয়ারম্যান।
কিন্তু কীসের ভিত্তিতে সংস্থা-কর্তারা এ রকম তদন্তের নির্দেশ দিলেন? তাঁর ব্যাখ্যা: “ওই রাস্তায় উল্লেখযোগ্য জিনিসের তালিকায় রেল ছিল ২৪ হাজার মিটার, তামার কেব্ল ১৫০ মিটার, ওভারহেড ট্রলির তার ১২ হাজার মিটার, ট্র্যাকশন পোল ২৫০ মিটার, ভূগর্ভের কেব্ল আট হাজার মিটার ও সাতটি ফিডারবক্স। এ সবের বাজারদর অন্তত সওয়া আট কোটি টাকা। জমা পড়েছে সওয়া দুই কোটি। বাকি টাকা কোথায় গেল?”
সংস্থার মুখ্য হিসাব অফিসার (সিএও) এস চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এ ব্যাপারে দুর্নীতির কথা স্বীকার করেননি। তিনি কর্তৃপক্ষকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, “রেলমন্ত্রক এবং মুখ্যমন্ত্রী চাইছিলেন ডায়মন্ড হারবার রোডে দ্রুত কাজ শুরু করতে। তাই ওই সব সরঞ্জাম বিক্রির জন্য ক্রেতা খুঁজতে বেশি সময় নেওয়া যায়নি।”
এই যুক্তি মানতে রাজি নন শান্তিলালবাবু। পরিচালনমণ্ডলীর বৈঠক ডেকে তিনি তদন্ত কমিটি তৈরি করিয়েছেন। এ বার চাইছেন ভিজিল্যান্স তদন্ত। তাঁর দাবি, “প্রকৃত তদন্ত হলে দেখা যাবে, সংস্থার এক শ্রেণির পদস্থ অফিসার আর ঠিকাদার-সরবরাহকারী এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।” |