নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়ূরেশ্বর |
বয়লার ফেটে মৃত্যু হল দুই আদিবাসী মহিলা শ্রমিকের। শুক্রবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে ময়ূরেশ্বর থানার মল্লারপুর রেলগেট সংলগ্ন একটি চালকলে (রাইসমিল)। পুলিশ জানায়, মৃতেরা হলেনমিনি হেমব্রম (৩২) ও পানো হাঁসদা (৪০)। ওই চালকল সংলগ্ন এলাকায় তাঁদের বাড়ি।
এই ঘটনায় মালিকের বিরুদ্ধে খারাপ বয়লার রাখার অভিযোগ করেছেন চালকলের কর্মী তথা মল্লারপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য, কংগ্রেসের কালো বাউরি। পুলিশ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার পর থেকে অবশ্য কলের ম্যানেজার দেবু রায়-সহ দুই মালিক দিলীপ অগ্রবাল এবং ললিত অগ্রবালদের সঙ্গে চেষ্ঠা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। এ দিকে, এই ঘটনার তদন্তের রিপোর্ট ময়ূরেশ্বর ১ ব্লকের বিডিওকে পাঠাতে বলেছেন পাঠাতে বলেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমিতাভ সেনগুপ্ত। অমিতাভবাবু বলেন, “ওই চালকলটির বয়লার ঠিকঠাক ছিল কি না তদন্ত করে দেখতে বলা হয়েছে। পুলিশকেও ঘটনার তদন্ত করতে বলা হয়েছে।”
মিলগুলির ক্ষেত্রে এক বছর অন্তর বয়লারের রিনিউ করানো হয় কলকাতার ডাইরেক্টরেট অব বয়লার ডিপার্টমেন্ট। ওই বিভাগের মুখ্য পরিদর্শক সুনীলকুমার বিশ্বাস বলেন, “যতদূর জানি ওই চালকলের বয়লারটি ছিল নতুন করে রেজিস্ট্রেশন ছিল। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল তা তদন্ত সাপেক্ষ।” তিনি জানান, বয়লারের সেফটিভাল্ব যদি ঠিক মতো কাজ না করে তা হলে চাপে ফাটতে পারে। দ্বিতীয়ত বয়লারের মধ্যে জল না থাকলেও ফেটে যেতে পারে। |
মল্লারপুরের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা জানতে এক জন পরিদর্শককে পাঠানো হবে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত শ্রমিক কালো বাউরি জানান, এ দিন সকালে দু’জন মহিলা-সহ চার জন কাজ করছিলেন। মহিলাদের মধ্যে মিনি হাঁসদা বয়লারে জ্বালানি হিসেবে ধানের গুড়োর যোগান দিচ্ছিলেন। আর পানো হেমব্রম ছাই ফেলার কাজ করছিলেন। সকাল সওয়া ১০টা নাগাদ বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেট দিয়ে ফের বয়লার চালু করা হয়। কিছুক্ষণ পরে বিকট শব্দে বয়লারের যন্ত্রাংশ ফেটে যায়। তিনি বলেন, “নিজেকে সামলে নিয়ে বয়লার থেকে নীচে নেমে পড়ি। ধোঁয়ার মধ্যে দেখতে পাই বয়লারের উপরের লোহার ছাদ ভেঙে পড়ছে। দু’জন মহিলা ও এক শ্রমিকের খোঁজ পাচ্ছিলাম না।’’ বিস্ফোরণের সময়ে ওখানে কাজ করা আর এক শ্রমিক গেনু দত্ত বলেন, “কিছু বুঝতে পারছিলাম না। কোনও ভাবে সিড়ি দিয়ে নীচে নেমে আসি।”
এ দিকে, বয়লার ফেটার শব্দে রেলগেট ও মল্লারপুর বাজার, বাহিনামোড় থেকে দলে দলে লোক ছুটে আসে। তাঁরা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এক মহিলার হাতের অংশ দেখতে পান। আধ ঘণ্টার মধ্যে তাঁরা মিনি হেমব্রমের পোড়া দগ্ধ দেহ উদ্ধার করেন। বেলা ১১টা নাগাদ রামপুরহাট থেকে দমকলের একটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে আসে এবং পানো হাঁসদার দেহ উদ্ধার করে। কালো বাউরির অভিযোগ, “বছরে ১০-১২ বার বয়লারের লিকেজ মেরামতি করতে হয়েছে। এক সপ্তাহ আগেও লিকেজ মেরামতি করতে হয়েছে। মালিকপক্ষকে একাধিকবার বলা হলেও তাঁরা এ ব্যাপারে তেমন কোনও ব্যবস্থা নেননি।”
মল্লারপুরের ওই চালকলটি বহু পুরনো। ৯৯ সাল থেকে সাঁইথিয়ার ব্যবসায়ী মানিক দত্তের কাছ থেকে লিজ নিয়ে কল চালাচ্ছিলেন ঝরিয়ার ভাগা এলাকার দুই ব্যবসায়ী দিলীপ অগ্রবার ও ললিত অগ্রবাল। চলতি মাসেই লিজের সময়সীমা শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন আইএনটিইউসির ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক সম্পাদক মহাদেব ভাণ্ডারি, জেলা সহ-সম্পাদক জহর রায়। তাঁদের অভিযোগ, “শ্রমিকদের দাবি ব্যাপারে লক্ষ না রেখে মালিপক্ষ কল চালাচ্ছিল। এলাকার আর একটি নতুন চালকল নিয়ে তারা ব্যস্ত। ত্রুটিপূর্ণ বয়লার নিয়ে কাজ করছিল, যার জন্য এই দুর্ঘটনা।”
জেলা চালকল মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দীপক প্রামাণিক বলেন, “ওই চালকলটির বয়লার চলতি বছরের জুন মাসে রেজিস্ট্রেশন করা হয়। পরিদর্শকেরা বয়লার ঠিক আছে বলে জানিয়েছিলেন। তার পরেও কী ভাবে দুর্ঘটনা ঘটল তা দেখতে হবে।” সাধারণত চালকলগুলির বয়লার চালানোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সরকারি স্বীকৃত ‘অপারেটর’ কাজ করেন। মল্লারপুরে ওই চালকলে এক জন সরকার স্বীকৃত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অপারেটর কাজ করেন বলে দাবি করেছেন দীপকবাবু। |