|
|
|
|
পরিবেশ-বান্ধব শিল্প প্রস্তাবে সায় দিল রাজ্য |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
অবশেষে নয়াচরের জট কাটল।
মঙ্গলবার অনাবাসী বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বৈঠকে সেখানে ‘পরিবেশ-বান্ধব’ প্রকল্পের রূপরেখা চূড়ান্ত হয়েছে। মহাকরণ সূত্রের খবর, প্রসূনবাবুর সংস্থার সঙ্গে দু’এক দিনের মধ্যেই রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের এ বিষয়ে চুক্তি হওয়ার কথা। পার্থবাবু এ দিন বলেন, “আমরা চূড়ান্ত চুক্তির প্রায় দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। সেখানে পরিবেশ-বান্ধব শিল্প হবে।” আর প্রসূনবাবু বলেছেন, “প্রকল্প নিয়ে আর কোনও মতপার্থক্য নেই। সব মিটে গিয়েছে। সরকার যখন বলবে, তখনই চুক্তি করব।”
রাজ্যে পেট্রো-রসায়ন শিল্পতালুক গড়ার ব্যাপারে প্রসূনবাবুদের সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল আগের বামফ্রন্ট সরকারের। প্রথম ঠিক ছিল নন্দীগ্রামে এই শিল্পতালুক হবে। সেখানে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের পরে প্রায় জনবসতিহীন নয়াচর দ্বীপে তা স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত হয়। নয়াচরের জমি প্রসূনবাবুর সংস্থার হাতে তুলেও দেয় তৎকালীন রাজ্য সরকার। কিন্তু এর পরেই বামফ্রন্ট সরকারের সঙ্গে প্রসূনবাবুদের দূরত্ব বাড়ে। গত মার্চ মাসে, বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পরে, প্রসূনবাবুদের সঙ্গে ২০০৬-এর ৩১ জুলাই করা পেট্রো-প্রকল্প তৈরির মূল চুক্তি বাতিল করে দেয় বাম সরকার। কার্যত, সে দিনই নয়াচরে পেট্রো-রসায়ন প্রকল্পে যবনিকা পড়ে। |
|
প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তৃণমূল গোড়া থেকেই নয়াচরে পেট্রো-রসায়ন প্রকল্পের বিরোধী। সেই কারণে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে তাদের কাছে নয়াচর নিয়ে নতুন প্রস্তাব দেন প্রসূনবাবুরা। ত্রিমুখী ওই প্রকল্প সম্ভারে বলা হয়েছে, নয়াচরে শিল্প, পর্যটন ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করা হবে। এ দিন সেই প্রকল্প প্রস্তাবেই সায় দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রসূনবাবু জানিয়েছেন, নয়াচরের নতুন নাম হবে বিদ্যাসাগর দ্বীপ। সেখানে ত্রিমুখী প্রকল্পের জন্য মোট ২৬ হাজার কোটি টাকা খরচ হবে। জমি লাগবে ১১ হাজার ৮০০ একর, যা ইতিমধ্যেই তাঁর সংস্থার হাতে রয়েছে। সেই জমিতে যে ৮০০ মৎস্যজীবী পরিবার বসবাস করে, তাদের পুনর্বাসন দেওয়ার জন্য একটি মৎস্যজীবী গ্রাম তৈরি করা হবে। এবং সেটাই হবে ত্রিমুখী প্রকল্প নির্মাণের প্রথম ধাপ।
নতুন প্রকল্পগুচ্ছ নিয়ে যে কয়েকটি সমস্যা ছিল, এ দিনের আলোচনায় তা মিটে গিয়েছে বলে দাবি করেন প্রসূনবাবু। তিনি জানান, দু’টি পর্যায়ে ২০০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র (সাগর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র) তৈরি হবে। এর মধ্যে প্রথমটি চালু হবে (১৩২০ মেগাওয়াট) ২০১৬ সালে। দ্বিতীয়টি (৬৮০ মেগাওয়াট) ২০১৮ সালে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য জমি লাগবে ১০০০ একর। বিনিয়োগ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। শিল্পতালুক, যা হবে প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের নামে, তার জন্যও বিনিয়োগ হবে ১২ হাজার কোটি টাকা। জমি লাগবে ৩৮০০ একর। প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী ওই শিল্পতালুকে বিভিন্ন সংস্থার বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায়
৫০ হাজার কোটি টাকা। প্রসূনবাবু জানান, নয়াচরের ৭০০০ একর জমি কোস্টাল রেগুলেশন জোন-এর আওতায় থাকায় সেখানে কোনও শিল্প করা যাবে না। তাই ওই জমিতে মাতঙ্গিনী হাজরার নামে পর্যটন তালুক তৈরি হবে, যার মধ্যে ২৫০ একর জমিতে থাকবে মৎস্যজীবীদের গ্রাম। পর্যটন কেন্দ্র গড়তে খরচ ধরা হয়েছে ২০০০ কোটি টাকা।
প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে মৎস্যজীবী গ্রাম ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যের পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র লাগবে। প্রসূনবাবু বলেন, “মোট বিনিয়োগের ৩০% আসবে আমার সংস্থার কাছ থেকে। বাকি অর্থ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়া হবে।” বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আসবে বলে তিনি জানান। |
বিস্তারিত |
মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রকল্পের কাজ সময়ে শেষ করার উপরে জোর দিচ্ছে রাজ্য সরকার। এই প্রকল্পের জন্য বিনিয়োগকারী সংস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম সাহায্য পাবে। কিন্তু সেই সাহায্য পেতে দেরি হচ্ছে অজুহাতে যে প্রকল্পের কাজে দেরি করা যাবে না, তা প্রসূনবাবুদের বলে দেওয়া হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী এ দিন বলেন, “আমরা চাই সময়সীমা মেনে প্রকল্পের কাজ শেষ হোক।”
নয়াচরে পেট্রো-রসায়ন শিল্পতালুক তৈরির বিনিময়ে বারুইপুর, কুকড়াহাটি, হরিণঘাটা ও পানাগড়ে উপনগরী তৈরির জন্য প্রসূনবাবুদের জমি দেবে বলেছিল আগের বাম সরকার। এর মধ্যে বারুইপুর ও কুকড়াহাটিতে জমি দিয়েও দেওয়া হয়েছে। জমির বায়না বাবদ সরকারকে ৭০ কোটি টাকাও দিয়েছেন প্রসূনবাবুরা। কিন্তু দু’টি জায়গাতেই কাজ হয়নি। এ প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “জমি প্রসূনবাবুর হাতেই থাকবে। আমরা কোনও টাকা ফেরত দিতে পারব না। ওই জমিতে কী করা হবে, তা নগরোন্নয়ন দফতর এবং কেএমডিএ-এর সঙ্গে কথা বলে পরে ঠিক করা হবে।” প্রসূনবাবু ওই টাকার উপর সুদ বাবদ ৩২ কোটি টাকা দাবি করেন। পার্থবাবু বলেন, “রাজকোষের যা অবস্থা, তাতে ওই অর্থ দেওয়া যাবে না।” প্রসূনবাবু তা মেনে নিয়েছেন। পাশাপাশি, হাওড়ার সলপ মোড়ে কলকাতা ওয়েস্ট ইন্টারন্যাশনাল সিটি উপনগরী প্রকল্পে যে সমস্যা রয়েছে, তা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার জন্য প্রসূনবাবুকে বলা হয়েছে বলে জানান শিল্পমন্ত্রী। |
|
|
|
|
|