আমেরিকা-ইউরোপ জুড়ে পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে যে ‘ওয়াল স্ট্রিট বিক্ষোভ’ ছড়াচ্ছে, তাতে বাম মতাদর্শের প্রাসঙ্গিকতা ফিরে এসেছে বলে মনে করছেন এ দেশের বাম নেতারা। কেমব্রিজে গিয়ে সে কথাই তুলে ধরবেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি।
কেমব্রিজের পারসে স্কুলে আগামিকাল প্রথম ‘রজনীপাম দত্ত স্মারক বক্তৃতা’ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ পেয়েছেন ইয়েচুরি। বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে কেমব্রিজের এই স্কুলেই পড়াশোনা করেছিলেন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট রজনীপাম দত্ত। যাঁর কাছে মার্ক্সবাদের প্রথম পাঠ নেন জ্যোতি বসু-সহ অনেক কমিউনিস্ট নেতা। সেই রজনীপামের স্মৃতিতে এ বছর থেকে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করেছে পারসে স্কুল।
সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, আমেরিকা-ইউরোপে তরুণ-তরুণীরা যে ভাবে ওয়াল স্ট্রিট দখল করেছে, তা থেকেই স্পষ্ট হয়েছে পুঁজিবাদের সঙ্কট, মার্ক্সবাদের প্রাসঙ্গিকতা। পুঁজিবাদী উন্নয়নের ফাঁপা চেহারাটা বেরিয়ে পড়তেই সঙ্কট প্রকাশ্যে চলে এসেছে। ওয়াল স্ট্রিট বিক্ষোভে উজ্জীবিত হয়ে এ দেশেও পথে নেমেছেন বামেরা। আজই দিল্লিতে সিপিএমের ছাত্র ও যুব সংগঠন মার্কিন তথ্যকেন্দ্র অভিযান করেছে। বাম নেতাদের বক্তব্য, পুঁজিবাদের এই সঙ্কটের একমাত্র সমাধান সমাজতন্ত্র।
কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে বাম দুর্গের পতন হয়েছে। সেই সঙ্কটমুক্তির পথ এখনও হাতড়াচ্ছেন বাম নেতারা। যার ধাক্কায় জাতীয় রাজনীতিতেও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে সিপিএম। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, এ দেশের কমিউনিস্টদের ভবিষ্যতের পথ সম্পর্কে কেমব্রিজে ইয়েচুরি কি কিছু বলবেন? প্রভাব কমলে জাতীয় রাজনীতিতে কি তাঁরা আর প্রাসঙ্গিক থাকবেন?
বাম নেতারা মানছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও কেরলে কোণঠাসা তাঁরা আর জাতীয় রাজনীতিতে তৃতীয় বিকল্প জোটের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করতে পারছে না। এক সময় হরকিষেন সিংহ সুরজিত ও জ্যোতি বসু যে কাজটা সফল ভাবে করেছিলেন, সেটা করতে গিয়েই আজ ব্যর্থ হচ্ছেন প্রকাশ কারাট। দলের নেতারা তাই মানছেন, ওয়াল স্ট্রিটে বিক্ষোভ দেখে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের স্বপ্ন দেখলে চলবে না। সংগঠন মজবুত করা ও নতুন নতুন রাজ্যে সংগঠনের শক্তি বাড়ানোর কাজেই এখন মন দিতে হবে।
|