জনসংখ্যা ছাড়াল ৭০০ কোটি, মিশ্র প্রতিক্রিয়া বিশ্ব জুড়ে
নার্গিস আর দানিকাদের নিয়ে আমরা এখন সাতশো কোটির বেশি। বিশেষজ্ঞদের হিসেব অনুযায়ী পৃথিবীর জনসংখ্যা আজ ছাপিয়ে গেল সাতশো কোটির মাইলফলক!
আজ সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ উত্তর প্রদেশে মালিহাবাদ গ্রামের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে জন্মেছে নার্গিস। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রচারে সে-ই মানবজাতির ৭০০ কোটিতম সদস্য। সংবাদমাধ্যমগুলির উচ্ছ্বাসে আপ্লুত নার্গিসের কৃষক বাবা অজয় কুমার, মা বিনীতা। প্রতীকী সাতশো কোটিতমের কৃতিত্ব অবশ্য ভাগ করে নিল ফিলিপিন্সের আর এক নবজাতিকাও। ‘দানিকা মে কামাচো।’ স্থানীয় সময় রাত ১২টা বাজার দু’মিনিট আগেই জন্ম। এর কিছু পরেই হাসপাতালে জড়ো হওয়া জনতার সামনে নিয়ে আসা হয় দানিকাকে। সঙ্গে সঙ্গে ফ্ল্যাশ লাইটের ঝলকানিতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে চার দিক। সেই জনতার ভিড়ে ছিলেন সে দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের প্রতিনিধিও। তিনি এই বিশেষ মুহূর্ত উপলক্ষে কেক উপহার দিলেন দানিকাকে।
এখন প্রশ্ন, এই সাতশো কোটিতে পৌঁছানোটা কি মানবজাতির সাফল্য? নাকি অশনি সঙ্কেত?
এক কথায় জবাব দিতে পারছে না বিশ্ব। কারণ প্রতিক্রিয়াটা মিশ্র। কোথাও উচ্ছ্বাস। কোথাও চিন্তার বলিরেখা। পাঁচশো কোটিতে পৌঁছে ১৯৮৭ সালের ১১ অক্টোবর চালু হয়েছিল জনসংখ্যার ঘড়ি। তখন বিষয়টা ছিল রীতিমতো উদ্বেগের। সেই ঘড়ি ৬০০ কোটি ছোঁয় ১৯৯৯ সালে।
লখনউয়ে এক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নার্গিস। ফিলিপিন্সের দানিকা।
আজ ৭০০-র কোটির ঘরে পা রাখাকে মানবজাতির সাফল্য বলেই মনে করছে অনেক দেশ, এমনকী রাষ্ট্রপুঞ্জও। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, সম্ভবত উত্তরপ্রদেশেই জন্ম নিতে চলেছে ৭০০ কোটিতম শিশুটি। সে কারণেই নার্গিসকে ঘিরে আজ এত উচ্ছ্বাস। অজয়-বিনীতা এ দিনই জানিয়ে দিয়েছেন, ডাক্তার করতে চান মেয়েকে। কী ভাবে তা সম্ভব হবে তা অবশ্য জানা নেই তাঁদের। কারণ মাসভর খেটেও হাজার চারেকের বেশি রোজগার হয় না তাঁদের।
সেকেন্ডে দু’জন করে ধরলে সারা পৃথিবীতে আজ জন্ম হয়েছে ১ লক্ষ ৭২ হাজার ৮০০ শিশুর। যাদের সিংহ ভাগই এসেছে দরিদ্র বা অতিদরিদ্র পরিবারে। কী হবে তাদের ভবিষ্যৎ? এটাই বড় বেশি ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের। কারণ তাঁদের মাথায় রয়েছে অতি-জরুরি কিছু তথ্য। যেমন, ২০৫০-এর মধ্যে আরও দু’শো কোটি অতিরিক্ত মানুষের খাবার জোগাতে এখনকার তুলনায় ৭০ শতাংশ বেশি শস্য ফলাতে হবে। ৫০ শতাংশ বাড়াতে হবে পানীয় জলের জোগান। এত বিপুল লোকের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের সংস্থান কী ভাবে হবে তা বহু উন্নয়নশীল দেশের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব বলছে, এই জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি থাকে অস্বাস্থ্যকর বস্তি অঞ্চলে। দিনে ৪৫ টাকারও কম আয় তাদের। পরিস্রুত জন পায় না একশো কোটিরও বেশি মানুষ। আফ্রিকা মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শিশু মৃত্যুর হারও উদ্বেগজনক বলে মনে করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ভারতের ভাবনা আরও বেশি। কারণ, বিশেষজ্ঞের হিসেব বলছে, ২০২৫-এর মধ্যেই জনসংখ্যায় চিনকে ছাপিয়ে যাবে ভারত। বতর্মানে ভারতের জনসংখা ১২৪ কোটি, চিনের ১৩৫ কোটি। ভারতে আবার রয়েছে কন্যাভ্রূণ হত্যার মতো সমস্যা। এখনই শূন্য থেকে ছ’বছর বয়সী প্রতি হাজার ছেলের তুলনায় মেয়ের সংখা মাত্র ৯১৪। তাই কন্যাসন্তানের গুরুত্ব প্রচার করতে অজয়কে দিয়ে প্রচার করাতে চায় ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
ফিলিপিন্সের দানিকা।
রাষ্ট্রপুঞ্জের জনসংখ্যা তহবিলের কাযনির্বাহী অধিকর্তা বাবাটুন্ডে অসোটিমেহিন অবশ্য আশার বার্তা শুনিয়েছেন। তা হল, চিন, ভারত বা পাকিস্তানের মতো দেশে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়লেও পশ্চিম ইওরোপ, জাপান ও রাশিয়ায় জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় একটা ভারসাম্য বজায় থাকছে। সে কারণেই সাতশো কোটি পার করাকে সাফল্য হিসেবেই দেখছে রাশিয়া। সেখানে আজকে যারা জন্মেছে তাদের বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফে। আইভরি কোস্টে হয়েছে কৌতুকনাটক। রাষ্ট্রপুঞ্জও একে মানবজাতির সফল্য হিসেবেই দেখছে। এই উপলক্ষে ‘৭০০ কোটি কাজ’ নামে একটি কর্মসূচি নিয়েছে তারা। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, “কেউ কেউ বলছে পৃথিবীতে বড্ড বেশি মানুষের ভিড়। কিন্তু আমার মতে সাতশো কোটি মানুষের ভিড়ে আমরা আরও শক্তিশালী হলাম। এই শক্তিকে কী ভাবে কাজে লাগাচ্ছি তার উপরই নির্ভর করছে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.