মেডিক্যালে শিশুমৃত্যু অব্যাহত, আজ চালু সুরক্ষা কার্যক্রম
‘জননী ও শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম’ শুরু হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার থেকে। কিন্তু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশুমৃত্যুর বিরাম নেই।
কালীপুজোর রাত থেকে এক দিনের মধ্যে ১২টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা আর ঘটেনি। কিন্তু শনিবার ও রবিবার আরও আট শিশুর মৃত্যু ঘটেছে। সোমবার হাসপাতালে বিক্ষোভও দেখিয়েছে বিক্ষোভ দেখিয়েছে এসইউসি অনুমোদিত হাসপাতাল ও জনস্বাস্থ্য রক্ষা কমিটি। যদিও হাসপাতালের বক্তব্য, সেখানে রোজ গড়ে ৩ থেকে ৫টি শিশুর মৃত্যু হয়। সে দিক থেকে দু’দিনে আটটি শিশু অর্থাৎ দৈনিক গড়ে চারটি শিশুর মৃত্যু আদৌ অস্বাভাবিক নয়।
হাসপাতাল সুপার গদাধর মিত্রের কথায়, “এই মৃত্যু পরিসংখ্যানের দিক থেকে স্বাভাবিক। তবে কেন ওই আট শিশুর মৃত্যু হয়েছে, তা খতিয়ে দেখেছি আমরা। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, তিনটি শিশু বাইরে থেকে ‘রেফার’ হয়ে এসেছিল। কম ওজন, ম্যালিনগো এনকেফ্যালাইটিস, জন্মকালীন শ্বাসকষ্ট ইত্যাদিতে শিশুগুলির মৃত্যু ঘটেছে।”
বস্তুত, রাতারাতি ১২টি শিশুর মৃত্যুর পরেও কলকাতা থেকে আসা রাজ্যের দুই স্বাস্থ্যকর্তা এর মধ্যে ‘অস্বাভাবিক’ কিছু দেখেননি। তবে সংবাদমাধ্যমে হইচই শুরু হওয়ায় কর্তৃপক্ষ নড়ে বসতে বাধ্য হন। শিশু বিভাগে চিকিৎসক ও নার্সদের তৎপরতাও চোখে পড়ে। আপাতত প্রতিটি প্রতিটি শিশুর মৃত্যুর কারণ নথিভুক্ত করাও শুরু হয়েছে। সহ-সুপার দেবস্মিতা ধর প্রতি দিনই ওয়ার্ডে গিয়ে শিশুদের মৃত্যুর কারণ, ওজন, কোথা থেকে এসেছিল, কবে ভর্তি হয়েছিল ইত্যাদি তথ্য খুঁটিয়ে সংগ্রহ করছেন। সেই রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে স্বাস্থ্য ভবনে।
প্রশ্ন হল, প্রতি দিন গড়ে ৩ থেকে ৫টি শিশুমৃত্যুর ‘স্বাভাবিক’ হার কমানো সম্ভব হচ্ছে না কেন? সুপারের বক্তব্য, “আমরা শিশুমৃত্যু কমাতেই চেষ্টা করছি। কিন্তু গোটা হাসপাতালে প্রতি দিনই যেমন নতুন রোগী ভর্তি হয়, তেমন কিছু রোগী মারাও যায়। একেবারে শেষ মুহূর্তে যদি কোনও ৭০০-৭৫০ গ্রাম ওজনের শিশু ভর্তি হয়, তা হলে তো তার চিকিৎসা করার সুযোগই নেই আমাদের এখানে। এই ধরনের শিশুদের চিকিৎসা হয় এক মাত্র কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু সেখানে পাঠানোর মত অবস্থাও অনেক শিশুর থাকে না। বাধ্য হয়ে এখানেই তাকে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু করতে হয়।”
এ দিন এসইউসি-র সংগঠনের তরফে স্মারকলিপি দিয়ে অস্বাভাবিক শিশুমৃত্যুর নিরপেক্ষ তদন্ত, দোষীদের সাজা, মৃত শিশুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, শিশু বিভাগে যথেষ্ট সংখ্যক শয্যা, উন্নত পরীক্ষার ব্যবস্থা, উপযুক্ত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়োগ ও পরিকাঠামোর সার্বিক উন্নয়নের দাবি জানানো হয়। এ প্রসঙ্গে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সরিৎকুমার চৌধুরী বলেন, “শিশু ওয়ার্ডে অতিরিক্ত চিকিৎসক বা নার্স নিয়োগ করতে পারলে ভালই হত। কিন্তু সে সুযোগ কোথায়? ইতিমধ্যেই যতটা সম্ভব চিকিৎসক ও নার্স নিয়েগ করা হয়েছে। ‘সিক নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট’ চালু না হলে শিশুমৃত্যুর হার কমানো সম্ভব নয়।”
এই পরিস্থিতিতেই আজ ‘জননী ও শিশু সুরক্ষা কার্যক্রম’ চালু হচ্ছে বর্ধমান মেড্যিকালে। চলবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত। সদ্যোজাত ও প্রসূতিদের পরিশ্রুত পানীয় জল সরবরাহ, প্রসবের আগে অপেক্ষার জন্য মায়েদের চেয়ারে বসার সুযোগ দেওয়া, এই সময়ের ভিতরে প্রসূতিকে সমস্ত ধরনের ওধুষ বিনামূল্যে সরবরাহ করা ইত্যাদি এই কার্যক্রমের লক্ষ্য। কিন্তু সার্বিক পরিবর্তন না হলে শুধু এই ক’দিনের কার্যক্রম শিশু ও প্রসূতিদের কতটা স্বস্তি দিতে পারে, প্রশ্ন সেখানেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.