বন দফতরের অনুমান মিলল না। এখনও নয়াগ্রামে পৌঁছয়নি দলমার দল। উল্টে কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে নিত্য নতুন এলাকায় হামলা চালাচ্ছে তারা।
গত বছর ১৯ অক্টোবর নয়াগ্রাম পৌঁছে গিয়েছিল হাতির পাল। এ বারও মেদিনীপুর সদর ব্লকের গুড়গুড়িপালের দিক থেকে প্রায় একশোটি হাতির পাল মনিদহের কাছে কংসাবতী পেরিয়ে ঝাড়গ্রামের চুবকা, মানিকপাড়া ও সর্ডিহা হয়ে গত ২০ অক্টোবর খড়্গপুরের কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের জটিয়া-নিশ্চিন্তার জঙ্গলে পৌঁছয়। দলমার দল চিরাচরিত রুট ধরে আসায় বন দফতর নিশ্চিত ছিল যে দু’-এক দিন বিশ্রাম নিয়ে তারা নয়াগ্রামের দিকে যাবে। গত বার মাত্র দু’দিন জটিয়া-নিশ্চিন্তার জঙ্গলে ছিল হাতিরা। কিন্তু এ বার সব হিসেব উল্টে দিয়ে গত ১২ দিন হাতির দল কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের জঙ্গলেই রয়েছে। নিয়মিতও ক্ষয়ক্ষতিও চালাচ্ছে। |
মানিকঝাঁটিয়ার জঙ্গলে হাতির পাল। নিজস্ব চিত্র। |
জটিয়া-নিশ্চিন্তার জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একাধিক দলে ভাগ হয়ে কখনও খড়্গপুরের গ্রামীণের বিভিন্ন লোকালয়ে হামলা চালাচ্ছে হাতির পাল। আবার কখনও ঝাড়গ্রামের সাঁকরাইল ব্লকের নানা গ্রামে হানা দিয়ে তছনছ করছে খেতের ফসল। ভাঙচুর চালাচ্ছে গৃহস্থের বাড়ি ও বাগানে। স্বভাবতই ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। বন দফতর অবশ্য হাতি খেদানোর ব্যবস্থা করেছিল। কিন্তু তাড়া খেয়ে হাতিরা নয়াগ্রামে যাওয়ার গরজ দেখায়নি। বরং হুলাপার্টির তাড়া খেয়ে তারা নিত্য নতুন এলাকায় হামলা চালাচ্ছে তারা। একেই এই এলাকার বাসিন্দাদের হাতি তাড়ানোর অভিজ্ঞতা নেই। কী ভাবে হাতির হামলা থেকে বাঁচতে হয়, তা-ও অজানা। ফলে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। রবিবার বিকেলে হাতি খেদানো শুরু হয়। তাড়া খেয়ে খড়্গপুরের বাঁশপতরির জঙ্গল থেকে হাতির পাল সাঁকরাইলের খুদমরাই এলাকায় ঢুকে পড়ে। রাতে তারা স্থানীয় ডুমুরিয়া গ্রামে রীতিমতো তাণ্ডব চালায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৫টি মাটির বাড়ি। কয়েকশো বিঘে জমির ধান খেয়ে ও মাড়িয়ে নষ্ট করে তারা। ডুমুরিয়ার বাসিন্দা ভুতা নায়েক ও পুলিন নায়েকের গোয়ালে হানা দেয় হাতি। দু’টি গরু ও দু’টি ছাগল মারা যায়।
সোমবার ভোরে দলমার দলের অধিকাংশ সদস্যই কেলেঘাই নদী পেরিয়ে সাঁকরাইলের পাথরা অঞ্চলের মানিকঝাঁটিয়ার জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। এ দিন দুপুর থেকে খড়্গপুরের ডিএফও মিলনকান্তি মণ্ডলের উপস্থিতিতে হুলাপার্টি দিয়ে মানিকঝাঁটিয়া থেকে হাতির পালকে নয়াগ্রামের রুটে খেদানো শুরু হয়েছে। তবে হাতিরা সুবর্ণরেখা পেরিয়ে নয়াগ্রামের দিকে যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে বন দফতর। মিলনবাবু বলেন, “১২০টি হাতির পালে ১৮টি শাবক রয়েছে। তাই হাতিরা রয়েসয়ে যেতে চাইছে। সম্ভবত সেটাই বিলম্বের কারণ। তা ছাড়া, পালে অনেক শাবক থাকায় তাড়াহুড়ো করে নদী পেরনোর ঝুঁকি নিতে চায়নি হাতিরা। এই ক’দিনে কেলেঘাই ও সুবর্ণরেখার জলস্তর অনেক নীচে নেমে গিয়েছে।” ডিএফও জানান, ৯০টিরও বেশি হাতিকে মানিকঝাঁটিয়ার জঙ্গল থেকে খেদিয়ে নয়াগ্রামের দিকে পাঠানোর চেষ্টা হচ্ছে। ওই দলে শাবকগুলিও রয়েছে। বাকি গোটা পাঁচেক হাতি থেকে গিয়েছে জটিয়া-নিশ্চিন্তার জঙ্গলে। খড়্গপুরের বাঁশপতরির জঙ্গলে রয়েছে ১০টি হাতি। |