সম্পাদক সমীপেষু...
আর্সেনিক-আতঙ্ক
দীপঙ্কর চক্রবর্তীর লেখাটি (১১-৮) এবং ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রবীর করের লেখা চিঠি (২২-৯)-র সূত্রে জানাই, আমি একজন ডার্মাটোলজিস্ট এবং পশ্চিমবঙ্গে আমিই প্রথম আর্সেনিকের রোগীকে সনাক্ত করি ১৯৮৩-তে (আউটডোর ডকেট নং এস/১৫৮/৩৩/৮৩) যখন আমি স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন-এর ডার্মাটোলজি ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ওই সময়ে এবং পরে আমরা প্রচুর আর্সেনিকে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে স্কিন-ক্যান্সার শনাক্ত করি এবং একটি গবেষণাপত্রে জানাই যে, ভবিষ্যতে ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আর্সেনিক রোগীর মধ্যে অনেক বড় আকার নিতে পারে।
১৯৮৩-১৯৮৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের গ্রামে গ্রামে আমি আর্সেনিক রোগী শনাক্ত করি এবং ট্রপিকাল মেডিসিনের ডিরেক্টরকে জানাই। ওই সময়ে সরকারের আর্সেনিক সমস্যাকে অস্বীকার করার প্রবণতা ছিল। এমনকী আমি ট্রপিক্যালে থাকাকালীন খবরের কাগজে এই সমস্যাটি প্রকাশিত হয়। ফলে ট্রপিক্যালের অধিকর্তা আমার উপরে খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এবং জানিয়েছিলেন, ভবিষ্যতে যেন খবরের কাগজের সঙ্গে কথা না-বলি। শুধু তা-ই নয়, আমি বহু বার অনুরোধ করেছিলাম গ্রামের ডাক্তারদের এই ব্যাপারে সচেতন করার জন্য এবং আর্সেনিক রোগী শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠান করতে। অনেক অনুরোধ করার পর একবার সরকারি ভাবে যদিও একটি আয়োজন করা হয়, তবে ঠিক একদিন আগে আমাকে জানানো হয় অনুষ্ঠানটি বাতিল করা হয়েছে।
আজও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্সেনিক গ্রুপের সঙ্গে গ্রামে-গঞ্জে আমি সমীক্ষা করতে গিয়ে দেখেছি, ১৯৮৩-১৯৮৭ পর্যন্ত যে রোগীদের শনাক্ত করি, তাদের মধ্যে প্রায় সবাই মারা গিয়েছে এবং অধিকাংশ ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত।
১৯৮৩-তে যখন পানীয় জলে আর্সেনিকের সমস্যা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে কাজ শুরু করি তখন আমরা জানতাম আর্সেনিকের জন্য সাধারণত ত্বকের ক্যান্সার হয়। গত দু’দশকে নতুন নতুন গবেষণার ফলে জানি আর্সেনিকের ফলে শুধু ত্বকের ক্যান্সারই নয়, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ব্লাডার, কোলন, ইউরিনারি ট্র্যাকেও ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা এ-ও জেনেছি, পানীয় জলে আর্সেনিকের পরিমাণ ০.০৫ মিলিগ্রাম প্রতি লিটারে নিরাপদ নয়। এই মাত্রার আর্সেনিকের পানীয় জল প্রতিদিন এক লিটার পান করলে প্রতি হাজারে ১৩ জনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা। যেহেতু পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন চার লিটার জল পান করে তাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।


আমি স্ত্রীরোগবিশারদ এবং গত প্রায় ১২ বছর ধরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের সঙ্গে থেকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ড, উত্তর প্রদেশের বিস্তৃত আর্সেনিক-আক্রান্ত অঞ্চলে মাতৃগর্ভের শিশুর উপর আর্সেনিকের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছি। মাতৃগর্ভে শিশু থাকাকালীন গর্ভের ফুল (প্ল্যাসেন্টা)-এর মাধ্যমে শিশু মায়ের কাছ থেকে খাবার পায় এবং মা যদি আর্সেনিকের জল পান করে তবে শিশুর দেহেও সেই আর্সেনিক জমা হয় এবং শিশুর ক্ষতি করতে পারে। কয়েক বছর আগে একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে যে, শিশুর দেহে সেই আর্সেনিকের প্রভাবে বহু বছর বাদেও কঠিন রোগ হতে পারে। এমনকী জন্মের পরে আর যদি কখনও আর্সেনিকের জল পান না-করে থাকে তবুও। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে দেখেছি, সন্তানসম্ভবা মা যদি আর্সেনিকের জল পান করেন তবে শিশু পূর্ণতা লাভ করার আগেই নষ্ট হয়ে যায় বা মৃত বাচ্চা প্রসব করে। সব ক্ষেত্রে তা না-ও হতে পারে। তবে যে মা আর্সেনিকের জল পান করেছে তাদের শিশুর জন্মের পরেই ওই শিশুর চামড়া, চুল, নখ পরীক্ষা করেছি এবং বেশি মাত্রায় আর্সেনিক পেয়েছি। শুধু মানুষ নয় গরু, ছাগলের ক্ষেত্রেও আমরা একই তথ্য পেয়েছি। সন্তান নষ্ট প্রসঙ্গে জানাই, বার বার এই সমস্যাটির ফলে গ্রামে-গঞ্জে বিশেষ সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার আর্সেনিক-আক্রান্ত গ্রামের এক মহিলার কথা বলছি। ওঁর চুল, নখ এবং মূত্রে অধিক মাত্রায় আর্সেনিক ছিল। আমরা যখন ওই গ্রামে গিয়েছিলাম, তখন ওই মহিলা বলেন যে, তাঁর তিন তিনটি সন্তান পরপর নষ্ট হওয়ার কারণে বংশরক্ষা হবে না ভেবে তাঁর শাশুড়ি আবার তাঁর স্বামীর বিয়ে দেবেন ঠিক করেছেন।
আমি নিউরোলজিস্ট এবং গত প্রায় ১৫ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খন্ড, বিহার, উত্তর প্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও বাংলাদেশের আর্সেনিক-আক্রান্ত এলাকায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজ-এর সঙ্গে আর্সেনিকের কাজে যুক্ত। যাঁরা বহু দিন আর্সেনিকের জল পান করছেন তাঁদের মধ্যে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথিতে আক্রান্তর ভাগ বেশি। ফলে, রোগীরা হাতের পায়ের (বিশেষ করে অগ্রভাগে) অসাড়তা, দুর্বলতা, ব্যথা ইত্যাদি অনুভব করেন। গ্রাম-গঞ্জের আর্সেনিক-আক্রান্ত এলাকার চাষিরা বলেন, মাঠে আর আগের মতো কাজ করতে পারেন না। জোয়ান ছেলেরা অকর্মণ্য হয়ে পড়ছে। এই কাজ করতে না-পারার জন্য তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে। যেহেতু পরিবারের সকলে একই নলকূপের জল পান করে, তাই পুরো পরিবারের মোটামুটি সকলে কমবেশি আর্সেনিক নেফ্রোপ্যাথিতে ভোগে।
চৈতন্যোদয়
আনন্দবাজার পত্রিকায় (২৭-১০) সি পি আই নেতাদের অভূতপূর্ব বোধিলাভের ঘটনা জেনে অত্যন্ত কৌতুক অনুভব করছি। আমার স্বামী প্রয়াত সন্তোষকুমার ভট্টাচার্য যত দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন, তত দিন তাঁকে নানা অপমান, নিগ্রহ এবং মানসিক অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে বাড়িতে বসে কাজ করেছেন।
প্রতিবাদ। এস এফ আই ছাত্র-ইউনিয়নের বাধায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ঢুকতে না পেরে গাড়ির মধ্যেই বসে আছেন উপাচার্য সন্তোষ ভট্টাচার্য। ৭ ডিসেম্বর, ১৯৮৫।
গাড়ি আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগাল, গায়ে বিড়ির টুকরো বা চায়ের ভাঁড় ছুড়ে মারা এ সব কি সি পি আই নেতারা প্রত্যক্ষ করেননি? তাঁরা তো তখনও শরিক ছিলেন। এই পাপের অংশীদার তো তাঁরাও। আজকে তাঁরা যে প্রশ্ন করছেন বুদ্ধবাবু বা বিমান বসুকে, সেই প্রশ্ন তাঁরা সে দিন তোলেননি কেন?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.