সম্পাদকীয় ২...
অনধিকার
থ নামক পরিসরটি জন-স্থান। কথাটি এই রাজ্যে আক্ষরিক অর্থেও সত্য। করুণ সত্য। পশ্চিমবঙ্গের পথ হইল এমন একটি জন-স্থান যেখানে যাহা ইচ্ছা তাহাই কার্যত অবাধে করা চলে। মিছিল-অবরোধ হইতে পণ্য বেচাকেনা, এমন বিবিধ যথেচ্ছাচার পথের উপর অবাধে চলিয়া থাকে। সুতরাং, হাওড়ার বঙ্কিম সেতুর উপরেও যে অবাধে মঙ্গলাহাট চলিবে, তাহাতে বিস্ময়ের কিছু ছিল না। সেতু যান চলাচল এবং পথচারীর জন্য হইলে কী হয়, তাহা আসলে জন-স্থান, ফলে জনতার একাংশের বিচিত্র আবদারে তাহারই বা বাজার হইয়া উঠিতে বাধা কোথায়? সেই গড্ডলপ্রবাহই চলিতেছিল। সম্প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সংকেত দিল, পরিবর্তন আসিয়াছে। মঙ্গলাহাটের দিন বেশ কিছু ব্যবসায়ী বলপূর্বক সেতুর উপরে বসিতে গিয়া প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে উঠিতে বাধ্য হইয়াছেন। তাঁহারা দমেন নাই। তৎক্ষণাৎ, গাড়ি করিয়া কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে অবরোধ শুরু করিয়াছিলেন। সঙ্গে, মঙ্গলাহাট বাঁচাইবার দাবি। সুখের কথা, মুখ্যমন্ত্রী এই অন্যায় আবদারটি রক্ষা করেন নাই। ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের সহিত বৈঠকে স্পষ্ট জানাইয়া দেওয়া হইয়াছে, সেতুর উপরে হাটের কেনাবেচা চলিতে পারে না। জনতার নিরাপত্তার স্বার্থেই সেতু দখল করা অসম্ভব।
বার্তাটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পথ লইয়া এই রাজ্যে যে কুনাট্যটি ক্রমাগত অভিনীত হয়, তাহার গভীরে আছে একটি বিচিত্র যুক্তি। অধিকারের যুক্তি। প্রথমে কেহ কোনও একটি পছন্দমাফিক স্থান দখল করিয়া বসিয়া পড়েন। অতঃপর, সেই স্থানের উপরে নাকি তাঁহার এক ধরনের অধিকার জন্ম লাভ করে। সম্পূর্ণ অনধিকার হইতে যে দখলকার্যের উৎপত্তি এবং বিকাশ, তাহা একমাত্র পেশি আস্ফালন ব্যতীত অন্য কোনও ধরনের অধিকার সৃষ্টি করিতে পারে না। অথচ, দখলদারগণ সেই ‘অধিকার’-এর দিব্য গালিয়া এমনকী একটি ব্যস্ত সেতু জুড়িয়া বসিয়া পড়িবারও অধিকার প্রার্থনা করেন। বিমুখ হইলে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হইতেও দ্বিধা বোধ করেন না। একদা সংশ্লিষ্ট সেতু হইতেই একটি বাস পড়িয়া গিয়া দুর্ঘটনা ঘটাইয়াছিল। সেই ঘটনার পরেও দখলদারগণ সেতুর ‘অধিকার’ ছাড়িতে নারাজ। সুশাসন ঠিক কী পরিমাণ অসহায় হইলে এমন কাণ্ড সম্ভব, তাহা পণ্ডিতেরা বুঝিবেন, জনতাও হাড়েমজ্জায় বুঝিতেছে।
সংকটটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বুঝিয়াছেন। প্রশাসকের দায়িত্ব যে কিছু কঠোর এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দাবি করে, তাহা উপলব্ধি করিবার ফল সমস্ত সেতুকে দখলমুক্ত রাখিবার সিদ্ধান্ত। আশা করা চলে, এই কঠোর শুভবুদ্ধিটি প্রশাসনে বজায় থাকিবে। হাওড়ার মঙ্গলাহাট একটি দৃষ্টান্তমাত্র। এমন আরও নানা বেদখলের নজির রাজ্যময় বিস্তৃত। রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণেই তাহার কোনও প্রতিকার হয় নাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা একটি শুভ সূচনা করিল। পাশাপাশি, রাজ্যের বিরোধী শিবিরও এখনও পর্যন্ত এই বিষয়টি লইয়া কোনও সংকীর্ণ রাজনৈতিক তরজা শুরু করে নাই। সেই লক্ষণও স্বাস্থ্যকর। এই মনোভাবটিকেই আরও অনেক দূর অগ্রসর করা জরুরি। রাজনৈতিক করতালি যে সুশাসনের বিনিময়ে আসিতে পারে না, নির্বাচনী লাভালাভের স্বার্থে যে প্রশাসনিক বুদ্ধিকে বিসর্জন দেওয়া সঙ্গত নয়, তাহা রাজ্যের স্বভাব-যুযুধান রাজনৈতিক শিবিরগুলি যত দ্রুত উপলব্ধি করে, ততই মঙ্গল। তাহাতে জনতারই লাভ। সুতরাং, রাজ্যেরও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.