এখনও বিদ্যুতই পৌঁছয়নি বাড়িতে। কিন্তু বিল পাঠিয়ে দিয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। সোমবার বিকেলে এমন অভিযোগে দাঁইহাট গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিসে বিক্ষোভ দেখালেন কাটোয়ার করুই পঞ্চায়েতের পাঁজোয়া গ্রামের বাসিন্দারা। সংস্থা সূত্রে জানা যায়, শুধু পাঁজোয়া গ্রাম নয়, কাটোয়া ২ ব্লকের মুলটি, পরশুরাম কৃষ্ণনগর, যমুনাপাতাই, নন্দীগ্রাম, কুরচি গ্রামের প্রায় সাতশো পরিবার এ রকম বিল পেয়েছে। একই সমস্যা হয়েছে কাটোয়া ১ ব্লকের আলমপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামেও।
রাজীব জ্যোতি বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিনামূল্যে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য কয়েক মাস আগে পাঁজোয়ায় খুঁটি বসানো হয়েছে। তারও টাঙানো হয়েছে। এমনকী বাড়িতে বাড়িতে মিটারও বসানো হয়েছে। কিন্তু ট্রান্সফর্মারের সঙ্গে কোনও সংযোগ করা হয়নি। সে কারণে বাড়িতে বিদ্যুতও পৌঁছয়নি। পাঁজোয়া-সহ অন্য গ্রামের বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার জন্য দরবার করেছেন। কাটোয়া ২ বিডিও নির্মলকুমার দাস দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলিকে বিদ্যুৎ দেওয়ার জন্য বণ্টন সংস্থা ও গ্রামীণ বিদ্যুৎ সংস্থার সঙ্গে বারবার বৈঠক করেছেন। বাসিন্দারা জানান, এরই মধ্যে কালীপুজোর ঠিক আগে পাঁজোয়া গ্রামের ১৭০টি পরিবারের কাছে ১১ মাসের মোট ৪১৮ টাকা বিদ্যুতের বিল আসে (প্রতি মাসে ৩৮ টাকা হিসেবে)। এর আগে ৪০টি পরিবারের কাছে প্রতি মাসে বিল এসেছে। কয়েক জন টাকা জমাও দিয়েছেন। |
এই রকম বিল পাঠানোর প্রতিবাদে সোমবার পাঁজোয়া গ্রামের ২১০টি পরিবার দাঁইহাটে এসে বিক্ষোভ দেখান। ঘেরাও করে রাখেন স্টেশন ম্যানেজার ধ্রুবজ্যোতি মৈত্রকে। তিনি বিদ্যুতের বিল জমা দিতে হবে না জানানোর পরে ঘেরাও ওঠে। ওই বাসিন্দারা স্টেশন ম্যানেজারের কাছে লিখিত প্রতিবাদপত্র ও বিলগুলি জমা দেন। বিক্ষোভ দেখাতে আসা বেলারানি পাল, ভারতী ভট্টাচার্যরা বলেন, “রেশন থেকে যে কেরোসিন দেওয়া হয়, তাতে আমাদের চলে না। বেশি দামে বাইরে থেকে কেরোসিন কিনতে হয়। এর মধ্যে এমন বিদ্যুতের বিল ঘাড়ে চাপলে খুব মুশকিলে পড়ব।” ভারু দাস, ধানু ঘোষেরা বলেন, “আলোই জ্বলল না, আর তার জন্য বিল চলে এল। এ তো হাস্যকর! আমরা এই টাকা দেব না, সে কথা জানাতেই এখানে এসেছি।” পাঁজোয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ার কয়েক জন আবার টাকা জমা দিয়ে দিয়েছেন। কলেজ মাঝি, বিকাশ মাঝিরা বলেন, “আমরা লেখাপড়া জানি না। ভেবেছি, এটাই নিয়ম। তাই টাকা দিয়েছি।”
এ রকম বিল পাঠানোর কারণ কী? দাঁইহাট গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাই অফিসের স্টেশন ম্যানেজার ধ্রুবজ্যোতিবাবু এ জন্য রাজীব জ্যোতি বিদ্যুৎ প্রকল্পের কর্তাদের দায়ী করেন। তিনি বলেন, “ওদের তরফেই সংস্থাকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। তার পরে বিল তৈরি হয়। এর আগেও এমন সমস্যা হয়েছিল। প্রকল্প আধিকারিককে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি।” ওই প্রকল্পের বর্ধমানের আধিকারিক দেবাংশু দাস বলেন, “কেন এমন হল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এখনই এ নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে কিছু বলা যাবে না।” |