গুলি চালানোয় উদ্যত দুষ্কৃতীর থেকে পিস্তল কেড়ে নিয়ে সেটি পুলিশের হাতে দিলেন এক যুবক। শনিবার এই ঘটনাটি ঘটে বালুরঘাট শহরের বাস স্ট্যান্ড এলাকায়। চোখের সামনে এমন ঘটনা দেখে ব্যবসায়ীরা ওই যুবককে সাহায্য করতে এগিয়ে গেলে দুষ্কৃতী পালিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তের নাম দেবব্রত দাস ওরফে ভোগলু। নেশাসক্ত ওই যুবকের নামে এলাকায় চুরিচামারি-সহ নানা সমাজ বিরোধী কাজের অভিযোগ রয়েছে।
পুলিশ জানায়, অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি শহরের ডাকবাংলো এলাকায়। শনিবার দুপুরে বালুরঘাট শ্মশানে এক প্রতিবেশীকে দাহ করতে গিয়েছিলেন ডাকবাংলো পাড়ার বাসিন্দারা। সেই দলে ছিলেন স্থানীয় যুবক, বেসরকারি এক সঞ্চয় সংস্থার কর্মী অভিজিৎ দাস ওরফে কুন্দন। সে সময় নেশাগ্রস্ত হয়ে অভিযুক্ত দেবব্রত গোবর ছেটাতে শুরু করে। সন্তু কর্মকার নামে এক যুবক এর প্রতিবাদ করেন। অভিযুক্ত তাঁকে মারধর করে বলে অভিযোগ। তা দেখে দেব্রবতকে চড় মেরে সন্তুকে উদ্ধার করে আনেন অভিজিৎ। এর পর রাত ৮টা নাগাদ বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে বাস স্ট্যান্ড এলাকায় যান অভিজিৎ। ওই সময় চড় মারার প্রতিশোধ নিতে এসে পিছন থেকে অভিজিতের মাথায় পিস্তলের বাট দিয়ে আঘাত করে দেবব্রত। ঘুরে দাঁড়াতেই অভিযুক্ত যুবক হুমকি দিয়ে দেবব্রতের মাথায় পিস্তল তাক করে ট্রিগার চাপ দেয় বলে অভিযোগ। |
অভিজিৎ বলেন, “মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে ট্রিগার টেনে দেয় দেবব্রত। কিন্তু তা লক হয়ে যাওয়ায় গুলি বের হয়নি। হাত চেপে ধরে ঝাঁকুনি দিতেই পিস্তল মাটিতে পড়ে যায়। ৪ রাউন্ড গুলি-সহ পিস্তল পুলিশের হাতে তুলে দিই।” জেলা পুলিশ সুপার চিরন্তন নাগ বলেছেন, “ওই যুবক সাহসের পরিচয় দিয়েছেন। বালুরঘাট থানাকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”
এ দিন ডাকবাংলো পাড়ায় গিয়ে দেখা যায় অভিযুক্তের দাদা, বাবা-সহ সকলে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কালী পুজোর রাতে এলাকার তিনটি বাড়িতে চুরিতে ওই যুবক জড়িত। মাদকাসক্ত বলে সকলে তাকে এড়িয়ে চলে। গুলি ভর্তি পিস্তল হাতে এমন একটা ঘটনা ঘটনোর সাহস সে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণেই পেয়েছে। এলাকার বাসিন্দা তথা প্রাক্তন কারামন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, “পুলিশকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও সক্রিয় হতে হবে। ছেলেটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে ভাবে দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে তা দৃষ্টান্ত।” আইসি শান্তনু কোঁয়ার বলেন, “রাতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। অভিযুক্ত যুবক পালালেও শীঘ্র তাকে ধরা হবে।”
ঘটনার পরে চব্বিশ ঘণ্টা কেটে গেলেও অভিজিতের বাবা, মা ও স্ত্রীর চোখেমুখে আতঙ্ক রয়ে গিয়েছে। তাঁর মা সরমা দেবী বলেন, “ঘটনার সময় বাড়ির সবাই কালী প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা দেখছিলাম। পরে ঘটনার কথা জানি। ভগবান সহায় ছিল বলেই আমার ছেলে জীবন ফিরে পেল।” |