দুই ইতিহাস, দুই নায়ক ভেটেলের গলায় হিন্দি
আত্মহারা কার্তিকেয়ন
চেকার্ড ফ্ল্যাগ পেরিয়েই ডান হাতের মুঠো তুলে ধরে টিম রেডিওয় বললেন, “ইয়েস বয়েজ, উই ডিড ইট। প্রথম ইন্ডিয়ান জি পি জিতে দারুণ লাগছে। ফ্যান্টাস্টিক চ্যালেঞ্জ ছিল। সবাই মিলে দারুণ করেছি!”
ইনি সেবাস্তিয়ান ভেটেল। এই মুহূর্তে বিশ্বের অপ্রতিরোধ্যতম ফর্মুলা ওয়ান বিস্ময়!
“প্রমাণ করতে পেরেছি, আমার টিমমেটকে নিয়ে অনেক বেশি হইচই হলেও আমি কারও থেকে কম নই। অসম্ভব আবেগতাড়িত মুহূর্ত!”
ইনি নারায়ণ কার্তিকেয়ন। ঐতিহাসিক ভারতীয় রেসের একমাত্র ভারতীয় চালক হিসেবে অমর হয়ে রইলেন যিনি।
দু’জনের প্রেক্ষাপট আলাদা। আবেগ আলাদা। কিন্তু কোথাও গিয়ে ভারতে ফর্মুলা ওয়ানের অভিষেকে ইতিহাস গড়ে রাখলেন দু’জনেই।
ভেটেল যখন জিতছেন, সূর্য তখন ঢলে পড়ছে পশ্চিম আকাশে। গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমেই গাড়ির মাথায় চড়ে দর্শকদের জন্য বিজয় আস্ফালন করা রেড বুল তারকার সূর্য কিন্তু এই মুহূর্তে মধ্যগগনে। এ দিন মরসুমে নিজের এগারো নম্বর রেস জিতে মাইকেল শুমাখারের এক মরসুমে তেরোটা রেস জেতার বিরল রেকর্ড স্পর্শ করার দৌড়ে থেকে গেলেন তিনি।
পরে সাংবাদিকদের সামনে এসে “ধন্যবাদ। আপকি আঁখে বহুত সুন্দর হ্যায়,” বলে মন কেড়ে নিলেন গোটা আসরের। জার্মান হলেও ভেটেলের ইংরেজি নিখুঁত। হিন্দি স্বভাবতই ততটা নয়। তর্জমা নিজেই করলেন। “ভারতীয় মেয়েরা খুব সুন্দর। বিশেষ করে ওদের চোখগুলো।”
রেস নিয়ে যত না প্রশ্ন, তার থেকে অনেক বেশি ভারতের অভিজ্ঞতা নিয়ে। ভেটেল বললেন, “সত্যি বলতে কী, এখানে আসার আগে ঠিক কী ভেবে এসেছিলাম, সেটা বোঝানো জটিল। অনেক কিছু শুনেছিলাম। কিছু ভাল। কিছুটা মন্দ। কিন্তু নিজে এসে নিজের চোখে দেখতে চেয়েছিলাম। দেখার পরে বুঝেছি এ দেশটা আমাদের ইউরোপের থেকে অন্য রকম হলেও এখানে মানুষ সুখী। সংস্কৃতিটা অন্য। কিন্তু ভারতীয়রা খুব আন্তরিক আর বন্ধুত্ব পাতাতে ভালবাসে।”
এর পরে ভেটেল এ দেশে শুমাখারকে জনপ্রিয়তায় ছাপিয়ে গেলেও বলার কিছু নেই।
উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করলেন ভারতীয় দর্শকদের। আর বুদ্ধ সার্কিটের। নিজের জয় সম্পর্কে বললেন, “লম্বা রেস ছিল। সব থেকে বড় কথা, নতুন ট্র্যাক যেখানে আগে কখনও রেস হয়নি, সেখানে কাজটা কঠিন ছিল।”
ভেটেল-কার্তিকেয়নদের ক্যামেরাবন্দি করছেন প্রীতি জিন্টা। ছবি: পিটিআই
ও দিকে রেসের শেষে কার্তিকেয়ন পিট লেন থেকে বেরিয়ে আসতেই ছুটে গিয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন মা। হেসে কার্তিকেয়ন বললেন, “গ্রেট রেস!” গোটা পরিবার এসেছিল ইতিহাস গড়ার মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে। কালো পোষাকে ভারতীয় তারকার স্ত্রী পাবর্ণা। মিষ্টি মেয়ে ছুটে গিয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে গালে এঁকে দিলেন চুম্বন। ততক্ষণে দু’জনেরই চোখ ছল-ছল। হিসপ্যানিয়ার বিল্ডিংয়ে অভিনন্দন জানাতে অপেক্ষা করে ছিলেন সোনম কপূর। কার্তিকেয়নের সঙ্গে ছবি তোলায় অসম্ভব আগ্রহ। তুললেনও অনেকগুলো। ছাড়া পেয়ে কার্তিকেয়ন এগিয়ে এসে বললেন, “রেস শুরুর আগে একটা গভীর আবেগ বুক চেপে ধরেছিল। কিন্তু যে ভাবে চালালাম, তাতে গর্ব হচ্ছে। স্টার্টটা ভাল হয়েছিল। আমার জন্য রেস শেষ করতে পারাটাই বড় ব্যাপার।” যা অনুচ্চারিত রাখলেন, সেটা বললেন পাবর্ণা। “অনেক লড়াইয়ের পরে এই দিনটা এসেছে। আশা করি সবাই সমান উপভোগ করল।”
একটা আলোচনা ছিল, এটাই কী কার্তিকেয়নের শেষ রেস? ভারতীয় চালক মানেন না। বললেন, “দেখাতে পেরেছি, আমি কারও থেকে কম নই। ফর্মুলা ওয়ানে আরও অন্তত দু’বছর দেখবেন আমাকে।”
বুদ্ধ সার্কিট নিয়ে জয়জয়কার চারিদিকে। ওমর আবদুল্লা বলছিলেন, “এই সার্কিট ইমার্জিং ইন্ডিয়াকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে।” মাইকেল শুমাখারের ভাই, প্রাক্তন ফর্মুলা ওয়ান চালক র্যাল্ফ শুমাখার-ও বললেন, “সার্কিটটা অসাধারণ হয়েছে।”
দিনের শেষে বুদ্ধ সার্কিটের সেলিব্রিটি নদী যখন লেডি গাগা-র কনসার্টমুখী, তখনও উচ্ছ্বাস।
ভারতীয় গ্রাঁ প্রি বিশ্বের দরবারে ভারত-উদয় ঘটাতে পারল কি না, সেটা সময় বলবে।
এখনকার মতো, গোটা দিল্লি বুঁদ গতির নেশার হ্যাংওভারে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.