|
|
|
|
কথা রাখল ‘খানটাস্টিক’ |
|
পাকিস্তানি হ্যাকার-হানা এ বার
খোদ সিআইডি-র ওয়েবসাইটে
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
সে হুমকি দিয়েছিল তিন দিন আগে।
আর ‘খানটাস্টিক’-এর সেই হুঁশিয়ারি যে নিছক কথার কথা ছিল না, রবিবার তা হাতে-নাতে টের পাওয়া গেল। টের পেলেন গোয়েন্দারাই। কারণ, আবহাওয়া দফতরের মতো এ বার বিদেশি হ্যাকারের কারসাজিতে বিকল হয়ে গেল খোদ রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশ (সিআইডি)-এর ওয়েবসাইট! যার জের পৌঁছল নয়া দিল্লির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও বিদেশ মন্ত্রকে।
ভবানী ভবন-সূত্রের খবর, ব্যাপারটা নজরে আসে এ দিন সকাল ন’টা নাগাদ, সিআইডি ওয়েবসাইটের ‘হোম পেজ’ খোলার সঙ্গে সঙ্গে। দেখা যায়, হোম পেজে তথ্য সব হাপিস, কম্পিউটারের পর্দা জুড়ে শুধু কালো রং। যার উপরে সাদা-লাল অক্ষরে লেখা ‘মুসলিম লিবারেশন আর্মি।’ ওই নামের মাধ্যমেই হ্যাকারেরা নিজেদের পরিচয় ঘোষণা করেছে বলে জানিয়েছেন সিআইডি-কর্তারা। বস্তুত গোয়েন্দা সংস্থার ওয়েবসাইটে দুষ্কৃতী-অনুপ্রবেশের এ হেন নমুনা দেখে তাঁরা তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার এ ভাবেই হতভম্ভ হয়েছিলেন আলিপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মীরা। সে দিন কম্পিউটারে আবহাওয়া দফতরের হোম পেজ খুলতেই তাঁরা দেখেছিলেন পর্দা
জুড়ে মুখোশে মুখ ঢাকা এক জনের ছবি। তার বাঁ হাত মুষ্টিবদ্ধ, অনামিকায় পাকিস্তানি ক্ষেপণাস্ত্রের প্রতিকৃতি। নীচে ছিল ইংরেজিতে লেখা বার্তা ‘আপনার ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে।’
ভারতীয় আবহাওয়া-সাইটে হানাদার সেই হ্যাকার নিজেকে পাকিস্তানি বলে ঘোষণা করেছিল। জানিয়েছিল, তার ছদ্মনাম ‘খানটাস্টিক।’ হুঁশিয়ারি দিয়ে সে এ-ও লিখেছিল, ‘ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ফের ঘটবে।’
ধমকিটা যে ঠুনকো ছিল না, এ দিন মালুম হল। কিন্তু সিআইডি কী ভাবে নিশ্চিত হচ্ছে যে, পাকিস্তানি হ্যাকারেরাই কাণ্ডটা ঘটিয়েছে?
গোয়েন্দা-কর্তাদের দাবি: যে কম্পিউটার-সংযোগ মারফত সিআইডি-র সাইট হ্যাক করা হয়েছে, তার ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল (আইপি) অ্যাড্রেস’ যাচাই করে তাঁরা এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ হয়েছেন। উল্লেখ্য, বিশ্বের প্রতিটি কম্পিউটারে রয়েছে নির্দিষ্ট আইপি অ্যাড্রেস। তার মাধ্যমে বোঝা যায়, কোন কম্পিউটার ঠিক কোন এলাকায় ব্যবহার করা হয়েছে। এবং গোয়েন্দা-কর্তাদের বক্তব্য, এ ক্ষেত্রে আইপি অ্যাড্রেস-ই বলে দিয়েছে যে, দুষ্কর্মটি করা হয়েছে পাকিস্তানে বসে। সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশন্স) কে জয়রামন অবশ্য এ দিন বলেন, “হ্যাকার-হানায় আমাদের ওয়েবসাইটের বড় কোনও ক্ষতি হয়নি। শুধু হোম পেজটা মুছে দেওয়া হয়েছিল। তা ঠিক করে নেওয়া হয়েছে।”
সিআইডি-র হোম পেজ মুছে হ্যাকারেরা এ বার কী লিখেছে? কী বক্তব্য তাদের?
ভবানী ভবন সূত্রের খবর: সিআইডি-র সাইটে পাক হ্যাকারেরা লিখেছে, ‘জম্মু-কাশ্মীরে সেনা-পুলিশ মিলেমিশে মহিলাদের নির্যাতন করছে। নিরপরাধ লোকজনকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। খুন হচ্ছে শিশুরা।’ এ সব বন্ধ না-হলে ‘ফল ভাল হবে না’ বলে হুমকি দিয়ে তারা জানিয়েছে, বার্তাটি যাতে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের কাছে পৌঁছায়, সেই উদ্দেশ্যেই এই হানাদারি।
কিন্তু কাশ্মীরে ‘অত্যাচার’ নিরসনের জন্য বার্তাবাহক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গ গোয়েন্দা-পুলিশকে বাছা হল কেন?
প্রশ্নটা এখন পাক খাচ্ছে গোয়েন্দা ও প্রশাসনিক মহলে। স্বরাষ্ট্র-সূত্রের খবর: এ নিয়ে গত চার মাসে দেশের ৭৯টি সরকারি দফতরের ওয়েবসাইট বিদেশি হ্যাকারদের কবলে পড়ল। এগুলোর অধিকাংশই কেন্দ্রীয় সরকারি (যেমন বিএসএনএল বা জুট কর্পোরেশন)। এমনকী, র (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং), প্রতিরক্ষা মন্ত্রক বা সিবিআইয়ের মতো নিরাপত্তা ক্ষেত্রের তাবড় কেন্দ্রীয় সংস্থাও পাক ও চিনা হ্যাকারের হাত থেকে রেহাই পায়নি বলে জানিয়েছে হ্যাকিং-রোধে গড়া কেন্দ্রীয় নজরদার দলের এক সূত্র। তবে আঞ্চলিক দফতর হিসেবে আগে কেবল চেন্নাইয়ে মেট্রো রেলের ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছিল। এ বার সেই তালিকায় এল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গোয়েন্দা-পুলিশ।
এবং পূর্ব ভারতের গুরুত্বপূর্ণ শহর কলকাতার উপরে আচমকা তথাকথিত ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী’ বিদেশি সংগঠনের এ হেন নজর পড়ায় পুলিশ-প্রশাসনের আশঙ্কা বেড়েছে।
উপরন্তু কম্পিউটার-বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, সরকারি গুরুত্বপূর্ণ দফতরের ওয়েবসাইট হ্যাক করতে পারলে সেখান থেকে অন্য দফতরের ওয়েবসাইটেও হামলা চালানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্ভাবনা আরও বেশি। ওই সব যোগসূত্রের (ওয়েব-লিঙ্ক) মাধ্যমে হ্যাকারেরা অনলাইনে টাকা হাতিয়ে নিতে পারে, এমনকী সরিয়ে ফেলতে পারে অতীব জরুরি ও গোপনীয় তথ্যও।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে চায়নি। সিআইডি-সূত্রে বলা হয়েছে, সাইটে পাক-হ্যাকার হানার খবর দ্রুত জানানো হয় নয়াদিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে পাক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বিদেশ মন্ত্রককে অনুরোধ জানিয়েছে। |
|
|
|
|
|