কেন দাবি, স্পষ্ট নয় রাজ্যের কাছে
আরও ক্ষমতা চাইলেন ‘আচার্য’ নারায়ণন
শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতিতে আরও কাযর্কর ভূমিকা নিতে চান রাজ্যপালরা। দিল্লিতে দু’দিনের রাজ্যপাল সম্মেলনে পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্নাটকের রাজ্যপালরা দাবি তুলেছেন, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে তাঁদের ভূমিকা আরও সুনির্দিষ্ট করা হোক। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মানোন্নয়ন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিখুঁত করার জন্য রাজ্যপালদের আরও আগ্রহী এবং সক্রিয় হওয়া উচিত। আজ সম্মেলনের শেষে তাই রাজ্যপালদের মতামত খতিয়ে দেখার জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিব্বলকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন কেন এই দাবি তুললেন, তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের শিক্ষা মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে রাজনীতি মুক্ত করতে সংশ্লিষ্ট আইনের বদলে অতি সম্প্রতি নয়া অর্ডিন্যান্সে সই করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অর্ডিন্যান্সের পরিপ্রেক্ষিতেই নারায়ণনের এই দাবি কি না, সেই প্রশ্নও উঠেছে। তবে রাজ্য সরকারের তরফে বিষয়টি নিয়ে এ দিন কোনও মন্তব্য করা হয়নি। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “রাজ্যপাল ঠিক কী বলেছেন তা নির্দিষ্ট ভাবে না জেনে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করা সমীচীন বলে মনে করি না।”
তবে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য না করলেও মহাকরণ সূত্র বলছে, ‘আরও ক্ষমতা’ বলতে নারায়ণন ঠিক কী বলতে চেয়েছেন, রাজ্য সরকারের কাছে তা স্পষ্ট নয়। কারণ, রাজ্য সরকারের মতে, পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হিসেবে রাজ্যপালের ক্ষমতা এখনও খুব কম নয়। নতুন অর্ডিন্যান্সেও (যা এখনও চালু হয়নি) তা কোনও অংশে খর্ব করা হয়নি। কেন্দ্র জানতে চাইলে বিষয়টি সবিস্তার তাদের জানাবে রাজ্য।
চলতি আইনে রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সেনেট) উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে তিন জনের নামের একটি তালিকা আচার্যের কাছে পাঠাত। সেই তালিকা পছন্দ না হলে আচার্য নতুন তালিকা চেয়ে পাঠাতে পারেন। নয়া অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী উপাচার্য বাছাইয়ের জন্য যে তিন সদস্যের সার্চ কমিটি গড়া হবে, তাতে আচার্যের মনোনীত এক জন প্রতিনিধি থাকবেন। (অন্য দু’জনের এক জন ইউজিসি-র প্রতিনিধি ও দ্বিতীয় জন রাজ্যের অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক) বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য গঠিত সমিতি, অর্থাৎ কোর্ট বা সেনেট-সিন্ডিকেটে আগের মতোই আচার্য মনোনীত প্রতিনিধি থাকবেন।
শুধু তা-ই নয়, প্রয়োজনে কোনও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে অপসারণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপাচার্যকে পরামর্শ দিতে পারেন রাজ্যপাল। আচার্যের সেই পরামর্শ মানতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কার্যত বাধ্য। মহাকরণ সূত্রে বলা হচ্ছে, এ রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে আচার্যের প্রভূত ক্ষমতা রয়েছে। যেমন, তাঁর নির্দেশেই এখন রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে। এর পরেও নারায়ণন কেন ‘আরও কার্যকর ভূমিকা’ নেওয়ার কথা বললেন, সেটাই রাজ্য সরকারের কাছে অস্পষ্ট ঠেকছে।
রাজ্য সরকারের এই অঘোষিত অবস্থানের সঙ্গে এক মত রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার। (ঘটনাচক্রে যিনি আবার বাম শিবিরের ঘনিষ্ঠ বলেই শিক্ষা মহলে পরিচিত) তাঁর কথায়, “রাজ্যপাল তো যে কোনও সময় যে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়কে যা খুশি নির্দেশ দিতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়কে সাহায্য করার ক্ষেত্রে আচার্যের জন্য কোনও সীমা বেঁধে দেওয়া নেই। আর কী দরকার!”
রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকারের মত কিন্তু একটু ভিন্ন। তিনি বলেন, “আচার্যের আরও ক্ষমতা থাকা উচিত। ভবিষ্যতে তা আরও থাকবে বলে আশা করছি।” তবে আরও কী ক্ষমতা আচার্যের থাকা উচিত, তা স্পষ্ট করে বলেননি অভিরূপবাবু।
আচার্যের ভূমিকা কী, তা নিয়ে আইনি অস্পষ্টতার কথা বলেছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রদীপনারায়ণ ঘোষও। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্যের (পদাধিকারবলে প্রধানমন্ত্রী) মতো রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আচার্যের ভূমিকা স্পষ্ট করার যে দাবি নারায়ণনরা তুলেছেন, তার যে একটা ভিত্তি রয়েছে, সেই ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, “বর্তমান আইনে আচার্যের ভূমিকা সম্পর্কে বিশদে লেখা নেই।” তবে একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বময় কর্তা। খুব প্রয়োজন হলে ওঁর পরামর্শ নেওয়া হয়। গুরুত্বপূর্ণ কোনও বিষয়ে উনি যা নির্দেশ দেবেন, তা মানতে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত বাধ্য।”
এই অবস্থায় রাজ্যপালদের দাবি এবং রাজ্যগুলির অবস্থান, এ দু’য়ের মধ্যে কোনও সংঘাত দেখা দেবে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় দিল্লির কর্তারা। কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্রে বলা হচ্ছে, এটা ঠিক যে প্রধানমন্ত্রী চান আচার্য হিসেবে রাজ্যপালরা আরও সক্রিয় ভূমিকা নিন। সেই কারণে তিন রাজ্যপালের পরামর্শ ‘গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখার’ জন্য কপিল সিব্বলকে বলেওছেন তিনি। কিন্তু একই সঙ্গে এ নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য কোনও সাংবিধানিক সংঘাত তৈরি হোক, সেটা তিনি মোটেই চান না।
কেন্দ্র চায়, রাজ্যপালরা তাঁদের সাংবিধানিক সীমারেখার মধ্যে থেকেই আরও আগ্রহের সঙ্গে নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। প্রধানমন্ত্রী বোঝাতে চাইছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলি ফলপ্রসূ হচ্ছে কি না, তা বুঝতে রাজ্যপালরা যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের চোখ-কান হিসেবে কাজ করতে পারেন, তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবেও রাজ্যের উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে তাঁদের ‘সক্রিয় আগ্রহ’ দেখানো উচিত। বিশেষত, র্যাগিংয়ের মতো সমস্যা দূর করার ক্ষেত্রে রাজ্যপালদের বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। আজ মনমোহন বলেন, “কোনও ভাবেই যে র্যাগিংকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, প্রশাসন ও ছাত্র মহলকে স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার রয়েছে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.