লগ্নির বাজার রং পাল্টায় সকালে বিকেলে। এমনকী ঘণ্টায় ঘণ্টায়। আজ যা ঠিক, কাল তা নাও হতে পারে। সব থেকে অস্থির শেয়ার বাজার। তা অত্যন্ত স্পর্শকাতর। কোনও খবর বাজারের পছন্দ অথবা অপছন্দ হলে তার তাৎক্ষণিক প্রতিফলন পড়ে শেয়ার সূচকে। এই কারণে সব সময়ে সজাগ থাকতে হয় প্রতিটি বিনিয়োগকারীকে। প্রায় একই কথা খাটে শেয়ারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডগুলির ক্ষেত্রেও। আগে মাঝারি মেয়াদে ব্যাঙ্ক সুদে মোটামুটি স্থায়িত্ব ছিল। এখন আর নেই। সুদ পাল্টাচ্ছে যখন-তখন। মূল্যবৃদ্ধির ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচছে সুদের হার। সুদের হার চঞ্চল হতে চলেছে এমনকী সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টেও। ঋণপত্রের বাজারেও ওঠাপড়া চলছে ব্যাঙ্ক সুদের পরিবর্তনের তালে তালে। ব্যতিক্রম শুধু ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প। বাজার যে দিকেই যাক, কোনও পরিবর্তন নেই ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পে।
এই দ্রুত পরিবর্তনের বাজারে সঞ্চয়কারীদের সব সময়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হয় বিভিন্ন লগ্নি ক্ষেত্রের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। সিদ্ধান্ত নিতে হয় পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। আজ আমরা একনজরে দেখে নেব বিভিন্ন প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা কী রকম এবং এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত।
ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্প: কোনও পরিবর্তন নেই বেশ কয়েক বছর ধরে। প্রস্তাব আছে সামান্য হারে সুদ বাড়ানোর। যেমন পিপিএফ অ্যাকাউন্টে ৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮.২ শতাংশ। এই নামমাত্র সুদ বৃদ্ধিতে নতুন করে আকর্ষণ বৃদ্ধির কোনও সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে যখন ব্যাঙ্কে সুদের হার ঘোরাফেরা করছে ১০ শতাংশের আশপাশে। তবে সুদ না-বাড়া সত্ত্বেও আয়করদাতাদের কাছে পিপিএফ এবং অবসরপ্রাপ্ত মানুষের কাছে মাসিক আয় প্রকল্প যথেষ্ট জনপ্রিয়।
ব্যাঙ্ক আমানত: বর্তমানে টাকা রাখার অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা। সুদের হার এখন ১০ শতাংশের আশপাশে। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোতে কোনও কোনও ব্যাঙ্ক সুদ বাড়াতে পারে ০.২৫ শতাংশ। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইঙ্গিত অনুযায়ী এর পর সুদ বাড়ার সম্ভাবনা কম। স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ কয়েকটি ব্যাঙ্ক লম্বা মেয়াদে (১ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত) আমানত নিচ্ছে আকর্ষণীয় সুদে। এই চড়া সুদের জমানায় বড় মেয়াদে টাকা রেখে দীর্ঘ মেয়াদে নিশ্চিন্ত থাকা যায়। মনে রাখতে হবে মূল্যবৃদ্ধি কমার মুখ নিলেই কমবে সুদের হার।
প্রতিযোগিতা শুরু হতে চলেছে সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদের ক্ষেত্রেও। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এ ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়ামাত্র ইয়েস ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টে ৬ শতাংশ হারে সুদ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। স্টেট ব্যাঙ্ক সেভিংস অ্যাকাউন্টের সুদ ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ থেকে ৫.২৫ শতাংশ করতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। অন্যা ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকেও এ ব্যাপারে ঘোষণা আশা করা হচ্ছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই। সেভিংস অ্যাকাউন্টে উঁচু হারে সুদ পেতে হলে অবশ্য অ্যাকাউন্টে রাখতে হবে কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা।
শেয়ার বাজার: দেওয়ালি পর্ব ভালই কেটেছে শেয়ার বাজারের পক্ষে। ইউরোপীয় শঙ্কা সাময়িক কমায় শুক্রবার বুল রান দেখা গিয়েছে শেয়ার বাজারে। আর মাত্র ২০০ পয়েন্ট উঠলেই সেনসেক্স আবার পেরোবে ১৮ হাজার। এই পর্বে তা হয়েও যেতে পারে। আঠারো হাজার ছাড়ালে কিন্তু বিক্রির চাপ আসবে। তা যদি হয় তবে আবার দুর্বল হবে বাজার। সুদ বৃদ্ধি যদি বন্ধ হয় এবং পরের দিকে সুদ যদি কমতে শুরু করে তবে তা হবে শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা রাখার মহৌষধ। এর সম্ভাবনা কিন্তু আছে। অর্থাৎ পতনে ভাল শেয়ার কেনা যেতে পারে। লক্ষ্য রাখুন ষাণ্মাসিক ফলাফলের দিকে।
মিউচুয়াল ফান্ড: শেয়ার বাজার কিছুটা চাঙ্গা হওয়ায় কম বেশি ন্যাভ্ বেড়েছে ইক্যুইটি ভিত্তিক প্রায় সব প্রকল্পে। শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তা সহজে দূর হওয়ার নয়। এই কারণে এস আই পি পদ্ধতিতে নিয়মিত লগ্নি করাই ভাল। সাবধানী মানুষেরা বেছে নিতে পারেন মিশ্র প্রকল্প বা ব্যালান্সড ফান্ড। করদাতাদের জন্য ভাল এফ এম পি বা নির্দিষ্ট মেয়াদি প্রকল্প।
সোনা/রুপো: ওঠাপড়া চলছে সোনা রুপোর দরেও। আগে সিংহভাগ সোনা কেনা হত গয়না গড়ানোর জন্য। এই সোনা বিক্রির জন্য বাজারে ফেরত আসত না বললেই চলে। এখন বেশির ভাগ সোনা কেনা হয় লগ্নির মাধ্যম হিসেবে। অর্থাৎ যখনই পর্যাপ্ত দাম বাড়বে, তখনই বিক্রির চাপ আসবে। অর্থাৎ ওঠা-পড়া চলবে। তবে চাহিদা বৃদ্ধি ও জোগান সীমিত হওয়ার কারণে দীর্ঘ মেয়াদে সোনা ও রুপোর দাম বাড়তে থাকবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। অর্থাৎ দাম পড়লে সোনা ও রুপো কিনে রাখা যেতে পারে। এস আই পি পদ্ধতিতে লগ্নি করা যেতে পারে গোল্ড ফান্ড অফ ফান্ডসে। এখানে লগ্নি করতে ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া গোল্ড ই টি এফ কেনা যেতে পারে শেয়ার বাজার থেকে।
বন্ড: শেয়ার বাজারে নথিবদ্ধ কোনও কোনও কোম্পানির বন্ড ডিসকাউন্টে পাওয়া যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভাল হলে তার বন্ড অল্প পরিমাণ কিনে রাখা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে ডিসকাউন্টে কেনা হলেও সুদ পাওয়া যাবে ফেস ভ্যালুর উপর এবং মেয়াদ শেষে মূল টাকা ফেরত পাওয়া যাবে ফেস ভ্যালুর হিসেবেই। বন্ড কিন্তু বাছতে হবে বেশ সাবধানে।
আর্থিক বছর শেষ হতে পাঁচ মাস বাকি থাকলেও এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে কর সাশ্রয়কারী দীর্ঘ মেয়াদি পরিকাঠামো বন্ড। যাঁদের কর বাঁচানোর তাগিদ আছে, তাঁরা সজাগ থাকুন। হাতে যথেষ্ট সময় আছে। বুঝে-শুনে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত লগ্নি করতে পারেন এই বন্ডে। |