প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিলের ‘কিচেন শেড’ (রান্নাঘর) নির্মাণে আর্থিক দুর্নীতি ধরা পড়ার প্রেক্ষিতে এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান ও পঞ্চায়েতের তিন কর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন হুড়ার বিডিও বিশ্বনাথ রক্ষিত।
হুড়া ব্লকের লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েতের প্রাক্তন সিপিএম প্রধান ভাগ্যবতী মাহাতো, ওই পঞ্চায়েতের নির্বাহী সহায়ক বংশীধর দাস এবং অন্য দুই কর্মী সুধীর রায় ও দিলীপ রায়ের বিরুদ্ধে হুড়া থানায় এফআইআর করেছেন। বিডিওর দাবি, “তদন্তে দেখা গিয়েছে, ওই চার জন সরকারি অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় জড়িত।” পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তেরা পলাতক। তাই কাউকেই গ্রেফতার করা যায়নি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৭-’০৮ আর্থিক বছরে লক্ষ্মণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০টি প্রাথমিক স্কুলে মিড-ডে মিল রান্নার জন্য ‘কিচেন শেড’ নির্মাণে মোট ১৯ লক্ষ ১৪ হাজার ৪৬০ টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মণপুর গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কে প্রথম পর্যায়ে ১২ লক্ষ টাকার চেক জমা পড়েছিল তৎকালীন প্রধান ভাগ্যবতীদেবীর নামে। পঞ্চায়েত ৬ লক্ষের কিছু বেশি টাকা তুলে নিলেও ‘কিচেন শেড’ তৈরি করেনি। এই পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ প্রথম করেন এ বার বিধানসভা ভোটে কাশীপুর কেন্দ্রের নির্দল প্রার্থী দিলীপ মাহাতো। পরে একই অভিযোগ জানিয়ে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থার দাবি তোলেন কাশীপুরের তৃণমূল বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া। অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করেন হুড়ার বিডিও। পরে পুরুলিয়ার জেলাশাসকের নির্দেশে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করেন রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসক আবিদ হোসেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যাচ্ছে, ৬ লক্ষ ৫৭ হাজার ৬৬০ টাকার ‘গরমিল’ ধরা পড়েছে তদন্তে। বিডিও জানিয়েছেন, তদন্তে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে, ২০টি প্রাথমিক স্কুলের কোনওটিতেই রান্নাঘর আদৌ তৈরি করা হয়নি। অথচ সেই রান্নাঘর নির্মাণ বাবদ লক্ষ্মণপুর পঞ্চায়েতে ৪৬ বস্তা সিমেন্ট ও ১১ হাজার ৪৫০টি ইট কেনা হিসেব সংক্রান্ত নথিপত্র রয়েছে। তদন্তকারী দল গিয়ে পঞ্চায়েতের গুদামে ইট ও সিমেন্ট দেখতেও পেয়েছে। কিন্তু সেগুলির দাম কোনও ভাবেই ৬ লক্ষ টাকা বা তার বেশি হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে বাকি টাকা বা কোথায় গেল? প্রশ্ন উঠেছে, মজুত থাকা ওই সিমেন্ট আর ইট কেন কাজে লাগানো হল না। চলতি বছর জুন মাসে পঞ্চায়েতের বর্তমান তৃণমূল প্রধান ওই ‘কিচেন শেড’ নির্মাণের জন্য ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টে পঞ্চায়েতের তহবিলে পড়ে থাকা বাকি টাকা (সুদ-সমেত) প্রশাসনকে ফেরত দিয়ে দেন। ফলে প্রশাসনিক তদন্তে ৬ লক্ষাধিক টাকার সরকারি অর্থ ‘নয়ছয়ের’ ঘটনা ধরা পড়েছে।
শুক্রবার অনেক চেষ্টা করেও পলমা গ্রামের বাসিন্দা, প্রাক্তন প্রধান ভাগ্যবতীদেবী, মাগুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা বংশীধর দাস-সহ বাকি অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। প্রাক্তন প্রধানের বাড়িতে গিয়ে তাঁর দেখা মেলেনি। নির্বাহী সহায়ক বংশীধরবাবুর স্ত্রী জানান, তিনি বাড়িতে নেই। সিপিএমের হুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক শশাঙ্ক মাহাতোর দাবি, “প্রশাসন আমাদের দলের প্রাক্তন প্রধানের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে বলে জানা নেই। তবে প্রধান আর্থিক দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নন।”
আর গোটা দুর্নীতির বিষয়ে প্রথম যিনি প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, সেই দিলীপ মাহাতো বলছেন, “প্রশাসনিক তদন্তে দুর্নীতি ধরা পড়েছে। এ বার ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।” |