পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসাত
খন্দপথে যাত্রা
নতুন খেলাঘর
নিয়মিত যন্ত্রণায় ভুগছেন সাধারণ মানুষ। আর এক দিন জেলা সফরে এসেই সে যন্ত্রণা টের পেয়ে বিরক্ত হলেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
তবে তাতেও হাল ফেরেনি বিমানবন্দর থেকে বারাসত পর্যন্ত যশোহর রোডের ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের। খানাখন্দে ভরা কঙ্কালসার রাস্তাটি হার মানায় প্রত্যন্ত গ্রামের রাস্তাকেও। আর সেই রাস্তা নির্মাণ তো দূরের কথা, তা সংস্কারের কাজও চলছে ঢিমেতালে।
যশোহর রোড কিন্তু নিছকই জাতীয় সড়ক নয়, এটি আন্তর্জাতিক একটি রাস্তাও। নিত্যযাত্রীদের পাশাপাশি এই রাস্তা দিয়েই ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ঢাকা-কলকাতা বাসও চলে। এশিয়ার অন্যতম স্থলবন্দর বনগাঁর পেট্রাপোল দিয়ে পণ্য পরিবহণও চলে এই পথেই। এমনকী, কলকাতা থেকে সড়কপথে উত্তরবঙ্গে যাওয়ার জন্যও ব্যবহার করা হয় এই রাস্তাটিই।
এত গুরুত্বপূর্ণ হলেও মাঝেমধ্যেই পিচ-পাথর উঠে গিয়ে রাস্তাটির নীচের ইট-মাটি বেরিয়ে পড়েছে। কিছু দূর অন্তর বিশাল বিশাল সব গর্তে জমে রয়েছে বর্ষার জল। সেই চড়াই-উতরাই পেরিয়েই দুলকি চালে চলছে যানবাহন। এ দিকে, সাবধানে গর্ত পার হতে গিয়ে আরও বিভ্রাট। কখনও উল্টে পড়ছে মালবোঝাই ট্রাক, কখনও বা গাড়ি উল্টে আহত হচ্ছেন যাত্রীরা। তাঁদের অভিযোগ, ভিআইপি রোড ছেড়ে এয়ারপোর্ট চৌমাথায় পড়তেই বেহাল রাস্তায় যানজটে আটকে যাচ্ছে গাড়ি। এয়ারপোর্ট চৌমাথা থেকে বারাসত ডাকবাংলো মোড় পর্যন্ত যশোহর রোডের এমন বেহাল দশার জন্য বাস্তবিক অর্থেই নাভিশ্বাস উঠছে। নিত্যযাত্রীরা জানান, সব সময়েই এই রাস্তায় যানজট লেগে রয়েছে। আধ ঘণ্টার পথ পেরোতে লেগে যাচ্ছে দু’-আড়াই ঘণ্টা।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসবেন বলে এই রাস্তায় কিছুটা তাপ্পি দেওয়ার কাজ করেছিল বারাসত ও মধ্যমগ্রাম পুরসভা। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। বরং বেআব্রু হয়ে পড়ে রাস্তার হাল। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করতে গিয়ে রাস্তা নিয়ে দুষেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও সুরাহা হয়নি কিছুই।
রাস্তা নিয়ে কী বলছেন জনপ্রতিনিধিরা?
বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমিও এই বেহাল রাস্তার জন্য ভুগছি। রাস্তা সারাইয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরে তিরিশটিরও বেশি চিঠি পাঠিয়েছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। সমস্ত ঘটনাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি।”
অন্য দিকে, সম্প্রতি রাস্তায় কোনও কোনও খানাখন্দ ভর্তি জায়গায় প্যাচওয়ার্ক শুরু করেছেন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ (এনএইচএআই)। দফতরের সিজিএম অজয় অহলুওয়ালিয়া বলেন, “ঠিকাদারের সঙ্গে সমস্যার জন্য রাস্তাটির বেহাল দশা। তবে এখনই নতুন করে রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেই।” পাশাপাশি, ওই দফতরের প্রজেক্ট ডিরেক্টর গৌতম দত্ত বলেন, “প্যাচওয়ার্ক চলছে। আপাতত রাস্তা চওড়া করার কোনও পরিকল্পনা নেই।” অথচ, এর মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। কাছাকাছি থাকা চারটি প্রধান সড়ক ভিআইপি রোড, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক, টাকি রোড ও ব্যারাকপুর রোডের কেন্দ্রবিন্দু যশোহর রোডকে এমনিতেই প্রচুর ভার বইতে হয়। কলকাতা যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশ ও উত্তরবঙ্গের যাত্রীরা ছাড়াও প্রতি দিন এই একমাত্র রাস্তাটি পার করতে হয় বারাসত, সোদপুর, মধ্যমগ্রাম, দমদম-সহ বনগাঁ ও বসিরহাটের বাসিন্দাদের। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা চওড়া করা নিয়ে ভাবনা তো দূর অস্ৎ, রাস্তা সারাইয়ের কাজও চলছে ঢিমেতালে।
এ ছাড়া, রয়েছে পুরনো কিছু সমস্যাও। এলাকাবাসীদের অভিযোগ, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা, রাস্তার পাশে যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি ও ভ্যানরিকশা চলাচল নিয়ে হেলদোল নেই পুলিশের। অনেক সময় দেখা যায় ফাঁকা রাস্তায় মাল বোঝাই ভ্যানরিকশা চলছে ধীরে। তার পিছনে চলছে উত্তরবঙ্গের রকেট বা ঢাকা-কলকাতার মতো সুপারফাস্ট বাসগুলি। পণ্য বা লম্বা বাঁশ নিয়ে রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে বেআইনি ভ্যানরিকশা। যশোহর রোডে ভ্যানরিকশা বন্ধের কথা বলা হলেও কাজ হয়নি। এ ছাড়া, রাস্তার দু’পাশ দখল করে আছে অটো ও ট্যাক্সির স্ট্যান্ড। অবলীলায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছে চালকবিহীন ট্রাক। অটো রিকশাগুলিও নির্দ্বিধায় রাস্তা থেকে যাত্রী তোলে। ফলে ছোট হয়ে আসা রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে গাড়িকে। ভুগছেন যাত্রীরা। জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “রাস্তা খারাপের জন্য একটু যানজট হচ্ছে। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থা উন্নত করা হয়েছে। যে মোড়গুলিতে সমস্যা হত, সেখানেও পুলিশকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.