সম্পাদকীয় ২...
অব্যাহত অধোগতি
নাম বদল করিয়া বর্ণানুক্রমে কয়েক ধাপ উপরে উঠিয়া আসা হয়তো সম্ভব হইয়াছে। কিন্তু তাহাতে পশ্চিমবঙ্গের অধোগমনের আখ্যানটি পরিবর্তিত হয় নাই। কেন্দ্রীয় ‘ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো’র খতিয়ানে নারী-নিগ্রহে পশ্চিমবঙ্গ বেশ উপরের দিকে স্থান করিয়া লইয়াছে, বস্তুত গোটা দেশে এই নেতিবাচক সামাজিক সূচকে এ রাজ্যের স্থান দ্বিতীয়, অন্ধ্রপ্রদেশের ঠিক পরেই। বধূ নির্যাতন, নারী পাচার, ধর্ষণ কিংবা দেহ-ব্যবসায়ে নামাইতে মেয়ে-বিক্রি প্রতিটি বিষয়েই পশ্চিমবঙ্গ দেশের অধিকাংশ রাজ্যকে পিছনে ফেলিয়া দিয়াছে। এই অগ্রগতিকে আর যাহাই হউক, ঠিক ‘উত্তরণ’ বলা যাইবে না।
পশ্চিমবঙ্গকে আপাতদৃষ্টিতে একটি সামাজিক ভাবে সচেতন ও প্রগতিশীল রাজ্য বলিয়া মনে হয়। বঙ্গবাসী নিজেরা তো তেমন মনে করেনই, শাসকরাও নিজেদের এই তুলনামূলক উৎকর্ষের কল্পনায় শ্লাঘা বোধ করেন। অথচ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হিসাব দেখাইতেছে, সারা দেশে বধূ-নির্যাতনের ঘটনার প্রায় এক পঞ্চমাংশই এই রাজ্যে ঘটিয়াছে। রাজ্য পুলিশের কর্তাব্যক্তিরা কেহ কেহ অবশ্য রাজ্যের এই তুলনামূলক অধোগমনের বাস্তবতা শিরোধার্য করিতে নারাজ। তাঁহাদের যুক্তি, অন্য রাজ্যের তুলনায় সচেতন বলিয়াই পশ্চিমবঙ্গে নারী-নির্যাতনের অভিযোগ নথিভুক্তির সংখ্যাও বেশি। শিক্ষা, সচেতনতা ও সামাজিক প্রগতিশীলতার নিরিখে রাজ্য অন্যদের তুলনায় আগাইয়া থাকায় এখানে নিগৃহীত মহিলাদের প্রতিকার চাওয়ার এবং অভিযোগ নথিভুক্ত করার প্রবণতাও বেশি। আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের এই যুক্তিটি পুরানো এবং ছেঁদো। কারণ কোনও রাজ্য মহিলাদের প্রতি অপরাধের প্রতিবিধানে যথার্থই প্রাগ্রসর কি না এবং মহিলারা সেখানে অন্য রাজ্যের তুলনায় নিরাপদ কি না, সেটা বিশেষ ভাবে নির্ভর করে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত হওয়া ও শাস্তিলাভের হিসাবের উপর। এই হিসাবটিতে কিন্তু দেখা যাইতেছে, শতকরা মাত্র ১৩টি ক্ষেত্রে রাজ্যে অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হইতেছে, যাহা এ সংক্রান্ত জাতীয় গড়ের তুলনায় অনেক কম। তাই পুলিশ কর্তাদের অপযুক্তিটি ধোপে টিকিবে না।
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত মধ্যশ্রেণির একটা বিভ্রম রহিয়াছে যে, এই রাজ্য ও তাহার বাসিন্দারা বুঝি সর্ব বিষয়েই অন্য রাজ্যের তুলনায় অগ্রগামী। বিশেষত সামাজিক প্রগতিশীলতার ক্ষেত্রে এই বড়াই হইতেই দাবি করা হয়, এ রাজ্যে জাতপাতের বিচার ও ভেদবুদ্ধি উত্তর বা দক্ষিণ ভারতের তুলনায় অনেক কম। এত কম, যে অনেকে তাহার অস্তিত্বও স্বীকার করিতে চান না। কিন্তু যখন মিড-ডে মিল-এর খাবার ‘ছোট-জাত’-এর হাতে রান্না হওয়ায় শিশুদের অভিভাবকরা সে-খাবার বয়কট করিতে বলেন কিংবা টিউব-ওয়েলে নিম্নবর্ণীয় মানুষের ছোঁয়া লাগায় তাহা গোবর দিয়া শুদ্ধ করা হয়, তখন জাতিভেদ প্রথা ও অস্পৃশ্যতার ঘৃণ্য বিভেদপন্থা প্রকট হইয়া ওঠে। বাঙালি কোনও সামাজিক সূচকেই আজ গো-বলয়ের রক্ষণশীলতা ও কুসংস্কারাচ্ছন্নতা হইতে মুক্ত থাকার দাবি করিতে পারে না। যাবতীয় প্রতিক্রিয়াশীল প্রবণতাই সে সযত্নে লালন করে। শিক্ষা ও প্রগতির ভাণ তাহাকে এই প্রবণতাগুলি লুকাইয়া রাখিতে শিখাইয়াছে, এই যা। তাই নিম্নবর্গীয় মানুষের প্রতি মনোভাব ও আচরণে যেমন, তেমনই নারীর (যাহারা সমগ্র পুরুষ সমাজের কাছেই প্রান্তিক, অপর ও নিম্নবর্গীয় বলিয়া গণ্য) প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে ও আচরণেও বাঙালি রীতিমত প্রতিক্রিয়াশীল। নারী-নিগ্রহ, নারী-পাচার, ধর্ষণের মতো ঘটনার উদ্বেগজনক সংখ্যাবৃদ্ধি সেই বিষয়টিই নূতন করিয়া চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.