এক দিকে দেশে ফের সুদ না-বাড়ানোর ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ইঙ্গিত, অন্য দিকে ইউরোপের আর্থিক সমস্যা মেটানোর ব্যাপারে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই দুইয়ের জেরে বৃহস্পতিবার তেজী হয়ে ওঠে বিশ্ব বাজার। এবং ভারতে এক ধাক্কায় সেনসেক্স বেড়ে গেল প্রায় ৫১৬ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময় সূচক থামে ১৭,৮০৪.৮০ অঙ্কে।
চলতি সপ্তাহের শুরুতে ঋণনীতির পর্যালোচনায় সুদের হার এক ধাপ বাড়ানোর সময়েই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর ডি সুব্বারাও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মুদ্রাস্ফীতি আরও উদ্বেগজনক পর্যায়ে না পৌঁছলে, ফের সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটার ইচ্ছে নেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের। এই ইঙ্গিত যে শেয়ার বাজারের লগ্নিকারীদের অনেকটাই আশ্বস্ত করেছিল, তার প্রমাণ মিলেছে তার পরের দু’দিনে সূচকের প্রায় ৩৫০ পয়েন্ট উত্থানে। |
অন্য দিকে, ইউরোপের আর্থিক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজধানী ব্রাসেলসে সদস্য দেশগুলির শীর্ষ বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গ্রিস-সহ ইউরোপে আর্থিক সঙ্কট মেটাতে ১ লক্ষ কোটি ইউরোর একটি ত্রাণ প্যাকেজ তৈরি করা হবে। আগে ঠিক ছিল ওই প্যাকেজ হবে ৪৪ হাজার কোটি ইউরোর। পরে আর্থিক সঙ্কটের তীব্রতা বিচার করে তা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় ইউনিয়ন। এ ছাড়াও সমস্যায় পড়া ইউরোপের ব্যাঙ্কগুলিকে মূলধন জোগাতে আরও ১০,৬০০ কোটি ইউরোর পরিকল্পনা তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছে তারা। ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে গ্রিসের মোট ঋণের অর্ধেকটাই মকুব হয়ে যাবে। এখন গ্রিসের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ১৮০ শতাংশই তার ঋণের পরিমাণ। নয়া প্যাকেজ কার্যকর হলে তা নেমে আসবে ১২০ শতাংশে। তবে ঋণ মকুবের জেরে কোন ব্যাঙ্ককে কতটা লোকসানের বোঝা বইতে হবে, তা এখনও স্থির হয়নি। ফলে বাজারে ভবিষ্যতে তার সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশেষজ্ঞরা এখনও সন্দিহান।
বিশ্বায়নের যুগে আমেরিকা এবং ইউরোপের আর্থিক অবস্থার উন্নতি না হলে ভারতের বাজারের হাল ফেরার সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই নতুন প্যাকেজের খবরে এ দেশের লগ্নিকারীরাও আশান্বিত। শুক্রবার বিশ্ব বাজারে অবশ্য কিছুটা দোলাচল ছিল। মূলত মুনাফা ঘরে তোলার জন্যই বাজার কিছুটা পড়ে যায়। পাশাপাশি, ইতালির ঋণের বোঝা কতটা, নিলামের মাধ্যমে নতুন করে তার খতিয়ানে দেখা যায়, তা বেড়েছে বেশ কিছুটা। এর জেরেও পড়ে ইউরোপের বাজার।
আগামী সপ্তাহ চারেক ভারতের বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তবে তার পরই বড় মাপের পতন আসতে পারে বলেও আশঙ্কা। অবশ্য ওই ত্রাণ প্যাকেজ ইউরোপের বাজারকে চাঙ্গা রাখলে তার জের ভারতের বাজারের সম্ভাব্য পতনের বহরকে অনেকটাই হাল্কা করে দিতে পারে বলেও মত বিশেষজ্ঞদের একটি অংশের। |