|
|
|
|
দুঃখ ভুলে ভাইফোঁটার আনন্দে মেতে উঠল খাজুরডিহির বৃদ্ধাশ্রম |
সৌমেন দত্ত • কাটোয়া |
হুইল চেয়ারে বসে ভাইদের কপালে ফোঁটা দিতে দিতে কেঁদে ফেললেন বিমলাদেবী।
শুক্রবার কাটোয়ার খাজুরডিহি গ্রামের আনন্দ নিকেতনের বৃদ্ধাশ্রমে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান হয়। ওই বৃদ্ধাশ্রমে ১৫ জন বৃদ্ধ ও ১০ জন বৃদ্ধা রয়েছেন। আনন্দ নিকেতন হোমের মানসিক ভারসম্যহীন শিশুরাও এ দিনের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল।
বিমলা চক্রবর্তীর বাড়ি জামশেদপুরে। শিক্ষকতা করতেন। গত আট বছর ধরে তাঁর ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। তাঁর কাছ থেকে যাঁরা ফোঁটা নিলেন সেই ভাইয়েরাও ওই বৃদ্ধাশ্রমেরই বাসিন্দা। বিমলাদেবী বলেন, “ভাইফোঁটা নিয়ে অনেক টুকরো টুকরো স্মৃতি চোখের সামনে ভসে ওঠে। সেই স্মৃতি অবশ্য কারও সঙ্গে ভাগ করে নিতে চান না তিনি। তিনি মনের কথা মনের ভিতরেই রাখতে চান। বর্ধমানের বাসিন্দা প্রদীপ বিশ্বাস শিক্ষক ছিলেন। এখন তিনি বৃদ্ধাশ্রমেই থাকেন। তাঁর কথায়, “এই ধরনের অনুষ্ঠান হলে বাড়ির একটা অনুভূতি পাই, যা বেশ ভাল লাগে।” |
|
ফোঁটা দিচ্ছেন বিমলাদেবী। নিজস্ব চিত্র। |
ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান ঘিরে এ দিন সকাল থেকেই ব্যস্ততা ছিল তুঙ্গে। সকালে উঠে স্নান করে তৈরি হয়ে যান সকলে। বেলা ১২টা নাগাদ শুরু হয় অনুষ্ঠান। সমস্ত নিয়ম মেনে ভাইদের অক্ষয়-আয়ু কামনা করেন বোনেরা। দুপুরে জমিয়ে হল খাওয়া-দাওয়াও। মেনু ছিল, মুরগির মাংস, ভাত, চাটনি, সব্জি ভাজা। এ দিন সন্ধ্যায় মানসিক ভারসাম্যহীন শিশুদের নিয়ে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হোমের এক কর্মী বলেন, “বৃদ্ধাশ্রমে আসার পর থেকে ওঁরা কেউই সে ভাবে রাস্তায় বের হননি। বছরে এক বার হয়তো পরিজনেরা আসেন। কয়েক জনের ক্ষেত্রে সেটাও হয় না। সেই কারণে ওঁরা মানসিকভাবে কিছুটা চাপে থাকেন।” কলকাতার অঞ্জলি রায়, নবদ্বীপের আসিত ঘোষদের কথায়, “একাকীত্ব কাটাতে এই ধরনের অনুষ্ঠান বেশ ভাল লাগে। এখানেও পরিবারের সান্নিধ্য পাই।”
হোমের সম্পাদক সুব্রত সিংহ বলেন, “প্রতি বছরই আমরা এই ধরনের অনুষ্ঠান করে থাকি। এর মধ্যে দিয়ে আমরা এটাই বোঝাতে চাই, পরিজনদের থেকে দূরে থাকলেও এখানেও ওঁদের পরিবার রয়েছে।” এ দিন প্রায় ১৭৫ জন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। |
|
|
|
|
|