|
|
|
|
তিন বছর পরে খুদেদের কাছে ফোঁটা পেলেন পাঁচ ঢাকি ভাই |
সুব্রত সীট • দুর্গাপুর |
বাড়িতে তিন বোন থাকলেও গত তিন বছর ভাইফোঁটা পাননি পাঁচ ভাই।
কালীপুজোয় বর্ধমান জেলার বিভিন্ন মণ্ডপে ঢাক বাজান। তাই ভাইফোঁটার দিনটা কেটে যায় বাইরেই। এ বার দুর্গাপুরে এসে অবশ্য সেই খেদ মিটে গেল তাঁদের।
ঝাড়খণ্ডের জামতাড়া জেলার শুদ্রাক্ষিপুরের ওই পাঁচ জন এ বার দুর্গাপুরের একটি ক্লাবের পুজোয় ঢাক বাজাতে আসে। ওই ক্লাব আয়োজিত গণ ভাইফোঁটায় ফোঁটা পেল পাঁচ ঢাকি ভাইও। পাড়া ও আশপাশের বস্তি এলাকার প্রায় আড়াইশো খুদে যোগ দিয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে। সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে দিদিকে মোবাইলে ফোন করে সেই সুসংবাদ পৌঁছেও দিল কনিষ্ঠ জন।
শহরের সি-জোন এলাকার ওই ক্লাবটি প্রত্যেক বছরই গণ ভাইফোঁটার আয়োজন করে থাকে। উদ্যোক্তারা জানান, অনেক পরিবারের সামর্থ্য নেই। আবার অনেকের বোন নেই। কারও আবার ভাই নেই। উৎসবের আমেজ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, উঁচু-নীচু ভেদাভেদ ব্যতিরেকে সকলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আনন্দ আলাদা। তাই বছর বছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন তাঁরা। |
|
দুর্গাপুরের সি-জোন এলাকায় গণ ভাইফোঁটার ছবি তুলেছেন বিশ্বনাথ মশান। |
শুক্রবার সকালে পাড়ার খুদেরা তো বটেই, সংলগ্ন কাশীরাম বস্তি, সি এম ই আর আই বস্তি থেকেও এসেছিলেন অনেকে। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় আড়াইশো। উপস্থিত ছিলেন দুর্গাপুর থানার ওসি রেজাউল কবীর। তাঁকেই প্রথম ভাইফোঁটা দেন বস্তির মেয়ে রানি। ফোঁটা পেয়ে খুব খুশি সোনা, কাজল, চম্পারা। তাদের কথায়, “আগে কোনও দিন এমন সুযোগ হয়নি। এ বারই প্রথম।”
অনুষ্ঠান চলাকালীন আনন্দে ঢাক পেটাচ্ছিল মিলন, আনন্দ, রাজু, আকাশ ও পাতাল বাদ্যকর। যদিও মন তখন পড়ে ঝাড়খণ্ডের সেই গ্রামের বাড়িতে। তিন বোন কল্পনা, আল্পনা, আন্নার বিয়ে হয়ে গিয়েছে অনেক আগে। তবুও ফি-বছর বাপের বাড়িতে গিয়ে ভাইদের ফোঁটা দিয়ে যেতেন তিন বোন। কিন্তু শেষ তিন বছরে তা হয়নি। কালীপুজোয় ঢাক বাজাতে ওঁরা বর্ধমান জেলায় চলে আসেন। দিদিরাও আর তাই ভাইফোঁটায় বাপের বাড়িমুখো হন না। ভাইফোঁটার দিন সকালে নিয়ম করে তিন দিদি ফোন করেন পাঁচ ভাইকে। ব্যস! এইটুকুই।
এ বার সেই ধারায় ছেদ পড়ল। ঢাক বাজানো শেষ হতেই খুদে বোনেরা ছুটে এল ঢাকি দাদাদের কপালে ফোঁটা দিতে। একে একে পাঁচ জন কপাল এগিয়ে দেন খুদে বোনেদের দিকে। মিষ্টিমুখ শেষ হতেই ছোট ভাই পাতাল মোবাইল থেকে একে একে তিন দিদিকে ফোন করে জানিয়ে দেন সুখবরটা। ১৯ বছরের পাতাল বলেন, “তিন বছর পর ফোঁটা পেলাম। দিদিদের সেই খবরটা জানিয়ে দিলাম। শুনে দিদিরাও খুশি।” উদ্যোক্তাদের পক্ষে লক্ষ্মী মল্লিক, গণেশ চক্রবর্তীরা বললেন, “ওদের আনন্দ দিতে পেরে আমরাও খুশি।” |
|
|
|
|
|