নিহত ওসি’র শুরু করা কালী পুজো আজও হচ্ছে কেন্দায়
কালীপুজো এলেই ওরা নস্টালজিক হয়ে পড়েন। কারণ, এখানকার পুজোর প্রবর্তক এখন নেই। কিন্তু, পুজো জুড়ে রয়ে দিয়েছে তাঁর স্মৃতি। তিনি নীলমাধব দাস। ২০০৩ সালের ১০ অক্টোবর বান্দোয়ান থানার ওসি থাকাকালীন মাওবাদীদের গুলিতে তিনি নিহত হন। তার আগে কেন্দা ফাঁড়ির ‘ইনচার্জ’ থাকাকালীন তিনি ফাঁড়ির ভাড়াবাড়ি চত্বরে কালীপুজোর সূচনা করেছিলেন।
পরে ফাঁড়ি বদলে কেন্দা থানা হয়। নতুন ভবনে কেন্দা থানা চালু হলেও ভাড়া বাড়ির চত্বর থেকে নীলমাধববাবুর শুরু করা পুজো সরে যায়নি। কেন্দা থানার সহায়তা নিয়ে বাসিন্দারা আজও নীলমাধববাবুর তৈরি করা মন্দিরে কালীপুজো করেন। এ বারও সেখানে সাড়ম্বরে পুজো হচ্ছে। কালীপুজো এলেই বাসিন্দাদের স্মৃতিতে ভেসে আসে নীলমাধববাবু। পুরুলিয়া-মানবাজার রাস্তার পাশেই এই মন্দির। বুধবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মন্দির চত্বরে সিমেন্টের মেঝেয় লেখা রয়েছে প্রতিষ্ঠাতা নীলমাধব দাসের নাম। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শরৎকুমার নন্দী, গৌরাঙ্গ মাহাতো, বুদ্ধেশ্বর মাহাতোরা মন্দিরের বারান্দায় বসে রয়েছেন। মন্দির চত্বরে গোবর, মাটি দিয়ে পরিস্কার করছিলেন কয়েক জন। বৃদ্ধেরা তদারকিতে ব্যস্ত। গৌরাঙ্গবাবু জানান, ১৯৯২ সালে এখানকার কেন্দা ফাঁড়ির ‘ইনচার্জ’ ছিলেন নীলমাধববাবু। তিনিই উদ্যোগী হয়ে শুরু করেছিলেন কালীপুজো। মন্দিরও তৈরি করেন। কালীপুজোয় এখানে মাটির প্রতিমা নিয়ে আসা হয়। পুজোর পরে প্রতিমার বিসর্জন দেওয়া হয়। আশি বছরের অজিত সিং পাতরের স্মৃতিতে, “মনে পড়ে নীলমাধববাবু কালীপুজোর দিন উপবাস করতেন। এলাকার বাসিন্দাদের পুজো দেখতে আসতে বলতেন। সারা দিন নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুজোর কাজ তদারকি করতেন। তখন তাঁকে পুলিশ আধিকারিক বলে মনে হত না। এক মাস আগে থেকে পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত।”
১৯৯৪ সালে কেন্দা ফাঁড়ি থেকে থানায় পরিবর্তিত হয়। ভাড়া বাড়ি ছেড়ে নতুন ভবনে থানা সরে যায়। নীলমাধববাবু ওসির দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তিনি ওই থানায় ছিলেন। তখনও পর্যন্ত ভাড়া বাড়ি চত্বরের মন্দিরে কালী পুজো তিনি দেখাশোনা করতেন। পরে কেন্দা থানায় আলাদা করে কালীপুজো শুরু হয়। কেন্দা থানার ওসি সাধন পাঠক বলেন, “থানার নতুন ভবনে এখন কালী পুজো হয়। তবে, নীলমাধববাবুর শুরু করা কালীপুজোর খরচের অনেকটা আমরা বহণ করি।” নীলমাধববাবুর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে স্বপনকে রাজ্য পুলিশ চাকরি দিয়েছে। তিনি বলেন, “বাবা কেন্দায় থাকাকালীন কালী পুজোয় আমরা সেখানে যেতাম। খুব মজা হত। সারা দিন ধরে আনন্দ করতাম।” তিনি জানান, বাবার শুরু করা ওই পুজোর সঙ্গে তাঁদেরও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। শরৎবাবু, বুদ্ধেশ্বরবাবুরা বলেন, “নীলমাধববাবুর মৃত্যু সংবাদ পেয়ে আমরা সেদিন খেতে পারিনি। সবাই এই কালী মন্দির চত্বরে এসে জড়ো হয়েছিলাম।” তাঁরা জানান, বয়েসের ভারে সারা বছর মন্দির চত্বরে কম আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু কালীপুজোর দিন- সবাই ঠিক চলে আসেন। নীলমাধববাবু এই পুজো শুরু করে তাঁদের যেন একটি পরিবারের গণ্ডিতে বেঁধে গিয়ে গিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.