অমানিশা উজ্জ্বল দীপান্বিতায়
কার্তিকী অমাবস্যার রাতে কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের দক্ষিণা কালীর সামনে নতজানু হয় পুণ্যচর্চা। তিনিই প্রথম এই শ্মশানচারী দেবীকে অনেক গৃহস্থ করেছিলেন বলে মনে করেন অনেক গবেষক। তাঁর ধ্যান-মন্ত্রধ্বনির সংস্কৃত উচ্চারণ গীতিকাব্যের সুমধুর সঙ্কীর্তনের পাশাপাশি পুণ্যভাবনার আর এক ধাত্রী হয়ে ওঠে। মধ্যযুগের বাংলায় পুণ্যভাবনার এই দুই দর্শনকেই জাহ্নবীর তীরের নবদ্বীপ ধারণ করেছিল জননীর প্রশ্রয়ে। সেই রীতি এখনও অব্যাহত।
এই রাতে সমস্ত মৃদঙ্গ-করতাল তোলা থাকে। তার বদলে গঙ্গার তীরের প্রাচীন এই জনপদের প্রতিটি প্রান্ত থেকেই ভেসে আসে শক্তি আরাধনার মন্ত্রোচ্চারণ। আছড়ে পড়ে জনস্রোত। নবদ্বীপের একেবারে দক্ষিণে তন্ত্রাচার্য ভৃগুরামের প্রতিষ্ঠিত শ্যামাপিড়ির পঞ্চমুণ্ডির সামনে তখন থমথম করছে কালীপুজোর রাত। শহরের পশ্চিমের পাড়ার-মা মন্দির এবং ওলাদেবীর মন্দিরে ভিড় তখন জমাট। এদিকে গঙ্গার পূর্বপাড়ে মায়াপুর ছাড়ালেই চৈতন্যদেবের মামার বাড়ি বিল্বপুষ্করিণী, পরিচিত নাম বেলপুকুর। শক্তির উপাসক ব্রাহ্মণ অধ্যুষিত ওই গ্রামে তিনশো কালীপুজো হয়ে থাকে।
ভাগীরথী থেকে যত দূর মাথাভাঙা, নগর সভ্যতা থেকে ততটাই যেন দূরে সীমান্তের গ্রাম। কিন্তু সেখানেও এই একটি রাতের জন্য অপেক্ষায় থাকা যায় সারাটা বছর। ভুলে থাকা যায় নিত্য দিনের দারিদ্র, কষ্ট কিংবা অন্ধকার দিনগুলোর কথা। মুছে যায় যাবতীয় ভেদাভেদ। বুধবার সন্ধ্যা নামতেই আলোর উৎসবে মেতে উঠল সীমান্তের সাদা-কালো প্রান্ত। হোগলবেড়িয়া থানার তারকাঁটার ওপারের গ্রাম চরমেঘনা। বহু অপেক্ষার পরে এ বছরের শুরুতেই গ্রামে এসেছে বিদ্যুৎ। আনন্দের সীমা নেই গ্রামের মানুষের। দীপাবলির রাতে এই প্রথম টুনি বাল্বের নরম আলোয় ভাসল গোটা গ্রাম। কলেজ পড়ুয়া চম্পা মাহাতো বলেন, “কালীপুজোর রাতে অন্য গ্রামগুলো যখন টুনি বাল্বের আলোয় সেজে উঠত, তখন আমাদের মোমবাতি বা প্রদীপের উপরেই ভরসা করতে হত। মোমবাতি বা প্রদীপের তেল শেষ হয়ে গেলেই ফের অন্ধকারে ডুবে যেত গ্রাম।”
চরমেঘনায় দু’টো কালীপুজো হয়। সমবেত ভাবে গ্রামের বাসিন্দারা একটি পুজোর আয়োজন করেন, অন্যটির উদ্যোক্তা বিএসএফ কর্তৃপক্ষ। এই কালীপুজোর রাতেই ঘুচে যায় বিএসএফ ও গ্রামবাসীদের মধে দূরত্ব। গ্রামের বাসিন্দাদের কথায়, দু’পক্ষের মিলিত উদ্যোগেই দু’টো কালীপুজোরই আয়োজন হয়ে থাকে।
তেহট্ট মহকুমার সীমান্তবর্তী নেতাইয়ের বাসিন্দা বাসুদেব দত্ত বলেন, “চারিদিকে শুধু আলো আর আলো। চেনা এলাকাগুলো অচেনা ঠেকছে। এলাকায় বেশ কয়েকটি কালীপুজো হয় ধুমধামের সঙ্গে। এ ছাড়াও এলাকা সাজানো হয়েছে রং-বেরঙের আলোয়।”
কালীপুজোর উন্মদনায় ভাসল তেহট্ট থানার চাঁদের ঘাটও। গ্রামের তুহিন মণ্ডলের কথায়, “ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০টি মত পুজো হয়ে থাকে। পুজোর অনুষ্ঠান চলে শনিবার পর্যন্ত। এর পরে জলঙ্গি নদীতে হবে ভাসান।”
পিছিয়ে নেই বহরমপুরও। কালীপুজোর সন্ধ্যা থেকেই বহরমপুরের রাস্তায় দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। সন্ধ্যা থেকে বেজে চলা মাইক থমকে গিয়েছে। অমাবস্যার নিশুতি রাতে তখন বিভিন্ন মন্দির থেকে ভেসে আসে শক্তি-আরাধনার মন্ত্র, উলুধ্বনি, ঢাক-আর কাঁসর ঘন্টার আওয়াজ। কালীপুজোর এই একটি রাতের জন্য আড়াআড়ি ভাবে ভাগ হয়ে যায় বহরমপুর। শহরের উপরে দিয়ে চলে যাওয়া ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের দু-পারের কালীমূর্তি দেখতে মাতোয়ারা দর্শনার্থীরা। রাস্তা জুড়ে আলোর গেট দর্শনার্থীদের পাশাপাশি তাদের চলার পথকে রঙিন করে তুলেছে। অমাবস্যার রাত গভীরের সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে গোরাবাজার স্যান্টাফোকিয়া থেকে রানিনবাগান বাসস্ট্যান্ড ইয়ংস কর্ণারে, গির্জার মোড় বরাবর ক্যান্টনমেন্ট রোড ধরে যাওয়ার পথে এমজিওয়াইএস এবং ইয়ং মেনস অ্যাসোসিয়েশনের পুজোয়। এছাড়াও লালদিঘি পাড়ার কালীপুজো দেখতে শিশির মাথায় পথে হাঁটছেন মানুষ।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.