এই না হলে দেওয়ালি!
শ্যাম্পেনের ফোয়ারা ছুটছে, ড্রেসিংরুমে উদ্দাম বাজছে ‘শীলা কি জওয়ানি’ থেকে ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি’, পাগলের মতো নেচে চলেছেন বিরাট কোহলি, দেদার বিতরণ হচ্ছে নকুড়ের সন্দেশ, বিরিয়ানির গন্ধে ম-ম করছে টিম হোটেলের ক্রিস্টাল রুম...।
চুনকামের উৎসব আর কাকে বলে?
ম্যাচ শেষে মাঠ জুড়ে ধোনির বাইক-ভ্রমণ ইডেনের গুটি কয়েক সমর্থকের চোখ যদি কপালে তুলে থাকে, তা হলে অন্দরমহলের বিরাটকে দেখলে নিশ্চয় সেটা ‘চড়কগাছ’ হত। ইংরেজদের ব্যাটিং বিপর্যয় যখন চালু হয়ে গিয়েছে, তখনই ড্রেসিংরুম থেকে ভারতীয় টিম ম্যানেজার সিএবি কর্তাদের কাছে আবদার করেন, চারটে শ্যাম্পেনের বোতল জোগাড় করা যাবে প্লিজ? আর সেই শ্যাম্পেন-স্নান করে নাচলেনও বটে বিরাট! প্রথমে ট্রফিতে শ্যাম্পেন ঢেলে তাতে চুমুক, তার পর সবাইকে ভিজিয়ে আইপড চালিয়ে উদ্দাম নাচ। ভাংড়া, টুইস্ট কিছুই বাদ রাখেননি। ‘শীলা কি জওয়ানি’-র তালে তাঁর নাচ দেখে প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ মনে করছেন এই নাচ দেখলে খোদ ক্যাটরিনা কাইফও লজ্জা পেতে পারেন! |
উৎসবের ‘পার্ট ওয়ান’ যদি ড্রেসিংরুমে হয়ে থাকে, তা হলে ‘পার্ট টু’ হল টিম হোটেলে। সেখানে ধোনি তো ছিলেনই সঙ্গে আবার ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘ফার্স্ট লেডি’। পার্টিতে সাক্ষী ঢুকতে-ঢুকতেই বিরাট তাঁর কাছে গিয়ে আবদার করেন, নাচতে হবে। মিসেস ধোনি রাজি হননি। কিন্তু বিরাটকে রোখে কে? আবেগের বশে ধোনির গালে চুমু থেকে রায়না-মনোজ-জাডেজাকে নাচের মঞ্চে তুলে ফেলা, সবই একে একে করে গিয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেটের ‘নেক্সট জেন আইকন’। রাত দেড়টা পর্যন্ত হোটেলের ক্রিস্টাল রুম একাই মাতিয়ে রেখেছিলেন বিরাট। ধোনি তো বটেই, টিম ইন্ডিয়ার বাকি সদস্যেরাও তাঁর নাচ দেখে আপ্লুত।
আবেগের বিস্ফোরণ তো ভারতীয় ক্রিকেটমহলেও। যুবরাজ সিংহ যেমন। ধোনিদের ‘হোয়াইটওয়াশ’ দেখে যুবরাজ টুইট করেছেন, “অসাধারণ ৫-০ জয়। ওয়েল ডান টিম ইন্ডিয়া। ভারতীয় সমর্থকদের আমার অভিনন্দন।” দেওয়ালিতে সামিল হতে শহর ছাড়ার আগে রায়নাও টুইটে লিখে গিয়েছেন, “অনেক বছর পর পরিবারের সঙ্গে একটা দেওয়ালি কাটাব। তার আগে আজকের দিনটা অসম্ভব উপভোগ করে গেলাম।” ধারাভাষ্যকার এবং প্রাক্তন ভারতীয় ব্যাটসম্যান সঞ্জয় মঞ্জরেকর আবার খোঁচা দিচ্ছেন ইংরেজদের। টুইট করে লিখেছেন, “পিচগুলোর একটাও কিন্তু র্যাঙ্ক টার্নার ছিল না। সব ক’টাই সধারণ ওয়ান ডে উইকেট ছিল, যেখানে বল একটু-আধটু টার্ন করে।” |
বুধবার ভোর-ভোর টিম হোটেল ছেড়ে একে-একে দীপাবলি উৎসবে সামিল হতে বাড়ির দিকে রওনা হয়ে যান কোহলি-রায়না-অশ্বিনরা। সস্ত্রীক ধোনি বেরোলেন মাঝ দুপুরে। রয়ে গিয়েছেন শুধু কোচ ডানকান ফ্লেচার। মাঝে একদিনের ছুটি। টিম ফের জড়ো হচ্ছে ২৭ অক্টোবর রাতে। আর বিপক্ষ শিবির? সেখানে আবার দেওয়ালির দিন অন্য গল্প। পিটারসেন-কেইসওয়েটাররাও বেরিয়ে পড়লেন কলকাতার আনাচে-কানাচে। সকালের দিকে কেইসওয়েটার, ডার্নবাখের মতো গুটি কয়েক ইংরেজ ক্রিকেটার গল্ফ খেলতে চলে গেলেন টালিগঞ্জের আর সি জি সি-তে।
আফসোসের ফ্রেমে আপাতত একজনই। ঘরের ছেলে মনোজ তিওয়ারি। জীবনে প্রথমবার ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে ইডেনে নেমেছিলেন এবং ঘরের মাঠে নায়ক হওয়ার সুযোগ হেলায় ছেড়ে এসেছিলেন। ঝুলিতে রান ২৪, উইকেট একটা, ক্যাচও একটা। খুশি হওয়া গেল? মনোজের গলায় কিন্তু আফসোসই ধরা পড়ছে। এ দিন দুপুরে খাঁ-খাঁ ক্লাবহাউসে দাঁড়িয়ে বলে গেলেন, “ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বলটা চলে গেল। কোনও দিন ভাবিওনি ইডেনে জাতীয় দলের জার্সি পরে নামব। সুযোগ পেয়েও বড় রান না পাওয়ার আক্ষেপটা তাই থাকছে। যদিও জানি যে ক্রিকেট রোজই কিছু না কিছু শেখায়।” তবে হাতে কলমে করে দেখানোর সুযোগ হাতের সামনে একটাই। শনিবারের টি টোয়েন্টি। কিন্তু সেখানেও একটা ‘যদি’ থাকছে। সুযোগ মিললে তবেই না! |