শব্দবাজির দাদাগিরি ঠেকাতে পথে মন্ত্রীও
‘শব্দদানব’কে পুরোপুরি দমিয়ে রাখা গেল না। দেদার ফাটল শব্দবাজি। তবে তার দাপট বেশি ছিল শহরতলিতেই। খাস কলকাতায় তুলনায় কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ছিল।
কালীপুজো আর দীপাবলি মিলেমিশে জমজমাট বুধবারের মহানগরী। ফুলঝুরি, চরকি, তুবড়ি নিয়ে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত টালা থেকে টালিগঞ্জ, গড়িয়া থেকে গরফার অলিগলিতে দাপট চলল কচিকাঁচাদের। আলোয় মোড়া শহরে রংচঙে ‘এলইডি’ বাল্বের বাহারি সাজে ফুটে উঠেছিল রাজ্যের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন থেকে আদিম ডাইনোসর। কোথাও সাতরঙা টুনির সজ্জায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বা ‘রা ওয়ান’-এর শাহরুখ!
আদ্যাপীঠ, দক্ষিণেশ্বর, ঠনঠনিয়া, লেক কিংবা পুঁটে কালীবাড়িতে সকাল থেকেই ছিল দর্শনার্থীদের বিপুল ভিড়। মন্দির লাগোয়া ফুল-মালা, মিষ্টির দোকানে দিনভর তুমুল ব্যস্ততা। পুজোর সাজে সজ্জিতা মাতৃপ্রতিমার রূপ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন অগণিত ভক্ত। উৎসবের কলকাতায় নাশকতার আশঙ্কায় প্রশাসনকে সতর্ক করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তারই প্রেক্ষিতে কালীঘাট মন্দিরে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। কলকাতা পুলিশের ডিসি (সাউথ) দেবপ্রকাশ সিংহ বলেন, “কালীঘাটে এই দিনটায় লক্ষাধিক মানুষ যান। বহু ভিআইপি দর্শনার্থীও থাকেন। তাঁদের নিরাপত্তার দিকে তাকিয়েই বিশেষ পুলিশি ব্যবস্থা করা হয়েছে।”
আতসবাজিতে উজ্জ্বল আকাশ। বুধবার, শহরে।ছবি: অর্কপ্রভ ঘোষ
বিকেল গড়িয়ে সন্ধে। অন্ধকার বাড়তেই রূপ বদল মহানগরীর। ঘরে ঘরে জ্বলল মোমবাতি, তেলের প্রদীপ। সেই সঙ্গে বৈদ্যুতিক আলোও। শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ সাজল রংবেরঙের চিনা বাল্বে। বাহারি সে সাজ অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল দু’তিন দিন আগে থেকেই।
দুর্গাপুজোর ‘ঐতিহ্য’ বজায় রেখে শ্যামার আরাধনাতেও থিমের তুমুল টক্কর চলেছে ক্লাবে-ক্লাবে। উত্তরের আমহার্স্ট স্ট্রিট, কেশব সেন স্ট্রিট, তালতলার ‘ক্রাউড-পুলার’ পুজোগুলির সঙ্গে সমানে সমানে লড়েছেন দক্ষিণের খিদিরপুর, বেহালা, হরিদেবপুরের পুজোকর্তারা। কোথাও মণ্ডপ নবদ্বীপের রাসমেলার নাটমন্দির, কোথাও রাঙামাটির বীরভূমের কেঁদুলি মেলা বা পাহাড়ি গুহার আদলে।
আলোর উৎসবে শব্দবাজির ‘দাদাগিরি’ রুখতে সতর্ক ছিল পুলিশ-প্রশাসন। পরিবেশমন্ত্রীর পাশাপাশি পুলিশের বড় কর্তারাও ঘুরেছেন শহর জুড়ে। শহরের বিভিন্ন বহুতল এবং আবাসনে শব্দবাজির উপদ্রবের দিকেও নজর ছিল তাঁদের। শব্দের উৎস কোথায়, সহজে তা জানতে পুলিশ ব্যবহার করেছে আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্র। জিপ, মোটরবাইকে কলকাতার এ দিক-ও দিকে মাঝেমধ্যেই টহল দিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। তবে তাঁদের চোখ এড়িয়েই কোথাও কোথাও শব্দবাজি ফেটেছে। রাত ১০টা পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের দাবি, সংযোজিত এলাকার দিক থেকেই অভিযোগ এসেছে বেশি। ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা বলছে: ‘শব্দদানব’ দাপিয়ে বেড়িয়েছে বেহালার সেনহাটি, সাহাপুর, রায়বাহাদুর রোড, কসবা, হালতু, নাকতলা-গড়িয়া ইত্যাদি এলাকায়।
আলোয় মোড়া শহরের উৎসবের মেজাজ থেকে কিছুটা দূরেই ছিল কুমোরটুলি। শিল্পীদের ঘরে ঘরে দুর্গা, লক্ষ্মী, কালী প্রতিমার ভিড় উধাও। শুধু খড়-মাটির প্রলেপ দেওয়া কাঠামোর স্তূপ। মাসখানেক ধরে চলা অষ্টপ্রহরের সেই চেনা ব্যস্ততাও নেই অলিগলি, আনাচে-কানাচে।
বাঙালির পুজো-মরসুমের ‘শেষ লগ্নে’ নিস্তব্ধ কুমোরটুলির মতো গোটা শহরটারও এখন মনের কথা একটাই। ‘আসছে বছর আবার হবে!’ প্রতি বারের মতোই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.